ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুইডেনের হার ০-২ গোলে

২৮ বছর পর আবারও সেমিতে ইংল্যান্ড

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৮ জুলাই ২০১৮

২৮ বছর পর আবারও সেমিতে ইংল্যান্ড

রুমেল খান ॥ শেষ চারে খেলার সৌভাগ্য হয়েছিল সেই ২৮ বছর আগে। এরপর পাঁচবার খেলেও সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি ‘ফুটবলের জনক’ খ্যাত ইংল্যান্ড। তবে এবার পেরেছে। শনিবার চলমান রাশিয়া বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের তৃতীয় খেলায় তারা ২-০ গোলের অনায়াস জয় কুড়িয়ে নেয় সুইডেনের বিরুদ্ধে। সামারার কসমস এ্যারানায় অনুষ্ঠিত এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচের প্রথমার্ধেই ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল বিজয়ী দল। একদিকে একবারের (১৯৬৬) বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, অন্যদিকে একবারের বিশ্বকাপ রানার্সআপ (১৯৫৮) সুইডেন। প্রথম দলের ফিফা র‌্যাঙ্কিং যেখানে ১২, সেখানে দ্বিতীয় দলের র‌্যাঙ্কিং তার দ্বিগুণ, অর্থাৎ ২৪। তারপরও আগের ২৩ বার মুখোমুখি লড়াইয়ে বিস্ময়করভাবে জয়-হার-ড্র সবকিছুতেই সমতা ছিল দুদলের (৭-৭-৯)। একই অবস্থা ছিল ফিফা বিশ্বকাপের লড়াইয়েও। দুবারের মোকাবেলায় দুবারই ড্র করেছিল ‘দ্য থ্রি লায়ন্স’ খ্যাত ইংল্যান্ড এবং ‘দ্য ব্লু ইয়েলো’ খ্যাত সুইডেন (২০০২ বিশ্বকাপে ১-১ এবং ২০০৬ বিশ্বকাপে ২-২। দুটি খেলাই অনুষ্ঠিত হয়েছিল গ্রুপ পর্বে)। সবকিছুতেই সমতা থাকার ব্যাপারটি অবশেষে শনিবার ভেঙ্গে দিল ইংলিশরা, সুইডিশদের হারিয়ে। এবারের ফিফা বিশ্বকাপে দুদলই পোড় খাওয়া। দুদলই গ্রুপ পর্বে একটি করে ম্যাচ হেরেছে। সবকিছু মিলিয়ে দুদলের শনিবারের লড়াইটাও যে হাড্ডাহাড্ডি, এমন সম্ভাবনাই সত্যি হেেছ শেষ পর্যন্ত। ম্যাচে দুদলই খেলেছে গতিশীল এবং লম্বা পাসের ফুটবল। তবে মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ ছিল ইংল্যান্ডেরই দখলে। সুইডেন খেলে কাউন্টার এ্যাটাক নির্ভর খেলা। তবে তাদের একাধিক আক্রমণ বেশ দক্ষতার সঙ্গে রুখে দেয় ইংলিশ ডিফেন্স। তাছাড়া তাদের গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড একাই একাধিক নিশ্চিত গোল বাঁচিয়ে দেন স্বীয় দক্ষতায়। তবে বল নিয়ন্ত্রণে এবং আক্রমণের নিরিখে সুস্পষ্ট প্রাধান্য ছিল ইংল্যান্ডেরই। বেশ কিছু বিপজ্জনক আক্রমণ করে তারা। ভাগ্য সহায় না হওয়াতে সেগুলো গোল হয়নি। নইলে আরও বড় ব্যবধানেও জিততে পারত তারা। ম্যাচের ৩০ মিনিটে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। কর্নার পায় তারা। মিডফিল্ডার এ্যাশলে ইয়ংয়ের কর্নারের বল সুইডেনের ডিফেন্সকে ফাঁকি দিয়ে হেড করে জালে পাঠিয়ে দলকে আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন ইংল্যান্ডের হ্যারি ম্যাগুইরে। লিচেস্টোর সিটিতে খেলা ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী এবং ২৫ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডারের এটাই ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক গোল (দশম ম্যাচে)। এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড (১-০)। এই স্কোরলাইনেই বিরতিতে যায় উভয় দল। বিরতির পরও সমানতালে খেলতে থাকে ইংল্যান্ড। কয়েকটি গোল-প্রচেষ্টার ব্যর্থতার পর আবারও তারা সফল হয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করে ৫৮ মিনিটে। মিডফিল্ডার জেসি লিনগার্ড উঁচু ক্রস ফেলেন সুইডেনের বক্সের বা প্রান্তের কোনায়। সেখানে অরক্ষিত দাঁড়িয়ে থাকা ডেলে আলী চমৎকারভাবে হেড করে পরাস্ত করেন সুইডিশ গোলরক্ষক রবিন ওলেসেনকে (২-০)। ইংলিশ ক্লাব মিল্টন কিনেস ডোন্সে খেলা ৬ ফুট ২ ইঞ্চির অধিকারী এবং ২২ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারের এটি ছিল এই বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত প্রথম গোল এবং ক্যারিয়ারের তৃতীয় গোল (২৮ ম্যাচে)। দুই গোল হজম করে মরিয়া সুইডেন একের পর এক আক্রমণ শাণায়। কিন্তু তাদের সব প্রচেষ্টাই মাঠে মারা যায়। শেষ পর্যন্ত ডাচ্ রেফারি বিয়ন কুইপার্স খেলা শেষের বাঁশি বাজালে ২৮ বছর পর আবারও বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যাবার অনাবিল চিত্তসুখ নিয়ে মাঠ ছাড়ে গ্যারেথ সাউথগেটের শিষ্যরা। পক্ষান্তরে ১৯৯৪ বিশ্বকাপের পর (সেবার তৃতীয় হয়েছিল তারা) আবারও সেমিতে যাবার সুযোগ হারিয়ে ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে জ্যান এ্যান্ডারসনের শিষ্যরা।
×