ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরে দেখা ॥ ২০০১ খালেদা-নিজামীর শাসনকাল

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৮ জুলাই ২০১৮

ফিরে দেখা ॥ ২০০১ খালেদা-নিজামীর শাসনকাল

(গতকালের পর) নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা কমিটির একসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, বিএনপির কিছু বোকা লোক আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে তারাই ধরা পড়েছে। ছুটির তালিকা থেকে ১৭ মার্চ ও ১৫ আগস্টকে বাদ দেয়া হয়। ২০০২ সালের সরকারী ছুটির তালিকা প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। ৭ নবেম্বরকে জাতীয় সংহতি দিবসটি ছুটির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বর মাসে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ছুটির তালিকায় ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের জন্ম দিনকে শিশুদিবস হিসেবে ও ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ছুটির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। (যুগান্তর সংবাদ) সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডের কথা সংবাদে প্রকাশ করায় স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে জামায়াতের ক্যাডাররা হানা দিয়ে গাছ ও পুকুরের মাছ লুট করে নিয়ে যায়। বাধা দিলে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে বাড়ির সবাইকে আহত করে। ২০০১ সালে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা সম্পর্কিত আইন বাতিল করে জোট সরকার। এর আগে আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ সংসদে বিলটি পাস করার আগে দীর্ঘ বক্তব্য দিয়ে বলেন, ‘ইমপটেন্স পারসনদের স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স অধ্যাদেশ’ বিদেশী অতিথিদের জন্য প্রযোজ্য। সে জন্য একটি ক্লজ রাখা আছে। দেশের কাউকে নিরাপত্তা দেবার সুযোগ নেই। ২৯ নবেম্বর বিলটি বাতিলের জন্য সংসদে উত্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সংসদে বলেন, আর অরাজকতা সহ্য করা হবে না। কঠোর হস্তে দমন করা হবে। নির্বাচনের পর পরই (আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে বলেন) তারা অরাজকতা বিশৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। ষাট সদস্যের মন্ত্রিসভা সম্পর্কে সকল মহলের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বড় মন্ত্রিসভা এমন বেশি কিছু নয়। কোয়ালিশন সরকারে এটা হতেই পারে। উন্নয়নের জন্য মন্ত্রীর প্রয়োজন। অথচ সে সময়ে অনেক দফতরবিহীন মন্ত্রী ছিল। হারুন অর রশিদ খান তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ঐ সপ্তাহেই রাজধানীর শুক্রাবাদে বিএনপির সন্ত্রাসীদের গুলিতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানার রমজান আলী। সাংবাদিক কামরুল হাসানের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, রাজধানীতে থানাগুলোতে ছাত্রদল আর যুবদলের তদ্বির ব্যবসা জমে উঠেছে। থানায় বসে তারা কাকে ছাড়তে হবে আর কাকে ধরতে হবে সে পরামর্শ দেন। আবার কর্মকর্তারা চাকরি হারানোর ভয়ে আদেশ মানতে বাধ্য হয়। দৈনিক প্রথম আলোর ৩০ ডিসেম্বর ২০০১ সালের সংবাদের হেড লাইন ছিল : তেজকুনিপাড়ায় চাঁদাবাজির প্রাধান্য বিস্তার করে পুলিশকে আটকে রেখে ছাত্রদলের দু’গ্রুপের ব্যাপক বন্দুকযুদ্ধ। মুখোশধারীদের গুলিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা খুন। ২০০১ সালের ৬ ডিসেম্বর জনকণ্ঠের সংবাদ এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্টে বলা হয়েছেÑ সমাপ্ত নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়ায় শতাধিক হিন্দু নারী ধর্ষণ, যৌন নির্যাতনসহ খুন হয়েছে অনেকে। অনেকের বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। লুট হয়েছে অনেকের বাড়ি ঘরের আসবাবপত্র। হামলা হয়েছে অনেকের ওপর। চাঁদা আদায় করা হয়েছে মোটা অঙ্কের। শাহরিয়ার কবিরের মুক্তিসহ এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্টে সরকারের প্রতি আট দফা দাবি জানানো হয়েছে। নির্বাচনে জেতার পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিজয়ের সুযোগে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা দফায় দফায় হামলা চালায় বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট, যশোর, কুমিল্লা, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। তাছাড়া ঢাকার আশপাশে তো রয়েছেই। ৬ অক্টোবর ২০০১ রাত ৯ টায় ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার আজিম নগরে এক কলেজছাত্রী তার মায়ের সামনেই দুর্বৃত্তদের দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হয়। বাড়ি ভাঙচুর ও মূল্যবান সামগ্রী লুটপাট করে। ৮ অক্টোবর সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার খাঞ্জাপুর গ্রামে দুর্বৃত্তরা এক বাড়িতে প্রবেশ করে পরিবারের সদস্যদের সামনেই এক কিশোরী স্কুল বালিকাকে টেনে হিঁচরে বাইরে নিয়ে যায় এবং গণধর্ষণ করে। ১১ অক্টোবর বরিশাল গৌরনদী উপজেলার এক গ্রামে দুর্বৃত্তরা রাতে এক হিন্দু বাড়িতে এসে বলে, আওয়ামী লীগকে ভোট দেবার অপরাধে তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে। এর পরই সরকারী দলের ক্যাডাররা দুই হিন্দু নারীকে তাদের স্বামীর সামনেই ধর্ষণ করে। ২০০১ সালের ১১ ডিসেম্বর জনকণ্ঠের আরও একটি লোমহর্ষক কাহিনী : নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার অভিযোগে পরিবারের দু’জন পুরুষ সদস্য গ্রামছাড়া। তারা ঈদ করতে গোপনে বাড়ি গেলে খবর পেয়ে বিএনপির সন্ত্রাসীরা ঈদের আগের দিন বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। দা দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে সবাইকে। এ থেকে রেহাই পায়নি শিশুরাও। ঘটনা ঝালকাঠির সিরজু গ্রাম। জীবনের ভয়ে ইউনুস আলী, মফলু মিঞা, জগলু মিঞা আহত হয়ে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে জনতার মঞ্চে যাওয়ার অভিযোগে ১৪০ জন সরকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধের রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নেয় চার দলীয় জোট সরকার। ক্ষমতায় আসার পর পরই প্রশাসন ক্যাডারের মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারী চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। জামায়াতের ষড়যন্ত্রের শিকার হয় তারা। একরকম ঝাড়– পেটা করে চাকরি থেকে তাদের বিদায় করে দেয় নিজামীর সরকার। আর ক্ষমতায় এসে শূন্য স্থান পূর্ণ করা হয় জামায়াত সমর্থিত লোকদের। এরই মধ্যে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় ছিল পাঁচ বছর। এখন তাদের বিরুদ্ধে কোন রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়নি। আর ২০০১ সালে জামায়াত-বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরই তারা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে মেতে ওঠে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে একজন জামায়াত সমর্থিত ক্যাডারকে বসায়। ৩১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্লোরিডায় ও নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে চাকরিচ্যুত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বহাল করা হবে। বে-আইনীভাবে এসব মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ও কর্মচারীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে। স্বাধীনতার ৩০ বছর পর জামায়াত-শিবির বিএনপি ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। চলবে... লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও আমেরিকা প্রবাসী
×