ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জয়ের নায়কদের নিয়ে গর্বিত কোচ মার্টিনেজ

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ৮ জুলাই ২০১৮

জয়ের নায়কদের নিয়ে গর্বিত কোচ মার্টিনেজ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বধ্যভূমি হয়ে গেছে কাজান! কারণ, এখানেই বলি হয়েছে চলমান রাশিয়া বিশ্বকাপের হট ফেবারিট দলগুলোর। গত আসরের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি এই ভেন্যুতে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে ছিটকে যায় গ্রুপপর্ব থেকে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ফ্রান্সের কাছে হেরে বাদ পড়ে রানার্সআপ আর্জেন্টিনা এবং সর্বশেষ শুক্রবার শিরোপার অন্যতম দাবিদার ব্রাজিলও এখানে বেলজিয়ামের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। বেলজিক কোচ রবার্তো মার্টিনেজের জন্য ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক জয় ছিল এটি। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের সঙ্গে যখন বাড়তি ৫ মিনিট ইনজুরি টাইম হিসেবে যোগ করা হলো তখন ধারাভাষ্যকারও বলছিলেন জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘতম ৫ মিনিট এটি মার্টিনেজের জন্য। কারণ, শিষ্যদের গোল হজম থেকে যদি এই ৫ মিনিট আগলে রাখতে পারেন তবেই ৩২ বছরের মধ্যে প্রথমবার বিশ্বকাপের সেমিতে উঠবে বেলজিকরা। সেটা হয়ে যাওয়াতে এখন সবচেয়ে সুখী মানুষ মার্টিনেজ। প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে তিনি এখন গর্বের সঙ্গে বলতে পারছেন তার শিষ্যরা নায়ক। বেলজিয়ামের বর্তমান দলটিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা যেতেই পারে। ১৯৮৬ সালে তারা মাত্র একবারই সেমিফাইনাল খেলেছিল, হতে পেরেছিল চতুর্থ। এবারে সেই সাফল্যকে ছাপিয়ে শিরোপার অন্যতম দাবিদার হিসেবেও ভাবা হচ্ছিল। সেই পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কঠিনতম বাধা ছিল ব্রাজিল। কোয়ার্টার ফাইনালে সেই নেইমারের দলকেও হারিয়ে দিয়েছে বেলজিকরা। প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল তারা, তবে দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিল আক্রমণে কোনঠাসা করে ফেলে বেলজিয়ামকে। দ্বিতীয়ার্ধের পুরো সময়টাতেই বেলজিয়ামের সীমানায় খেলা হয়েছে। তবে এরপরও একটির বেশি গোল পরিশোধ করতে পারেনি তারা বেলজিয়াম রক্ষণভাগের দৃঢ়তায়। বিশেষ করে গোলরক্ষক থিবাউ কুর্তোয়ার অসাধারণ দক্ষতা বাঁচিয়ে দিয়েছে বেলজিয়ামকে। কিন্তু মুহুর্মুহু আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে প্রচুর শক্তিক্ষয় হয়েছে বেলজিয়ামের খেলোয়াড়দের। আর কাজান যেন একটি তপ্ত উনুন। পুরো ম্যাচেই উভয় দলের খেলোয়াড়দের ফুরসত পেলেই পানি দিয়ে মুখ ধুতে দেখা গেছে, পানীয় পান করে নিতে দেখা গেছে। ঘেমে নেয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ছিলেন খেলোয়াড়রা। এরপরও নির্ধারিত ৯০ মিনিটের সঙ্গে যখন ৫ মিনিট বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে সেটা সহ্য করা বিশেষ করে বেলজিয়ামের জন্য কঠিন ছিল। কারণ, পিছিয়ে থাকার কারণে মরিয়া হয়ে বীরদর্পে তাদের রক্ষণভাগে একের পর এক আঘাত হেনেছে ব্রাজিলিয়ানরা। ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা বেলজিয়ামের জন্য ওই ৫ মিনিট নিশ্চিতভাবেই সবচেয়ে কঠিনতম সময় ছিল। আর কোচ মার্টিনেজের জন্য সেটা ছিল আরও ¯œায়ুচাপের। শিষ্যরা পারবেন তো ঠেকাতে ব্রাজিলিয়ানদের আক্রমণ এই ৫টি মিনিট ঠেকিয়ে রাখতে? শিষ্যরা পেরে গেছেন, তাই এখন সবচেয়ে সন্তুষ্ট ও গর্বিত মানুষ মার্টিনেজ, তারা বিস্ময়কর কাজ করেছে। প্রতিটি হৃদয় ছিল চমৎকার। আমি একটা মিনিটের জন্যও ভাবিনি যে তার কোনকিছু চলে যেতে দেবে। সবাইকে স্বীকার করে নিতে হবে যে ব্রাজিল অনেক গুণসম্পন্ন এবং দারুণ ফিটনেস সমৃদ্ধ দল। তারা যেকোন দলকে ভেঙ্গে-মুচড়ে দিতে সক্ষম। কিন্তু আমরা সেটা হতে দেইনি। এক মিনিটের জন্যও ছেলেরা সেখানে কোন কিছুতে হাল ছেড়ে দেয়নি। বেলজিয়ামের এই দলটিতে আছে একঝাঁক মেধাসম্পন্ন তরুণ। এই ফুটবল প্রজন্মকে সর্বকালের সেরা এবং সোনালি প্রজন্ম এবং তীব্র প্রতিভাধর বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই দলটিতে আছেন রোমেলু লুকাকু, কেভিন ডি ব্রুইন, মারুয়ান ফেলাইনি ও এডেন হ্যাজার্ডের মতো বিশ্ব কাঁপানো খেলোয়াড়। তারা এখন বিশ্বকাপ মঞ্চেও নিজেদের প্রমাণ করেছেন। সেজন্য গর্বিত মার্টিনেজ, এই ছেলেরা এখন বেলজিয়ামের নায়ক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। কৌশল প্রয়োগের ক্ষেত্রে তারা অসাধারণ ছিল। এটা খুবই বিশেষ এক ধরনের অনুভূতি এবং আমরা কোনভাবেই বেলজিয়ামের মানুষকে নিরাশ করতে পারি না। আমরা ব্রাজিলকে পরাজিত করেছি, এই বিষয়টা এখন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে জানিয়ে দিতে পারব। এবার বেলজিয়ামের লক্ষ্য বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠা। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে একবার ফাইনাল খেলে রানার্সআপ হয়েছিল বেলজিকরা ১৯৮০ সালে, আর ১৯৮৬ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলেছিল। দেশের ফুটবল ইতিহাসে এ দুটিই বড় সাফল্য তাদের। বর্তমান প্রজন্মের ফুটবলাররা অবশ্য সর্বশেষ দুটি মেজর টুর্নামেন্টে ব্যর্থ হয়েছিল। ২০১৪ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে হেরেছিল আর্জেন্টিনার কাছে এবং ২০১৬ ইউরোতে ওয়েলসের কাছে পরাজিত হয় শেষ আটের লড়াইয়ে। এখন সেটা পেরিয়ে শেষ চারে উঠে এসেছে বেলজিকরা। মিডফিল্ডার ব্রুইন বলেন, আমরা জানতাম ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলাটা খুবই কঠিন হবে। কিন্তু প্রথমার্ধে অনেক দুর্দান্ত ছিলাম এবং তারা দ্বিতীয়ার্ধে কৌশলে পরিবর্তন এনেছিল। তারা স্কোর করার পর আমরা নিজেদের বৈশিষ্ট্যগত ব্যাপারগুলো দেখিয়ে দিয়েছি। আমরা বল নিয়ে দৌড়ানোর ক্ষেত্রে যে গভীর কার্যকারিতা দেখিয়েছি সেটা চমৎকার ছিল। আমরা এখানে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে বিশ্বকাপ জিততেই এসেছি এবং সেজন্য আমরা দারুণ সংঘবদ্ধ।
×