ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মমতাজ লতিফ

নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে সতর্ক হওয়া জরুরী

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৮ জুলাই ২০১৮

নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে সতর্ক হওয়া জরুরী

একাত্তর সালে এ দেশের জন্মের বিরোধিতা করে জামায়াত-শিবির হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণে মেতে উঠেছিল, তেমনি ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা হত্যার পর বিএনপির জন্মদাতা জিয়ার পরিকল্পনায় ক্যু-এর নামে কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা সেনা ফাঁসিতে প্রাণ হারিয়েছিল। অন্যদিকে পুনর্বাসিত হয়েছিল সেই বাংলাদেশের জন্মের বিরোধিতাকারী যুদ্ধাপরাধী দল ও এ দলের অপরাধী নেতা, কর্মী-সমর্থক দল। এভাবে ’৭২-এ’৭১-এর ষড়যন্ত্রকারীদের বিষবৃক্ষের মূলোৎপাটনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু প্রথম সংবিধানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দেশ পরিচালনা শুরু করেছিলেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বহাল করে ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানের প্রতি চরম অনাস্থা, অসম্মান প্রদর্শন করে। এ পন্থায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিপক্ষ দলকে দমিয়ে রাখা, ভীতসন্ত্রস্ত করে রেখে সুবিধা লাভ, নির্বাচনে জয় অর্জনের কালোরীতি চালু হয় যা পরবর্তীকালে জিয়ার দ্বারা সৃষ্ট নিজ দল বিএনপির মধ্যেও বিস্তার লাভ করে। জনগণ কয়েকটি ঘটনা স্মরণ করলে বিষয়টি উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। ’৯১ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়ে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সংঘটিত গণআন্দোলনের (১৯৯২ সালে) মঞ্চ পুলিশ দিয়ে ভেঙ্গে দেয়, মাইক জব্দ করে, বিচারে দোষী সাব্যস্ত ‘গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব’ ফেরত দেয়। শুধু তাই নয়, জামায়াতের আমির হতে সুযোগ করে দেয় পাকিস্তান ফেরত গোলাম আযমকে। অপরদিকে ‘গণআদালতের উদ্যোক্তা জাহানারা ইমামসহ দেশের ২৪ জন সম্মানিত সুধীজন, শিক্ষক, কবি, রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, আইনজীবী যারা গণআদালতে বিচারক ও সাক্ষী হিসেবে গোলাম আযমের প্রতীকী বিচার সম্পাদন করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলা রুজু করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। পরে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের সহায়তায় তারা জামিন লাভ করেন। খালেদার শাসনের শুরুটাও যুদ্ধাপরাধ-জামায়াত শোষণ এবং মুক্তিযুদ্ধপন্থী বুদ্ধিজীবী-মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধিতা করার পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে যা ঠিক জিয়ার অপরাজনীতির ধারার ধারাবাহিকতা বলেই গণ্য করতে হয়। খালেদার শাসনকালে জামায়াত-শিবির দেশে তাদের সম্পদ বৃদ্ধি, ব্যবসা, বাণিজ্য করে তাদের ’৭১-এর অপরাজনীতি বিস্তারের শক্ত ভিত তৈরি করে এবং ক্রমশই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিবিরের হত্যা, নির্যাতনের অপরাজনীতির ঘাঁটি তৈরি করে। এ সময় কৃষক-শ্রমিক-ক্ষুদ্র পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্রের বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার হয়ে নিঃস্ব, দরিদ্র, প্রান্তিক শ্রেণীতে পরিণত হয়। বঙ্গবন্ধুর দ্বারা জাতীয়করণ করা পাটকল, বস্ত্রকলগুলো মালিকদের ফিরিয়ে দেয়া হয় যারা এগুলো প্রতারক ঋণখেলাপী ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করে দেশ ত্যাগ করে। সোচ্চার দেশপ্রেমহীন গ্রহণের মাধ্যমে যা দেশবিরোধী নতুন মালিকরা মিলের মূলধন লোপাট করে যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দিয়ে উৎপাদন না করা মিলগুলোকে বন্ধ করে কয়েক লাখ শ্রমিকের অন্ন সংস্থানের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়। গণতন্ত্র ধ্বংসের পন্থা হিসাবে এ সময় মাগুরা, মিরপুরে সংখ্যালঘু হিন্দু ভোটারদের দলীয় গু-া-ক্যাডারদের দিয়ে বের করে, তাদের ভোট ক্যাডারদের দিয়ে দেয়া, আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্টদের মেরে বের করে দেয়া, ব্যালট বাক্স ইচ্ছামতো ব্যালটে সিল মেরে পূর্ণ করা ইত্যাদি দ্বারা এক কথায় নির্বাচন ব্যবস্থাকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন সিল মেরে লাখ লাখ ভোট দিয়ে ভোটবাক্স পূর্ণ করে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হয় যা জনগণ প্রত্যাখ্যান করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করতে শুরু করে। ’৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দীর্ঘ একুশ বছর পর নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। মেধাবী অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়া, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় দ্রুত পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রসর করার লক্ষ্যে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে। ‘ইনডেমনিটি বিল’ যেটি দিয়ে জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার বন্ধ করে রেখেছিল, সেটি বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এ সময় সরকার শুরু করে। এই বিচারে কয়েকজন খুনীকে গ্রেফতার করা হয়। এই সময় বিএনপি জঙ্গীর উত্থান ঘটিয়ে তাদের দ্বারা সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে একের পর এক বোমা হামলা করে। প্রথমে মুক্তিযোদ্ধা কাজী আরেফসহ চার-পাঁচজন স্থানীয় জাসদ নেতার হত্যা করে। একে একে উদীচীর অনুষ্ঠানে, কমিউনিস্ট পার্টির সমাবেশে বোমা হামলা করে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম শুরু করে মুক্তিযোদ্ধাপন্থী সরকারকে বড় ধরনের সমস্যায় ফেলতে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় ছায়ানটের পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা করে বাঙালী সংস্কৃতির ওপর আঘাত করা হলে জনগণ নতুন এক মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালী সংস্কৃতি বিরোধীদল যারা নাশকতা ও জঙ্গী মৌলবাদীদের ব্যবহার করে বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে রাজনীতির নামে অপরাজনীতির চর্চাকারী দলের মুখোমুখি হয়। এমনকি, সরকার ’৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে যুদ্ধরত পাহাড়ীদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করে পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনলে বিএনপির মদদে শান্তি চুক্তি করে বিরোধী দল গঠন করে ওই সময় শান্তি চুক্তি করা নেতা ও দলের বিরুদ্ধে হামলা, হত্যাকা- দ্বারা পাহাড়ে নতুন করে অশান্তি শুরু করা হয়। ওই সময় তিতাস গ্যাসের লাইন কেটে দেয়া, বিদ্যুত লাইন বিচ্ছিন্ন করা, বিদ্যুত বিতরণ কেন্দ্র অকার্যকর করাসহ গণবিরোধী নাশকতামূলক নানা অপতৎপরতার মধ্যেও আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের অবস্থানকে বিশ্বের নজরে আনতে সক্ষম হয়। ২০০১-এ বাংলাদেশের নির্বাচনে নজিরবিহীন কারচুপি করা হয় প্রথমত হিন্দু পাড়াগুলোতে বিএনপি ক্যাডাররা চালায় অবর্ণনীয় বর্বর তা-ব, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগ, বাড়ি- জমি দখল ও হিন্দুদের গৃহত্যাগ, দেশত্যাগে বাধ্য করে বর্বর নির্যাতন চালায় আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী-সমর্থকদের ওপর। অন্যদিকে নির্বাচন অফিসে চারজন সচিব, তারেক, একজন পশ্চিমা দূতাবাসের কর্মকর্তা নির্বাচনী ফলগুলো তাদের ইচ্ছামতো কম্পিউটারে সাজায়। পরে জানা গেছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভোটগুলো বিএনপি প্রার্থীর নামে দেখানো হয়েছিল ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে ৫৮টি পদে জয়ী দেখানো হয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ ছিল জামায়াত-বিএনপির জোট, খালেদা, নিজামী মুজাহিদ ও তারেকের পরিচালনাধীন সরকারের অন্ধকার যুগ। এ সময়কালে বিশ হাজারের বেশি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী খুন হয়। শুধু তাই নয়, তারেক-নিজামীদের প্রশ্রয়ে জঙ্গী বাংলা ভাই শায়েখ আব্দুর রহমান ও তাদের জেএমবি জঙ্গীগোষ্ঠী রাজশাহী অঞ্চলে শরিয়া শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শুরু করে খুন, নির্যাতন এবং নিজস্ব আইনে বিচার! ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজন তোষণ এবং মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে পাকিস্তান মৌলবাদী অনুন্নত দেশ বানাবার কাজই প্রধান এজেন্ডা ছিল। এ লক্ষ্যে তারা বহু জঙ্গী মৌলবাদী দলের উত্থান ঘটায়। এদের দ্বারাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী দল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার লক্ষ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট পল্টনে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আইভি রহমানসহ ২৩ জন নেতা-কর্মী-সমর্থককে হত্যা করা হয়। সেদিন শেখ হাসিনা ও অন্যান্য নেতা-নেত্রী প্রাণে বেঁচে গেলেও অনেকেই আহত হয়েছেন। এর আগে চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ে যে অবৈধ চালান নিজামী, তারেকের নির্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে রাতের অন্ধকারে খালাস হচ্ছিল। এরপর শাহ এম এস কিবরিয়া গ্রেনেড হামলায় ভাগ্নে, দলের স্থানীয় নেতাসহ নিহত হন। এছাড়া সিনেমা হলে বোমা হামলা, যাত্রা, গ্রামীণ মেলাতেও বোমা হামলা করা হয়। শ্বাসরুদ্ধকর এক পরিবেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এ সময় মুমূর্ষু হয়ে পরে। ২০০৬- এ দেশ, জাতি ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াত- বিএনপি জোট আবার ক্ষমতায় আসতে দলীয় রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করে এ সময়ের উপদেষ্টার দল কয়েকবার পদত্যাগ করে শেষ পর্যন্ত নবেম্বরে সেনাবাহিনী প্রধান নতুনভাবে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে ২০০৮-এর ডিসেম্বরে নতুন নির্বাচন কমিশনের দ্বারা নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি সংস্থা জরিপ করে বের করে ভোটার লিস্ট সোয়াকোটি ভুয়া ভোটার যোগ করে পরবর্তী নির্বাচনে জয়ের ব্যবস্থা করেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট! এই নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব দলের মিলিত মহাজোট গঠন করা হয় যাতে জাতীয় পার্টিও যোগ দেয়। মহাজোট দুই-তৃতীয়াংশ পদে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে এবং বিএনপি ৩১টি পদে জয় পায়। এ সময়ে সরকার গঠন করে মহাজোট দ্রুত উন্নয়নের লক্ষে কৃষি, শিল্প, বাণিজ্যে অবদান রাখতে থাকে, শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য আবার প্রাণ ফিরে পায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অসম্পন্ন কাজ ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জামায়াতের শীর্ষ এবং আল বদর নেতাদের অধিকাংশকে গ্রেফতার করে। কয়েকজনের অনুপস্থিতিতে বিচার করে দ- দেয়। ২০১৩ সালে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন দ- হলে তরুণ প্রজন্ম সব যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দ-ের দাবিতে শাহবাগে ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ গঠন করে জমায়েত শুরু করে। পরে সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হয়। কিন্তু সাঈদীর ফাঁসির দ-ের পর সারাদেশে জামায়াত-বিএনপির ক্যাডারগোষ্ঠী তা-ব, নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যাযজ্ঞ শুরু করে যাতে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী নিহত হয়। ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের পাল্টা সমাবেশ ডাকে ধর্মীয় রাজনৈতিক দল হেফাজতে ইসলাম। তাদের শাপলা চত্বরের সমাবেশের নেপথ্য থেকে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিপুল অর্থের বিনিময়ে সমাবেশকে অব্যাহত রেখে সরকার পতন আন্দোলনের দিকে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিকেল পাঁচটায় সরকার নির্ধারিত সময়ের পরেও হেফাজত নেতারা অবস্থান চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেয়। রাতে শিবির-বিএনপির ক্যাডার গু-ারা তোপখানা-মতিঝিল এলাকায় ভয়াবহ তা-ব চালিয়ে দোকান-অফিস, ব্যাংক, সিপিবি অফিস আগুনে পুড়ে, ভাঙচুর করে, রাস্তা-ঘাট, ডিভাইডার ধ্বংস করে দেয়। তখন পুলিশ সাউন্ড বক্স ব্যবহার করে ওই সমাবেশের অবস্থান গ্রহণকারী ও তা-বকারীদের সরিয়ে দেয়। এরপর ২০১৪-এর নির্বাচনকে বন্ধ করতে নির্বাচনে অংশ না নেয়া বিএনপি তারেক-খালেদার নির্দেশে সারাদেশে অবরোধ ডেকে রাজপথে, হাইওয়েতে পেট্টোলবোমা ছুড়ে ট্রাক, বাস, সিএনজি চালক, যাত্রীদের পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। বলাবাহুল্য, এই নির্মমতা হিটলারের গ্যাস চেম্বারে ইহুদীদের পুড়িয়ে মারার চাইতে কোন অংশে কম নয়। প্রায় দুই শ’ নারী-পুরুষ, কিশোর, কিশোরী, যুবক দগ্ধ হয়ে নিহত হয়। এরপর নির্বাচনের দিনে-রাতে প্রায় চারশ’ ভোট কেন্দ্র হিসাবে নির্ধারিত স্কুলঘর পুড়িয়ে ছাই করে, হিন্দুদের এলাকা ছাড়া করে, সারাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় জামায়াত-বিএনপি ক্যাডাররা এদের হাতে রিটার্নিং অফিসার পর্যন্ত নিহত হয়। বিএনপির এই পুরো ইতিহাস পর্যালোচনা করে জনগণ বিএনপি নামক দলটির একটি চরিত্রই দেখতে পায়, তা হচ্ছে- ১. বিএনপির নেত্রী খালেদা ও নেতা তারেক কখনই গণতান্ত্রিক পদ্ধতির নির্বাচন ও নির্বাচিত সরকার ও সংসদ দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশ্বাস করে না। ২. খালেদা-তারেক নিয়ন্ত্রিত বিএনপি সুষ্ঠু নির্বাচন নয় বরং ভুয়া ভোটার, সংখ্যালঘু ভোটারদের ভয়ভীতি, ধর্ষণ, নির্যাতন দ্বারা ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দান, নির্বাচন ভ-ুল করতে নাশকতা, ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থার সাহায্যে নির্বাচনী প্রহসন করে ক্ষমতা দখলে বিশ্বাসী ও বারংবার নাশকতা, বোমা-গ্রেনেড হামলা দ্বারা দেশ ও জাতিকে ধ্বংসের কাছে নিয়ে যেতে মোটেও দ্বিধা করে না। ৩. বিএনপি নেত্রী খালেদা ও নেতা তারেক বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার, ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দ-দানকে মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি, কারণ তারা তাদের রাজনৈতিক মিত্র। স্মরণ রাখতে হবে, রাজনৈতিক আদর্শে মিল না থাকলে রাজনৈতিক মিত্র হওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে বাংলাদেশের জন্মশত্রু পাকিস্তানের মতোই তারাও বাংলাদেশের উন্নয়ন বরদাশত করতে পারে না বলেই বার বার নির্বাচনের সময় এলেই নাশকতা, ষড়যন্ত্র, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার নানা অপকর্মে নিয়োজিত থাকে। ৪. বিএনপিকে মিত্র হিসেবে পাওয়ার ফলে জামায়াত-শিবির জিয়ার আমল থেকে খালেদা-নিজামী-তারেক আমল পর্যন্ত অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। নতুবা বাংলাদেশের জন্মের বিরোধিতাকারী, বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় নেতা হত্যার সুবিধাভোগী হিসাবে তারা নিষিদ্ধ হয়ে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত হয়ে, ক্ষমতাহীন ও দ-িত হয়ে দেশে প্রান্তিক অবস্থানে থাকত। তাদের নেতিবাচক দেশবিরোধী অপরাজনীতিও নির্মূল হতো। ৫. দেখা যাচ্ছে, খালেদা-তারেক-জামায়াতের পরম মিত্র পাকিস্তানের আইএসআই দ্বারা প্রণীত নাশকতা ও ষড়যন্ত্রমূলক দেশ-জাতি ধ্বংসকারী পরিকল্পনা এক নীলনকশা বাস্তবায়ন করে চলেছে বিএনপি। সুতরাং এখন প্রশ্ন উঠেছে- জনগণ তাদের স্বার্থবিরোধী, জাতি ও দেশের উন্নয়ন বিরোধী এই বিএনপি দলটিকে গণরায় দিয়ে নির্মূল করবে কি? সামাজিকভাবেও এ দলের নেতা-কর্মীদের জামায়াতের মতোই বর্জন করে তাদের ক্ষমতার দাপট হ্রাস করবে কি? রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা নিতে হবে, দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে নাশকতা ও ষড়যন্ত্রকারী অপরাজনীতি করা দলের এসব দেশবিরোধী কাজকর্মের জন্য শাস্তির বিধান প্রণয়ন করে তাদের দল ও নেতা হিসাবে শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কেননা দেশে যতবার নির্বাচন আসবে, যতক্ষণ মুক্তিযুদ্ধপন্থীদের জোট সরকারে থাকবে, এমনকি ক্ষমতাহীন বিরোধী দলে থাকলেও কেন, কোন একটি দল জাতিকে জিম্মি করে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাবে? কেন এ অনাচার জাতি, জনগণ, দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেবে? জামায়াত যেমন সন্ত্রাসী দল, বিএনপিও তেমন একটি সন্ত্রাসী দলÑ তা তো বিদেশের আদালতেই প্রমাণ হয়েছে। গণতন্ত্র, সংসদীয় ব্যবস্থা, নির্বাচন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আদর্শ এবং জাতি ও দেশের উন্নয়নকে সুরক্ষা দিতে জামায়াতের শক্তির উৎস বিএনপির নাশকতা এবং ষড়যন্ত্র প্রবণতাকে বিচারের আইন-কানুনের মধ্যে আনার কোন বিকল্প নেই। তাদের রাজনীতির নামে অপরাজনীতির দ- হিসাবে কয়েক বছরের জন্য তাদের রাজনীতি চর্চা নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত জাতির শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চা ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত হবে নাÑ তা বলাবাহুল্য। লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
×