ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জাহেদুল ইসলাম সমাপ্ত

ফল চাষে শীর্ষে উত্তরাঞ্চল

প্রকাশিত: ০৭:৩২, ৮ জুলাই ২০১৮

ফল চাষে শীর্ষে উত্তরাঞ্চল

এক সময় ধান-সবজি চাষ করে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করত উত্তরাঞ্চলের মানুষ। কাজের অভাবে বছরের বেশির ভাগ সময় কাটাতেন অবসর সময়। ফলে প্রতিনিয়ত দেখা দিত মঙ্গা। তবে সময়ের পরিবর্তনে বদলে গেছে সেই চিত্র। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়া ফলের বেশির ভাগেই উৎপাদন হয় উত্তরাঞ্চলের। ফলনির্ভর বহুমুখী ব্যবসায়িক কর্মকা- এ অঞ্চলে বেড়ে যাওয়ায় চাঙ্গা হয়ে উঠছে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি। জানা যায়, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুরের আম, দিনাজপুরের লিচু দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। এসব কিনতে ও দেখতে আসছেন সারাদেশ থেকে পাইকাররা। আর পাইকাররা আসায় এ অঞ্চলের আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলো জমে উঠেছে। অন্যদিকে ফল রাখা এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে সুরক্ষিতভাবে ফল নিয়ে যাওয়ার জন্য বাঁশের তৈরি খাঁচা ও ডালি তৈরি করতে বাঁশ শিল্পের কারিগরদের নিকট ফল ব্যবসায়ীদের বাড়ছে ভির। ফলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন বাঁশ শিল্পের কারিগররা। এমনকি দেশের বিভিন্ন স্থানে ফল নিয়ে যেতে আয় বেড়েছে পরিবহন ব্যবসায়দের। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, দেশের আম উৎপাদনকারী জেলাগুলোর মধ্যে এখনও শীর্ষে আছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এ জেলার প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। এর পরই রয়েছে রাজশাহী। এখানে এ বছর প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। আর রংপুর জেলায় ৩ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে আমের ফলন হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙ্গার ফলন হয়েছে ১ হাজার ৪৫০ হেক্টরে। এ ছাড়া দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় প্রায় ৪ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এমনকি দিনাজপুর জেলায় এ বছর প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে মাদ্রাজী, বম্বাই, বেদানা, চায়না থ্রী, হাড়িয়া, কাঁঠালিসহ বিভিন্ন জাতের লিচু আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে লালমনিরহাট, দিনাজপুর, নাটোর, নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও এলাকায় অধিক পরিমাণে থাই পেয়ারা, কুলবড়ই, কমলা ও মাল্টার চাষ হচ্ছে। দিনাজপুরের লিচুর সবচেয়ে বড় ব্যবসাকেন্দ্র্র্র কালীতলা নিউমার্কেটের আড়তদার আবদুল জলিল জানান, প্রতিদিন শতাধিক গাড়িতে করে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর বড় বড় বাজারে লিচু যাচ্ছে। এ ছাড়া পিকআপ ভ্যান এবং ট্রেনে করে খুচরা ব্যবসায়ীরা লিচু নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। বাংলাদেশ আম উৎপাদন ও ব্যবসায়ী সমিতির হিসাব মতে, দেশে বর্তমানে আমের অভ্যন্তরীণ বাজার দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমকে কেন্দ্র করে বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। এ ছাড়া পঞ্চগড়, নাটোর, নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও, পাবনা, দিনাজপুর, রংপুরে বাণিজ্যিকভাবে আম চাষ হচ্ছে। দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইকবাল বলেন, এ বছর প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় লিচু সরবরাহ ও চাহিদা থাকায় কৃষক দামও ভাল পাচ্ছে। তবে কাঁঠালি জাতের লিচু সবার শেষে পাকে বলে এর দাম থাকে বেশি। তাই কৃষকদের এ জাতের লিচু আবাদে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এই জাতের লিচুর আকার ও ফলন অনেকগুলে ভাল। রংপুর কৃষি বেতার তথ্য কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু সায়েম জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ অঞ্চলে আমের ফলন ভাল হয়েছে। তাই ফলচাষীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে আম বিক্রি করে অনেক লাভবান হচ্ছেন।
×