ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৮ জুলাই ২০১৮

ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন

বর্তমান সরকারের নানা উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প।’ ২০০৯ সালে গৃহীত এই প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৬০ লাখ পরিবারকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার কাজ চলছে। এবার এই প্রকল্পে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে ভিক্ষুকদের। চলমান প্রকল্পে চতুর্থ একটি সংশোধনী আনার মাধ্যমে লক্ষাধিক ভিক্ষুককে প্রকল্পের আওতাভুক্ত করা হবে। ভিক্ষুক ও অতি দরিদ্রদের যুক্ত করা, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি কেনাসহ অনেক কাজে ঋণ দেবে সরকার। এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হলো, তৃণমূলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করে আরও নানা কাজে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা। দেশে হাঁস-মুরগি-গবাদিপশুর সঙ্কট রয়েছে। মাথাপিছু দুধ-ডিম- মাংস-মাছ তথা প্রোটিনের ঘাটতি সর্বজনবিদিত। প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বিশেষ করে গবাদিপশু, ডিম ও মুরগির বাচ্চা আমদানি করে মেটাতে হয় স্থানীয় চাহিদা। দুধের চাহিদা মেটাতে বিপুল পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে গুঁড়া দুধ আমদানি করতে হয়। জাতীয়ভাবে তরল দুধের প্রাপ্যতাও সীমিত, দামও বেশি। দৈনন্দিন মাংসের চাহিদা মেটাতে প্রধানত প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আমদানির ততোধিক চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে গবাদিপশু আসে। পশুখাদ্যের দামও অত্যধিক। তবে বর্তমানে দেশটিতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হওয়ায় গরু আমদানি প্রায় বন্ধ তথা সীমিত হয়ে পড়েছে। সেক্ষেত্রে দুধ-ডিম-মাংসের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে সুষ্ঠু ও সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদি পরকল্পনা নিয়ে আমাদের আরও বহুদূর অগ্রসর হতে হবে। ভিক্ষুকশ্রেণীকে গবাদিপশুর খামার প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। দেশ এখন খাদ্য উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় বরং উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্যে ভরপুর। সাড়ে ১২ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে জনসাধারণের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে। বাংলাদেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনে এই সাফল্যের প্রশংসা করা হয়েছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকেও। এ সবই ডিজিটাল কৃষির অবদান। বিশ্বে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, ফল উৎপাদনে সপ্তম। আরও উন্নতমানের প্রযুক্তি, বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো যায়। এখন নজর দেয়া উচিত বিভিন্ন ও বহুমুখী খাদ্যশস্য উৎপাদন এবং সংরক্ষণে। সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হলো সব মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। ডাল, তেলবীজ, ডিম, মাছ, মাংস, দুধ, মসলা উৎপাদনেও ঘাটতির বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া বাঞ্ছনীয়। মনে রাখতে হবে, শুধু ভাতে পেট ভরে বটে কিন্তু পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত হয় না। গত কয়েক বছরে শাক-সবজি, ফলমূলের উৎপাদন বাড়লেও মাছ, দুধ-মাংস জাতীয় খাদ্য অর্থাৎ প্রোটিনে বিপুল ঘাটতি রয়েই গেছে। এদিকে সবিশেষ ও সমন্বিত দৃষ্টি দিতে হবে কৃষি, খাদ্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে। কৃষি মৌসুমে কৃষি শ্রমিক সঙ্কটের কথাও সুবিধিত। সরকারের ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্প অত্যন্ত বাস্তবধর্মী ও গণমুখী। মূলত এর মাধ্যমেই সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থাপনা ও সুষম খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হতে পারে। এ জন্য ব্যয়ও খুব বেশি হবে না। বরং চাই সুষ্ঠু, সমন্বিত ও বহুমুখী পরিকল্পনা। প্রয়োজনে আধুনিক সমবায় প্রথাও সংযুক্ত হতে পারে। সর্বোপরি তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক চাহিদা ও যোগাননির্ভর ডিজিটাল কৃষি ব্যবস্থাপনা এবং বাজার ব্যবস্থা অপরিহার্য। তা হলেই বহুমুখী খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি নিশ্চিত হবে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা। দরিদ্র এ ভিক্ষুকশ্রেণীকে এই কাজে সম্পৃক্ত করা হলে প্রকল্পটি বেগবান হবে বলেই প্রত্যাশা।
×