ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ

অনিশ্চয়তার পথে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৮ জুলাই ২০১৮

অনিশ্চয়তার পথে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একে অন্যের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপ করেছে। শুক্রবার থেকে পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর ফল হবে দীর্ঘমেয়াদী। এই যুদ্ধে কে জিতবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। নিউইয়র্ক টাইমস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একবার বলেছিলেন চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে তিনি সহজেই জিততে পারবেন। তবে তিনি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তার ফলে এরই মধ্যে মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তার পরিকল্পনা ফলপ্রসূ হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ট্রাম্প এরই মধ্যে চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মেক্সিকো ও কানাডার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন। মার্কিন অর্থনীতির অবস্থা শক্তিশালী হওয়ায় ট্রাম্প আমদানি শুল্ক আরোপের সাহস পাচ্ছেন। সদ্য প্রকাশিত সরকারী রিপোর্টে দেখা গেছে জুনে কর্মসংস্থানের হার ছিল উর্ধমুখী। এ সময় ২ লাখ ১৩ হাজার নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। উৎপাদন খাতের অবস্থাও ছিল শক্তিশালী। এসবই গত মাসের হিসাব। চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপিত হয়েছে চলতি মাসে। ৩৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। মার্কিন অর্থনীতির যে আকার ২০ ট্রিলিয়ন ডলার সে তুলনায় পরিমাণটি সামান্যই। বৈশ্বিক শেয়ারবাজারেও শুক্রবার এর তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। শুল্ক নিয়ে পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থার হুমকির মুখেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এ নিয়ে আলোচনায় বসার আগ্রহ দেখায়নি। তবে মার্কিন কৃষক ও ক্ষুদ্র উৎপাদনকারীদের ওপর এরই মধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এই শ্রেণিটি ট্রাম্পের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্সের প্রধান এ্যাডাম পোসেন কয়েক মাসে আগে এক নিবন্ধে লিখেছিলেন, বিদেশের মাটিতে যুদ্ধ করে তার দেশের সৈন্যদের জীবন বিসর্জন দেয়া ট্রাম্প বন্ধ করতে চান। এটি ছিল নির্বাচনী প্রচারাভিযানকালে ট্রাম্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য। কিন্তু তিনি এখন শুল্ক নিয়ে যা শুরু করেছেন তাকে একটি যুদ্ধ শুরুর সঙ্গে তুলনা করা যায়। এটি হতে পারে তার জন্য অর্থনৈতিক আফগানিস্তান, যা চলবে অনেকদিন ধরে। কোন ফল বয়ে আনবে না। শুক্রবার ট্রাম্প প্রশাসন চীনের বিরুদ্ধে যে শুল্ক আরোপ করেছে তা বেজিংয়ের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের এ পর্যন্ত নেয়া সবচেয়ে কঠিন পদক্ষেপ। ট্রাম্প প্রশাসন ৩৪ বিলিয়ন ডলার চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। এর মধ্যে ওষুধসামগ্রী ও প্লেনের যন্ত্রাংশ রয়েছে। আসছে মাসগুলোতে আরও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে রেখেছে ওয়াশিংটন। চীনও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে সমপরিমাণ মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। এসব পণ্যের মধ্যে সয়াবিন, শূকরের মাংস ও অটোমোবাইলসহ অন্যান্য পণ্যও। মেক্সিকো, কানাডা ও ইইউও যুুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অনুরূপ পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ওই দেশগুলো থেকে ইস্পাত ও এলুমিনিয়াম আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করার পর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে তারা ওই পদক্ষেপ নেয়। ট্রাম্প ও তার উপদেষ্টারা জোর দিয়ে বলছেন যে, ইতিহাস তাদের পক্ষে। তারা বলছেন, বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা বা কূটনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে সামান্যই সুফল এসেছে। তবে কেবল শুল্ক আরোপ করে বাণিজ্যিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে পেরে ওঠা সম্ভব হবে; ট্রাম্পের সমর্থকরা সে বিষয়ে নিশ্চিত নন। তারা আশঙ্কা করছেন ট্রাম্প সম্ভবত অনিশ্চিত পথে পা বাড়িয়েছেন।
×