ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের সমাবেশ

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৮ জুলাই ২০১৮

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী চাকরিকে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল ও প্রিলিমিনারি থেকে তা কার্যকরসহ ৯ দফা দাবিতে এবার সোচ্চার মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। শনিবার রাজধানীতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এক সমাবেশে থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে যে কোন ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তারা অভিযোগ করেছেন, সরকার যখন কোটা ব্যবস্থা নিয়ে একটি যৌক্তিক পরিণতির দিকে এগুচ্ছে তখন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে স্বাধীনতাবিরোধীরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করছে। ‘কোটা সংস্কার চাই’ নামের ফেসবুক এ্যাকাউন্টে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অশ্লীল ভাষায় কটূক্তি এমনকি প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। এদিকে কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে ফেসবুকে উস্কানিমূলক স্ট্যাটাস দেয়া ও ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে লক্ষ্মীপুরে জুবায়ের হোসেন (২২) নামে এক শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কোটা সংস্কার ইস্যুতে চলমান জটিলতার মধ্যে শনিবার সকালে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সংগঠন আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আয়োজন করেছিল প্রতিবাদ সমাবেশের। সংগঠনের সভাপতি মোঃ সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম জামাল উদ্দিন, শহীদ সংসদ সদস্য নুরুল হক হাওলাদারের কন্যা ও সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য জোবায়দা হক অজন্তা, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান জাতীয় সমন্বয় পরিষদের সভাপতি মোঃ আজিজুল হাসান (এমরান), বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানা, সংগঠনের সহ-সভাপতি ওমর ফারুক সাগর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী এনামুল হক, কেন্দ্রীয় সদস্য জোবায়ের আহমেদ, লামিয়া খানম, দিলরুবা লাকী, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান প্রজন্ম পরিষদের আহ্বায়ক আশিকুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি কেএম আবদুল্লাহ সোহাগ প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, সরকারের ঘোষণা অনুসারে কোটা ব্যবস্থা একটি যৌক্তিক পরিণতির দিকে এগুচ্ছে। কিন্তু এতে দেশবিরোধী চক্রান্তকারীদের গরম ভাতে ছাই পড়েছে। তাই তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সাধারণ ছাত্র নামধারী কিছু দিকভ্রান্ত যুবককে দিয়ে দেশে নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পরও যারা তাকে হত্যার হুমকি দেয়, তাকে নিয়ে নোংরা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে, তারা আসলে কারা? তাদের আসল উদ্দেশ্যই বা কি? এদের গ্রেফতার করে অভিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং এদের পেছনে কারা ইন্ধন দিচ্ছে তাদের খঁজে বের করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক দেশ গড়ার স্বার্থে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার কোন বিকল্প নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার আহ্বান জানিয়ে তারা এই কোটা সঠিক বাস্তবায়নে একটি কমিশন গঠনসহ ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন। অধ্যাপক কে এম জামাল উদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গণতান্ত্রিক সরকার থাকায় আন্দোলন করার অধিকার সবারই রয়েছে, কিন্তু তথাকথিত কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে মুক্তিযোদ্ধাদের হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। আন্দোলনে মুক্তিযোদ্ধাদের কটূক্তি করা হয়েছে। আন্দোলনে অনেকে প্লেকার্ড ঝুলিয়েছে ‘আমি রাজাকারের সন্তান’ এগুলোর বিচার হওয়া উচিত। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে বর্তমান প্রজন্মের কাছে আমরা এই রকম আচরণ আশা করিনি। সংগঠনের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বহাল না করা হলে ৭১-এর পরাজিত শক্তি ডুগডুগি বাজাবে। কারণ তারা দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান-অপদস্থ করতে চেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার ফলে তারা আজ উল্লাসে মেতে উঠেছে। বক্তারা আরো বলেন, ৭৫ সালে জাতির পিতা হত্যার পর থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র হয়েছে। পরবর্তীতে ২০০১ সালের পর মুক্তিযোদ্ধা কোটা আবারও ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের পর ২৯ বছর কোটায় কোন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের চাকরি হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তী ২৯ বছর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নিষ্পেষিত হয়েছে। কোটা সংস্কার বা বাতিল করার আগে এই ২৯ বছরের হিসাব দিতে হবে। এ ছাড়া এই ৩০ শতাংশ কোটা তাদের আত্মমর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে জড়িত। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের দিকে তাকিয়ে হলেও এই কোটা বহাল রাখা জরুরী। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা একটি অসাম্প্রদায়িক জঙ্গীমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন স্বাধীনতা বিরোধীমুক্ত করতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন, দাবির মধ্যে আছে- জাতির পিতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তিকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন করতে হবে, ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রেখে তা বাস্তবায়নে কমিশন গঠন করে প্রিলিমিনারি থেকে কোটা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চলমান সকল নিয়োগ কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কোটার শূন্য পদ সংরক্ষণ করে বিশেষ নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। দাবির মধ্যে আরও আছে ১৯৭২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় শূন্য পদগুলোতে চলতি বছরেই নিয়োগ দিতে হবে, বীর মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন প্রবাসী সরকারের প্রথম সেনাবাহিনী, তাই তাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে পেনশন, বোনাস, রেশনসহ সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে স্বাধীনতাবিরোধীদের সম্পদ বাজেয়াফতসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের উত্তরসূরীদের সকল চাকরিতে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে, স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে হবে, ঢাবি ভিসির বাসভবনে হামলাসহ দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী স্বঘোষিত রাজাকারদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ অন্য সকলের জন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা তুলে দিতে হবে। ফেসবুকে অপপ্রচার, শিবির কর্মী গ্রেফতার ॥ লক্ষ্মীপুরের রায়পুুর থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানিয়েয়েছেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে ফেসবুকে উস্কানিমূলক স্ট্যাটাস দেয়া ও ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে জেলার রায়পুরে জুবায়ের হোসেন (২২) নামে এক শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার সকালে রায়পুর উপজেলার মিতালী বাজার কামাল টেলিকম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে রায়পুর থানার এসআই মোতাহের হোসেন বাদী হয়ে থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। জুবায়ের হোসেন রায়পুর উপজেলার চরআবাবিল ইউনিয়নের টাংঙ্গুয়ার চর এলাকার জামায়াতের আমিন আবদুল কাদেরের ছেলে ও কলেজ শাখার শিবির কর্মী। রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম আজিজুর রহমান মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যুবায়ের হোসেন কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন রকম উস্কানিমূলক স্ট্যাটাস দিয়ে আসছে। এ ঘটনায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মিতালী বাজার এলাকা থেকে শিবির কর্মী জুবায়ের হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়।
×