ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যার পদধ্বনি

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৮ জুলাই ২০১৮

বন্যার পদধ্বনি

ফুঁসে উঠছে নদ-নদী। কোথাও কোথাও তা বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দেশের উত্তর, পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে পানি বাড়ছে প্রতি মুহূর্তে। বন্যার পদধ্বনি শুধু শোনা যায়। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় আগামী কয়েক দিনে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। উত্তরাঞ্চলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চরাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে। বান্দরবানে সাঙ্গু নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, গোয়াইন, পুরনো সুরমা, সোমেশ্বরী, সাঙ্গু ও জদুকাটা নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে এখনও। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি আগামী ক’দিন অব্যাহত থাকতে পারে। অপরদিকে গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। করতোয়ার পানি বাড়তে থাকায় পঞ্চগড়ের অনেক স্থানে ঘরবাড়িতে পানি ঢুকেছে। কুড়িগ্রামে তিস্তা ছাড়াও ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্রসহ সব নদ-নদীর পানি দ্রুত গতিতে বাড়ছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চল। সুনামগঞ্জে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীর পানি ক্রমশ বাড়ছে। জামালপুরের নিচু এলাকায় পানি ঢুকছে। মৌলভীবাজারের নিম্নাঞ্চলের কতিপয় স্থানে বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। নীলফামারীতে পাঁচ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ী ঢলের কারণে বহু স্থানে পানি দ্রুত বাড়ছে। কুড়িগ্রামে তিরিশটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে কাঁচা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙ্গে পড়েছে যাতায়াত ব্যবস্থা। তলিয়ে যাচ্ছে পটল, ঢেঁড়শ, মরিচ শসাসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত। চরাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে। সেখানকার ঘরবাড়ি পানির নিচে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সঙ্কট। ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের লক্ষণ এখনও দেখা না গেলেও অচিরেই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ বহুস্থানে ভেঙ্গে গেছে পাহাড়ী ঢলে। ফলে জানমাল, ফসল, সেচ খালের ডাইক এবং অন্যান্য অবকাঠামোসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো ক্ষতির সম্মুখীন। বন্যা পরবর্তী জরুরী সার্ভিসসমূহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। পরিকল্পনাও নেই। বন্যাজনিত সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তোড়জোড় পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বন্যার পানির তোড়ে সেতু, কালভার্ট ধসে যাওয়া শুধু নয়, সংযোগ সড়কও ভেঙ্গে পড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে কয়েকটি উপজেলায়। ফলে স্কুল বন্ধ রয়েছে। অফিস-আদালতের কাজকর্মও কোথাও কোথাও বন্ধ রয়েছে। দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ, পূর্বাঞ্চলসহ এর নিকটবর্তী ভারতীয় অংশে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় পানি বাড়বে। এমনিতেই মৌসুমিবায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকছে। উত্তরাঞ্চলে হিমালয় পাদদেশে বৃষ্টি একই ধারায় অব্যাহত থাকতে পারে। বৃষ্টি বাড়ার কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড়ী ধসের ঘটনা আরও ঘটতে পারে। সারাদেশে কী পরিমাণ মানুষ পানিবন্দী রয়েছে, তার কোন পরিসংখ্যান এখনও মেলেনি। পানিবাহিত রোগ নিরাময়ে স্বাস্থ্য বিভাগের এখনও কোন প্রস্তুতি নেই। জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়ছে। নষ্ট হচ্ছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অবকাঠামো। এখনই পদক্ষেপ নেয়া না হলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। বন্যার প্রকোপে মানুষের মৃত্যু রোধ কঠিন হবে। সারাদেশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই নিরূপণ করা জরুরী। বন্যা সতর্কীকরণের কাজ যাদের তাদের সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগকে এখনই পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারের কাজটিও ত্বরান্বিত করা সঙ্গত।
×