ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ

ইয়াবার সর্বনাশা ছোবল

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৮ জুলাই ২০১৮

ইয়াবার সর্বনাশা ছোবল

গাঁজা, মদ, হেরোইন ও কোকেন বিগত শতাব্দীর বহুল পরিচিত মাদক বা নেশাদ্রব্য। পাশাপাশি ফেনসিডিল, আঠা জাতীয় দ্রব্যও নেশার জন্য ব্যবহৃত হতো এবং হচ্ছে। এগুলোকে মাদকদ্রব্য বলার চেয়ে বরং বিষ বলাই অধিকতর শ্রেয়। তবে বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে মাদক জগতে এক নতুন সদস্যের প্রবেশ ঘটে, নাম তার ইয়াবা। যা বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আলোচিত মাদক। তার নীল ছোবল থেকে সমাজের শিশু-বৃদ্ধ, পুরুষ-নারী, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সচেতন-অসচেতন, ধনী-গরিব, যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী কেউই রেহাই পায়নি এবং পাচ্ছেও না। বলা হচ্ছে দেশে ইয়াবাসেবীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখের ওপরে, যার ১৫ থেকে ২০ শতাংশই মহিলা। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষবাষ্পের মতো ছড়িয়ে পড়ছে এই ইয়াবা, সবাইকে এক ভয়াবহ ধ্বংস ও বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করছে। ‘ইয়াবা’ মূলত থাই শব্দ, যার অর্থ ‘ক্রেজি মেডিসিন’ বা ‘পাগল ওষুধ’। মূল উপাদান মেথএ্যামফিটামিন, এক ভয়াবহ মাদক, যা মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র এবং শরীরের যে কোন অঙ্গকেই আক্রান্ত করতে পারে। যতদূর জানা যায়, সর্বপ্রথম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সেনাদের নিদ্রা, ক্ষুধা ও ক্লান্তিহীন করার জন্য এই মেথএ্যামফিটামিন খাওয়ানো হতো। সেনারা হয়ে উঠত হিংস্র, ক্লান্তিহীন ও আগ্রাসী। কিন্তু পরে আসক্ত যুদ্ধফেরত সেনারা মানসিক অবসাদে ভুগত এবং আরও হিংস্র হয়ে উঠত। এক সেনা আরেক সেনাকে গুলি করে মারত, আবার কখনও নিজে আত্মহত্যা করত। ধীরে ধীরে এর কুফল বা দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া উদ্ঘাটিত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু বিশ্বের কয়েকটি দেশে এর উৎপাদন চলতেই থাকে, এমনকি মেথএ্যামফিটামিনের সঙ্গে ক্যাফেইন বা হেরোইন মিশিয়ে ব্যবহার হতে থাকে মাদকদ্রব্য হিসেবে। বর্তমানে তরুণ-তরুণীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে মূল উপাদানের সঙ্গে মেশানো হয় আঙ্গুর, কমলা বা ভ্যানিলার ফ্লেভার, সবুজ বা লাল কমলা রং। ইয়াবা নামের ছোট্ট এ ট্যাবলেটটি দেখতে অনেকটা ক্যান্ডির মতো, স্বাদেও তেমনই। ফলে আসক্ত ব্যক্তিরা এর প্রচণ্ড ক্ষতিকর প্রভাবটুকু প্রথমে বুঝতে পারে না। তাছাড়া আকারে অত্যন্ত ছোট্ট ওয়ালেটে এবং ভ্যানিটি ব্যাগেও এটি বহন করা ও লুকিয়ে রাখা সহজ। অধিকাংশ মাদকসেবী ট্যাবলেটটি মুখেই গ্রহণ করে। অনেকে এ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের ওপর রাখা ট্যাবলেটের অপর প্রান্তে তাপ দিয়ে গলিয়ে যে ধোঁয়া বের হয় তা নিশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে, যা তৎক্ষণাৎ মস্তিষ্কের বিশেষ অংশকে আন্দোলিত করার মাধ্যমে ডোপামিন নিঃসরণ করে যা তাকে দ্রুত উত্তেজিত ও উৎফুল করে স্বপ্নের জগতে নিয়ে যায়। আবার ট্যাবলেটটি গুঁড়া করে, পানিতে মিশিয়ে সিরিঞ্জের মাধ্যমে শিরাপথে সরাসরি রক্তেও ঢুকিয়ে দেয় অনেকে। ইয়াবাকে আরও বলা হয় ‘আপার ড্রাগ’। কারণ এটি শুরুতে সেবনকারীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে চাঙ্গা করে তোলে। একবার সেবন করলে ইয়াবার দিকে আরও ঝুঁকে পড়ে। ইয়াবার আনন্দ আর উত্তেজনা আসক্ত ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে ভুলিয়ে দেয় জীবনের সব যন্ত্রণা, তারা বাস করে স্বপ্নের এক জগতে। তাই অনেকেই নানারকম হতাশা-ব্যর্থতা, বেকারত্ব, পারিবারিক কলহ এবং অসৎ সংসর্গে শুরু করে ইয়াবা সেবন। ইয়াবার প্রচণ্ড উত্তেজক ক্ষমতা আছে বলে যৌন উত্তেজক হিসেবে অনেকে ব্যবহার করে এটি। যাদের ওজন বেশি তাদের কেউ কেউ সিøম হওয়ার ওষুধ হিসেবে শুরু করে ইয়াবা সেবন। ঘুম কমিয়ে দেয় বলে সারা রাতের পার্টির আগে ক্লান্তিহীন উপভোগ নিশ্চিত করতে অনেকের পছন্দ ইয়াবা। আবার কিছু শিল্পীও ইয়াবা সেবন করেন তাদের শিল্পকর্মের দক্ষতা বাড়বে মনে করে। রাত জেগে বেশি বেশি পড়াশোনার জন্য ঘুম কমানোর ওষুধ হিসেবে খায় শিক্ষার্থীরা। এভাবে সাময়িক লাভের ট্যাবলেটটি কখন যে তাদের ধ্বংসের পথে নিয়ে যায় তা তারা টেরও পায় না। আসলে ইয়াবা নামক এই দানবটি শুরুতে সত্যিই আনন্দদায়ক, উদ্দীপক, উত্তেজক, যা সাময়িকভাবে উচ্ছ্বসিত ও রোমাঞ্চিত করে। কিন্তু শেষ পরিণতি হয় বেদনাদায়ক, মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক এবং ধ্বংসাত্মক। দেখা যায় কিছুদিন ইয়াবা সেবনের পর শুরু হয় এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। কৌতূহলবশত কয়েকদিন সেবনের পরই আসক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, এটি ছেড়ে দেয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ইয়াবা ছাড়া আর কিছুই ভাল লাগে না। তখন ওই মাদক পেতে যে কোন হীন অপকর্ম করতেও হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। প্রথমে কম মাত্রায় এ ট্যাবলেট কাজ করলেও ধীরে ধীরে মাত্রা বাড়াতে হয়। আগে যেটুকু ইয়াবা আনন্দ এনে দিত পরে ওই মাত্রায় আর কাজ হয় না। বাড়াতে হয় ট্যাবলেটের পরিমাণ। ক্ষণস্থায়ী আনন্দের পর বাড়তে থাকে ক্ষতিকর নানা উপসর্গও। রাত কাটে নির্ঘুম, শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়তে থাকে, গলা মুখ শুকিয়ে আসে, অনবরত প্রচণ্ড ঘাম আর গরমের অসহ্য অনুভূতি বাড়ে। এর সঙ্গে বাড়ে নাড়ির গতি, রক্তচাপ, দেহের তাপমাত্রা আর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি। দেহে আসে মানসিক অবসাদ, চিন্তা আর আচরণে বৈকল্য। মেজাজ খিটখিটে হয়, অহেতুক রাগারাগি, ভাংচুরের প্রবণতা বাড়ে। মানুষ আর মানুষ থাকে না, হয়ে উঠে হিংস্র, হিতাহিত জ্ঞানশূন্য। ন্যায়-অন্যায় বোধ লোপ পায়, হয়ে উঠে অপরাধপ্রবণ। বিঘিœত হয় সামাজিক ও পারিবারিক নিরাপত্তা, ব্যাহত হয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্রোতধারা। এই ভয়াল মাদকের করাল গ্রাসে তারুণ্য, মেধা, বিবেক, মনুষ্যত্ব, এমনকি স্নেহ-মায়া, ভালবাসা আর পারিবারিক বন্ধন সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। একদিকে যেমন আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ে, তেমনি মাদকাসক্ত অনেক তরুণ-তরুণী সন্ত্রাস, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, এমনকি খুনও করে নেশার টাকা যোগাড় করার জন্য। মা-বাবার গলায় ছুরি ধরে টাকার জন্য, বুকে বসে ছুরি চালাতেও তার হাত কাঁপে না। নেশার টাকা না পেয়ে নেশাখোর বাবা মাদক সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে ক্রোধে খুন করে নিজ সন্তানকে, এমনকি স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে মারা, মাকে জবাই করা, আদরের সন্তানকে বিক্রি করে দেয়ার মতো অমানবিক ঘটনাও ঘটছে হরহামেশা। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এ সকল ঘটনার দায় পড়ে মাদকসেবীর ঘাড়ে। কিন্তু একটু গভীর দৃষ্টিতে তাকালে দেখা যায়, কোন কোমল হৃদয় বা মানুষের বিবেক এই খুন বা অপকর্ম করে না, করে ইয়াবা নামক এক ভয়ানক সর্বনাশা মাদক। এই মাদক জীবন থেকে জীবন আর হৃদয়ের আবেগ-অনুভূতি কেড়ে নেয়। আলোর পথ ছেড়ে নিয়ে যায় অন্ধকার পথে। স্বাধীন হৃদয় পরিণত হয় নেশার দাসে। মানসিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি এক সময়ে শরীরেও প্রভাব পড়তে শুরু করে। হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, লিভার, কিডনি থেকে শুরু করে শরীরে সব অঙ্গই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইয়াবা খেলে উচ্চ রক্তচাপ হয়, মস্তিষ্কের ভেতরকার ছোট রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে। যৌন উদ্দীপক হিসেবে গ্রহণ করা হলেও আসলে যৌন ক্ষমতা হারিয়ে যায়, এমনকি শুক্রাণু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে সন্তান উৎপাদন ক্ষমতাও কমে যায়। মেয়েদের ঋতুস্রাবেও সমস্যা হয়। বেশি পরিমাণে ইয়াবা সেবনের ফলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম নষ্ট করে মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। আসক্ত ব্যক্তিরা এর ওপর শারীরিক ও মানসিকভাবে নিভর্রশীল হয়ে পড়ে এবং একবার ইয়াবা নেয়ার কয়েক ঘণ্টা বা নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর আবার না নিলে শরীরে ও মনে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে আসক্ত ব্যক্তিরা আবার ফিরে যায় নেশার জগতে। তাহলে ইয়াবার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি? মনে রাখতে হবে, মাদকাসক্তি প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করাই অতি উত্তম। তাই এই মাদকের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে সামগ্রিক প্রতিরোধ অতীব জরুরী। আসক্ত ব্যক্তি, যিনি পুনরায় স্বাভাবিক সুস্থ জীবন ফিরে পেতে চায়, তার নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। এ কথা মোটেই সত্য নয় যে, তারা আর কখনই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে না। শুধু প্রয়োজন ধৈর্যসহকারে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা। একবার কেউ আসক্ত হয়ে গেলে তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার না করে বারবার কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমে ভালভাবে বোঝাতে হবে। কোনক্রমেই বকাবকি, মারধর, বেঁধে বা তালাবদ্ধ করে রাখা অনুচিত। শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক চিকিৎসার জন্য মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরী। মনে রাখতে হবে অপরাধী নয়, অপরাধই ঘৃণার বিষয়। স্বাভাবিক সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে তাদের প্রতি ঘৃণা নয়, বরং সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি আসক্ত ব্যক্তিদের আশার আলো দেখাচ্ছে। তারা ফিরে যেতে পারছে মাদকমুক্ত জীবনধারায়। ওষুধ, সাইকোথেরাপি ও অন্যান্য উপায়ে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে স্বাভাবিক এবং সুস্থ জীবনযাপন পদ্ধতিতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। পরিবর্তন করার চেষ্টা করতে হবে তার আগের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, যা তাকে মাদকাসক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এতে মনোরোগ চিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানীর যেমন ভূমিকা রয়েছে, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে পরিবার, আত্মীয়স্বজন আর প্রকৃত বন্ধুরও। একজন নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি সবার সম্মিলিত সহযোগিতায়ই আবার ফিরে পেতে পারে মাদকমুক্ত সুস্থ জীবন। আর প্রতিরোধ এককভাবে কোন ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ বা দেশের পক্ষে করা সম্ভব নয়। সবাইকে নিয়ে এই প্রতিরোধ যুদ্ধে নামতে হবে এবং এই যুদ্ধ চলমান রাখতে হবে। গড়ে তুলতে হবে মাদক প্রতিরোধ সামাজিক আন্দোলন। মাদকের বিরুদ্ধে প্রথমে পরিবারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বাবা-মাকে সন্তানের মধ্যে এমন বীজ বপন করতে হবে, যাতে সে আত্মপ্রত্যয়ী হয়, অশুভকে চিনতে পারে। বাবা-মায়ের কোন কলহ-বিবাদ যেন সন্তানকে প্রভাবিত না করতে পারে। তাই পারিবারিক শিক্ষা, যথাযথ অনুশাসন এবং সচেতনতা খুবই জরুরী। দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন ও সঠিক শিক্ষা মাদক প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে মাদক থেকে দূরে রাখতে হলে তাদের জন্য দরকার খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক, সৃজনশীল কর্মকাণ্ড ও সুস্থ বিনোদনের সুযোগ-সুবিধা এবং এগুলো চর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করা। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, ধর্মীয় অনুশাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মচর্চা অনুশীলন করলে অনেক ক্ষেত্রে সর্বগ্রাসী মাদক বর্জন এবং প্রতিকার সম্ভব। মাদক ব্যবহারের কুফল, এর পাচার প্রতিরোধে এবং জনসচেতনতা সৃষ্টিতে দেশের শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা এবং সংবাদপত্রসহ মিডিয়ার কর্মীদেরও দায়িত্ব অপরিসীম। সামগ্রিক দৃষ্টিতে ইয়াবা সেবনের ক্ষতি অসীম ও অপূরণীয়। এটি একটি ব্যক্তি, তার পরিবারকে করে ধ্বংস, সমাজকে করে কলুষিত। ফলে পুরো সামাজিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে, আর রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়। সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে ঘৃণা ও অপরাধী হিসেবে বড় করে না দেখে কোথা থেকে, কীভাবে, কারা মাদক সরবরাহকারী, চোরাকারবারি বা কারা এসবের মূল হোতা তাদের বিচার ও শাস্তির আওতায় আনা। প্রয়োজনে যথাযথ আইন প্রণয়ন করা এবং তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। তবেই ইয়াবার ভয়ঙ্কর ছোবল থেকে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম ও কোমলমতি সন্তানদের রক্ষা করা সম্ভব হবে। তাই এখনই উচিত সবাইকে একতাবদ্ধ হয়ে মাদকবিরোধী সেøাগানে সোচ্চার হয়ে মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা। লেখক : ডিন, মেডিসিন অনুষদ, অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় গাঁজা, মদ, হেরোইন ও কোকেন বিগত শতাব্দীর বহুল পরিচিত মাদক বা নেশাদ্রব্য। পাশাপাশি ফেনসিডিল, আঠা জাতীয় দ্রব্যও নেশার জন্য ব্যবহৃত হতো এবং হচ্ছে। এগুলোকে মাদকদ্রব্য বলার চেয়ে বরং বিষ বলাই অধিকতর শ্রেয়। তবে বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে মাদক জগতে এক নতুন সদস্যের প্রবেশ ঘটে, নাম তার ইয়াবা। যা বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আলোচিত মাদক। তার নীল ছোবল থেকে সমাজের শিশু-বৃদ্ধ, পুরুষ-নারী, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সচেতন-অসচেতন, ধনী-গরিব, যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী কেউই রেহাই পায়নি এবং পাচ্ছেও না। বলা হচ্ছে দেশে ইয়াবাসেবীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখের ওপরে, যার ১৫ থেকে ২০ শতাংশই মহিলা। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষবাষ্পের মতো ছড়িয়ে পড়ছে এই ইয়াবা, সবাইকে এক ভয়াবহ ধ্বংস ও বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করছে। ‘ইয়াবা’ মূলত থাই শব্দ, যার অর্থ ‘ক্রেজি মেডিসিন’ বা ‘পাগল ওষুধ’। মূল উপাদান মেথএ্যামফিটামিন, এক ভয়াবহ মাদক, যা মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র এবং শরীরের যে কোন অঙ্গকেই আক্রান্ত করতে পারে। যতদূর জানা যায়, সর্বপ্রথম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সেনাদের নিদ্রা, ক্ষুধা ও ক্লান্তিহীন করার জন্য এই মেথএ্যামফিটামিন খাওয়ানো হতো। সেনারা হয়ে উঠত হিংস্র, ক্লান্তিহীন ও আগ্রাসী। কিন্তু পরে আসক্ত যুদ্ধফেরত সেনারা মানসিক অবসাদে ভুগত এবং আরও হিংস্র হয়ে উঠত। এক সেনা আরেক সেনাকে গুলি করে মারত, আবার কখনও নিজে আত্মহত্যা করত। ধীরে ধীরে এর কুফল বা দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া উদ্ঘাটিত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু বিশ্বের কয়েকটি দেশে এর উৎপাদন চলতেই থাকে, এমনকি মেথএ্যামফিটামিনের সঙ্গে ক্যাফেইন বা হেরোইন মিশিয়ে ব্যবহার হতে থাকে মাদকদ্রব্য হিসেবে। বর্তমানে তরুণ-তরুণীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে মূল উপাদানের সঙ্গে মেশানো হয় আঙ্গুর, কমলা বা ভ্যানিলার ফ্লেভার, সবুজ বা লাল কমলা রং। ইয়াবা নামের ছোট্ট এ ট্যাবলেটটি দেখতে অনেকটা ক্যান্ডির মতো, স্বাদেও তেমনই। ফলে আসক্ত ব্যক্তিরা এর প্রচণ্ড ক্ষতিকর প্রভাবটুকু প্রথমে বুঝতে পারে না। তাছাড়া আকারে অত্যন্ত ছোট্ট ওয়ালেটে এবং ভ্যানিটি ব্যাগেও এটি বহন করা ও লুকিয়ে রাখা সহজ। অধিকাংশ মাদকসেবী ট্যাবলেটটি মুখেই গ্রহণ করে। অনেকে এ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের ওপর রাখা ট্যাবলেটের অপর প্রান্তে তাপ দিয়ে গলিয়ে যে ধোঁয়া বের হয় তা নিশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে, যা তৎক্ষণাৎ মস্তিষ্কের বিশেষ অংশকে আন্দোলিত করার মাধ্যমে ডোপামিন নিঃসরণ করে যা তাকে দ্রুত উত্তেজিত ও উৎফুল করে স্বপ্নের জগতে নিয়ে যায়। আবার ট্যাবলেটটি গুঁড়া করে, পানিতে মিশিয়ে সিরিঞ্জের মাধ্যমে শিরাপথে সরাসরি রক্তেও ঢুকিয়ে দেয় অনেকে। ইয়াবাকে আরও বলা হয় ‘আপার ড্রাগ’। কারণ এটি শুরুতে সেবনকারীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে চাঙ্গা করে তোলে। একবার সেবন করলে ইয়াবার দিকে আরও ঝুঁকে পড়ে। ইয়াবার আনন্দ আর উত্তেজনা আসক্ত ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে ভুলিয়ে দেয় জীবনের সব যন্ত্রণা, তারা বাস করে স্বপ্নের এক জগতে। তাই অনেকেই নানারকম হতাশা-ব্যর্থতা, বেকারত্ব, পারিবারিক কলহ এবং অসৎ সংসর্গে শুরু করে ইয়াবা সেবন। ইয়াবার প্রচণ্ড উত্তেজক ক্ষমতা আছে বলে যৌন উত্তেজক হিসেবে অনেকে ব্যবহার করে এটি। যাদের ওজন বেশি তাদের কেউ কেউ সিøম হওয়ার ওষুধ হিসেবে শুরু করে ইয়াবা সেবন। ঘুম কমিয়ে দেয় বলে সারা রাতের পার্টির আগে ক্লান্তিহীন উপভোগ নিশ্চিত করতে অনেকের পছন্দ ইয়াবা। আবার কিছু শিল্পীও ইয়াবা সেবন করেন তাদের শিল্পকর্মের দক্ষতা বাড়বে মনে করে। রাত জেগে বেশি বেশি পড়াশোনার জন্য ঘুম কমানোর ওষুধ হিসেবে খায় শিক্ষার্থীরা। এভাবে সাময়িক লাভের ট্যাবলেটটি কখন যে তাদের ধ্বংসের পথে নিয়ে যায় তা তারা টেরও পায় না। আসলে ইয়াবা নামক এই দানবটি শুরুতে সত্যিই আনন্দদায়ক, উদ্দীপক, উত্তেজক, যা সাময়িকভাবে উচ্ছ্বসিত ও রোমাঞ্চিত করে। কিন্তু শেষ পরিণতি হয় বেদনাদায়ক, মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক এবং ধ্বংসাত্মক। দেখা যায় কিছুদিন ইয়াবা সেবনের পর শুরু হয় এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। কৌতূহলবশত কয়েকদিন সেবনের পরই আসক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, এটি ছেড়ে দেয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ইয়াবা ছাড়া আর কিছুই ভাল লাগে না। তখন ওই মাদক পেতে যে কোন হীন অপকর্ম করতেও হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। প্রথমে কম মাত্রায় এ ট্যাবলেট কাজ করলেও ধীরে ধীরে মাত্রা বাড়াতে হয়। আগে যেটুকু ইয়াবা আনন্দ এনে দিত পরে ওই মাত্রায় আর কাজ হয় না। বাড়াতে হয় ট্যাবলেটের পরিমাণ। ক্ষণস্থায়ী আনন্দের পর বাড়তে থাকে ক্ষতিকর নানা উপসর্গও। রাত কাটে নির্ঘুম, শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়তে থাকে, গলা মুখ শুকিয়ে আসে, অনবরত প্রচণ্ড ঘাম আর গরমের অসহ্য অনুভূতি বাড়ে। এর সঙ্গে বাড়ে নাড়ির গতি, রক্তচাপ, দেহের তাপমাত্রা আর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি। দেহে আসে মানসিক অবসাদ, চিন্তা আর আচরণে বৈকল্য। মেজাজ খিটখিটে হয়, অহেতুক রাগারাগি, ভাংচুরের প্রবণতা বাড়ে। মানুষ আর মানুষ থাকে না, হয়ে উঠে হিংস্র, হিতাহিত জ্ঞানশূন্য। ন্যায়-অন্যায় বোধ লোপ পায়, হয়ে উঠে অপরাধপ্রবণ। বিঘিœত হয় সামাজিক ও পারিবারিক নিরাপত্তা, ব্যাহত হয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্রোতধারা। এই ভয়াল মাদকের করাল গ্রাসে তারুণ্য, মেধা, বিবেক, মনুষ্যত্ব, এমনকি স্নেহ-মায়া, ভালবাসা আর পারিবারিক বন্ধন সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। একদিকে যেমন আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ে, তেমনি মাদকাসক্ত অনেক তরুণ-তরুণী সন্ত্রাস, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, এমনকি খুনও করে নেশার টাকা যোগাড় করার জন্য। মা-বাবার গলায় ছুরি ধরে টাকার জন্য, বুকে বসে ছুরি চালাতেও তার হাত কাঁপে না। নেশার টাকা না পেয়ে নেশাখোর বাবা মাদক সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে ক্রোধে খুন করে নিজ সন্তানকে, এমনকি স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে মারা, মাকে জবাই করা, আদরের সন্তানকে বিক্রি করে দেয়ার মতো অমানবিক ঘটনাও ঘটছে হরহামেশা। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এ সকল ঘটনার দায় পড়ে মাদকসেবীর ঘাড়ে। কিন্তু একটু গভীর দৃষ্টিতে তাকালে দেখা যায়, কোন কোমল হৃদয় বা মানুষের বিবেক এই খুন বা অপকর্ম করে না, করে ইয়াবা নামক এক ভয়ানক সর্বনাশা মাদক। এই মাদক জীবন থেকে জীবন আর হৃদয়ের আবেগ-অনুভূতি কেড়ে নেয়। আলোর পথ ছেড়ে নিয়ে যায় অন্ধকার পথে। স্বাধীন হৃদয় পরিণত হয় নেশার দাসে। মানসিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি এক সময়ে শরীরেও প্রভাব পড়তে শুরু করে। হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, লিভার, কিডনি থেকে শুরু করে শরীরে সব অঙ্গই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইয়াবা খেলে উচ্চ রক্তচাপ হয়, মস্তিষ্কের ভেতরকার ছোট রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে। যৌন উদ্দীপক হিসেবে গ্রহণ করা হলেও আসলে যৌন ক্ষমতা হারিয়ে যায়, এমনকি শুক্রাণু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে সন্তান উৎপাদন ক্ষমতাও কমে যায়। মেয়েদের ঋতুস্রাবেও সমস্যা হয়। বেশি পরিমাণে ইয়াবা সেবনের ফলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম নষ্ট করে মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। আসক্ত ব্যক্তিরা এর ওপর শারীরিক ও মানসিকভাবে নিভর্রশীল হয়ে পড়ে এবং একবার ইয়াবা নেয়ার কয়েক ঘণ্টা বা নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর আবার না নিলে শরীরে ও মনে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে আসক্ত ব্যক্তিরা আবার ফিরে যায় নেশার জগতে। তাহলে ইয়াবার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি? মনে রাখতে হবে, মাদকাসক্তি প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করাই অতি উত্তম। তাই এই মাদকের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে সামগ্রিক প্রতিরোধ অতীব জরুরী। আসক্ত ব্যক্তি, যিনি পুনরায় স্বাভাবিক সুস্থ জীবন ফিরে পেতে চায়, তার নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। এ কথা মোটেই সত্য নয় যে, তারা আর কখনই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে না। শুধু প্রয়োজন ধৈর্যসহকারে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা। একবার কেউ আসক্ত হয়ে গেলে তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার না করে বারবার কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমে ভালভাবে বোঝাতে হবে। কোনক্রমেই বকাবকি, মারধর, বেঁধে বা তালাবদ্ধ করে রাখা অনুচিত। শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক চিকিৎসার জন্য মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরী। মনে রাখতে হবে অপরাধী নয়, অপরাধই ঘৃণার বিষয়। স্বাভাবিক সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে তাদের প্রতি ঘৃণা নয়, বরং সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি আসক্ত ব্যক্তিদের আশার আলো দেখাচ্ছে। তারা ফিরে যেতে পারছে মাদকমুক্ত জীবনধারায়। ওষুধ, সাইকোথেরাপি ও অন্যান্য উপায়ে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে স্বাভাবিক এবং সুস্থ জীবনযাপন পদ্ধতিতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। পরিবর্তন করার চেষ্টা করতে হবে তার আগের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, যা তাকে মাদকাসক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এতে মনোরোগ চিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানীর যেমন ভূমিকা রয়েছে, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে পরিবার, আত্মীয়স্বজন আর প্রকৃত বন্ধুরও। একজন নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি সবার সম্মিলিত সহযোগিতায়ই আবার ফিরে পেতে পারে মাদকমুক্ত সুস্থ জীবন। আর প্রতিরোধ এককভাবে কোন ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ বা দেশের পক্ষে করা সম্ভব নয়। সবাইকে নিয়ে এই প্রতিরোধ যুদ্ধে নামতে হবে এবং এই যুদ্ধ চলমান রাখতে হবে। গড়ে তুলতে হবে মাদক প্রতিরোধ সামাজিক আন্দোলন। মাদকের বিরুদ্ধে প্রথমে পরিবারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বাবা-মাকে সন্তানের মধ্যে এমন বীজ বপন করতে হবে, যাতে সে আত্মপ্রত্যয়ী হয়, অশুভকে চিনতে পারে। বাবা-মায়ের কোন কলহ-বিবাদ যেন সন্তানকে প্রভাবিত না করতে পারে। তাই পারিবারিক শিক্ষা, যথাযথ অনুশাসন এবং সচেতনতা খুবই জরুরী। দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন ও সঠিক শিক্ষা মাদক প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে মাদক থেকে দূরে রাখতে হলে তাদের জন্য দরকার খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক, সৃজনশীল কর্মকাণ্ড ও সুস্থ বিনোদনের সুযোগ-সুবিধা এবং এগুলো চর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করা। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, ধর্মীয় অনুশাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মচর্চা অনুশীলন করলে অনেক ক্ষেত্রে সর্বগ্রাসী মাদক বর্জন এবং প্রতিকার সম্ভব। মাদক ব্যবহারের কুফল, এর পাচার প্রতিরোধে এবং জনসচেতনতা সৃষ্টিতে দেশের শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা এবং সংবাদপত্রসহ মিডিয়ার কর্মীদেরও দায়িত্ব অপরিসীম। সামগ্রিক দৃষ্টিতে ইয়াবা সেবনের ক্ষতি অসীম ও অপূরণীয়। এটি একটি ব্যক্তি, তার পরিবারকে করে ধ্বংস, সমাজকে করে কলুষিত। ফলে পুরো সামাজিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে, আর রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়। সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে ঘৃণা ও অপরাধী হিসেবে বড় করে না দেখে কোথা থেকে, কীভাবে, কারা মাদক সরবরাহকারী, চোরাকারবারি বা কারা এসবের মূল হোতা তাদের বিচার ও শাস্তির আওতায় আনা। প্রয়োজনে যথাযথ আইন প্রণয়ন করা এবং তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। তবেই ইয়াবার ভয়ঙ্কর ছোবল থেকে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম ও কোমলমতি সন্তানদের রক্ষা করা সম্ভব হবে। তাই এখনই উচিত সবাইকে একতাবদ্ধ হয়ে মাদকবিরোধী সেøাগানে সোচ্চার হয়ে মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা। লেখক : ডিন, মেডিসিন অনুষদ, অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
×