ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তৃণমূল নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর উদাত্ত আহ্বান;###;কারাগারে অসুস্থতার কথা বলে আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন না খালেদা জিয়া। কারণ তিনি জানেন, তার দুর্নীতির কথা জানিয়ে সাক্ষী দেয়ার জন্য এফবিআই সদস্যরা অপেক্ষায় আছেন

নৌকার জয় চাই ॥ আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় না আসলে উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৮ জুলাই ২০১৮

নৌকার জয় চাই ॥ আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় না আসলে উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের দ্বন্দ্ব-কোন্দল দ্রুত নিরসন করে একতাবদ্ধভাবে এখন থেকেই জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়ার জন্য দলের তৃণমূল নেতাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে দেশবাসী ও দলের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামী নির্বাচনে নৌকাকে জয়ী করতে হবে। আগামীতে আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় না আসে তাহলে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার শুরু করেছি তা বন্ধ হয়ে যাবে, আবারও আক্রমণ হবে। বাংলাদেশকে তারা আদর্শচ্যুত করবে, দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাবে, উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই মনে রাখতে হবেÑ নৌকা যেন না হারে, একটি সিটও যেন না হারে। দলকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য মন্ত্রী-এমপি-নেতাদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষের কাছে বারবার নৌকায় ভোট চাইতে হবে। বারবার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে হবে। মানুষ কিন্তু ভুলে যায় এজন্য আমাদের উন্নয়ন-সফলতাগুলো দেশের মানুষের কাছে বার বার তুলে ধরতে হবে, তাদের বোঝাতে হবে, তাদের কাছে বারবার যেতে হবে; যাতে তারা অতীতের মতো আবার আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। তিনি বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতা, মানুষ পুড়িয়ে হত্যার কথা তুলে ধরে বলেন, এ ধরনের অরাজকতা যেন না হয়, সেটাই চাই। যারা আবারও এসব করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধেই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আদালতে গেলেই খালেদা জিয়া আবারও ধরা খাবেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারাগারে অসুস্থতার কথা বলে উনি (খালেদা জিয়া) আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন না। তিনি জানেন, আদালতে গেলেই ধরা খাবেন। কারণ, আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই সদস্যরা তার দুর্নীতির কথা জানিয়ে সাক্ষী দেয়ার জন্য বসে আছেন। তারিখ পেলেই চলে আসবেন। শনিবার দুপুরে গণভবনে আওয়ামী লীগের তৃতীয় পর্যায়ের বিশেষ বর্ধিত সভায় সূচনা ও সমাপনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে গণমানুষের দল। একমাত্র আওয়ামী লীগ হচ্ছে রাজনৈতিক দল যারা দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে, তাদের কল্যাণের জন্য কাজ করে। আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আর কেউই করতে পারেনি, করতে পারবে না। কারণ, বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী, দেশের স্বাধীনতায় তারা বিশ্বাস করে না। তারা কখনও মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করবে না। রাজনৈতিক জোট অটুট রাখার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, আমরা জোট করেছিলাম, অবশ্যই আমাদের জোট বজায় রাখতে হবে। যেন সবাই আমাদের বিরুদ্ধে চলে না যায় সেজন্য। গণভবনে আওয়ামী লীগের তৃতীয় পর্যায়ের বিশেষ বর্ধিত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ ছাড়াও তৃতীয় পর্যায়ের এই বর্ধিত সভায় ঢাকা, খুলনা, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের সকল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, ওয়ার্ড পর্যায়ের দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকগণ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়িত করেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর চার বিভাগ থেকে চারজন তৃণমূল নেতা বক্তব্য রাখেন। তারা হলেন- কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দবির উদ্দিন আহমেদ, লালমনিরহাট জেলার তিনবিঘা করিডরের ধরগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার গ-া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সনজু মিয়া, বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাশ ও শরিয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মানিক সরদার। উদ্বোধনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের মানুষের উন্নতি হয়। গ্রামের অর্থনীতি আজ উন্নত হয়েছে এবং জনগণের আয় বাড়ায় তারা সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারছে, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ভোগ করতে পারছে: কথাগুলো সবাইকে বলতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ব্যতীত কোন রাজনৈতিক দলই দেশের দরিদ্র মেহেনতী জনগণের জন্য কিছু করেনি। দেশের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবাকে নিয়ে যাওয়ায় তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের একটা মানুষও আর ক্ষুধায় কষ্ট পাবে না, একটা মানুষও আর গৃহহীন থাকবে না, সকলেই প্রয়োজনীয় শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা পাবে। দল এবং সহযোগী সংগঠনের অভ্যন্তরীণ মতভেদ এবং দ্বন্দ্ব এখনই মিটিয়ে ফেলার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে আগামীর নির্বাচন অতীতের যেকোন সময়ের চাইতে কঠিন হবে। তাই কোন আসন নিয়ে অমনোযোগী হবার সুযোগ নেই, কোন আসন নিয়ে অমনোযোগী হবার মানেই হবে সে আসনে পরাজয়; যার কারণে আমাদের সরকার গঠনের সুযোগ ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, মনে রাখবেন, আওয়ামী লীগ যদি আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে তাহলে এই বিচার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তারা (বিএনপি-জামায়াত) আবার মানুষের ওপর, তাদের জানমালের ওপর আক্রমণ শুরু করে দেবে, দারিদ্র্য বাড়িয়ে শিক্ষার হার কমিয়ে ফেলবে, সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের কর্মসূচী, উন্নয়ন কর্মকা- সব বন্ধ করে দেবে, অতীতে যেমনটি করেছিল। কাজেই আপনাদের শুধু আওয়ামী লীগকেই নয়, এর সহযোগী সংগঠনকেও শক্তিশালী করে তুলতে হবে। দেশে আওয়ামী লীগের সব ইউনিটের দ্বন্দ্ব-কোন্দল দ্রুত নিরসন করে একতাবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনে দলের জন্য কাজ করতে তৃণমূল নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব দ্বন্দ্ব নিরসন করে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামত নেয়া হবে। তারপরও যাকে নৌকা প্রতীক দেয়া হবে, তার পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে একটা ভাব হয়ে যায়, সব সিটে তো আমরা জিতব। ওই একটা সিটে না জিতলে কী হবে? মনে রাখতে হবে- একটা সিট হারালে আমরা সরকার গঠন করতে পারব না। এই কথা মনে রেখে সকলকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ করা মানে নিজের উন্নয়ন করা নয়, দেশ ও দশের জন্য কাজ করাই এই দলের মূল উদ্দেশ্য। বঙ্গবন্ধু দলকে সুসংগঠিত করার জন্য মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে দলের হাল ধরেছিলেন। এই দলের জন্য কাজ করতে হলে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের একটি মানুষও অশিক্ষিত থাকবে না। না খেয়ে থাকবে না। মানুষ নৌকায় ভোট দিয়েছে, সুফল পেয়েছে। আগামীতেও নৌকায় ভোট পেতে জনগণের দোরগোড়ায় যেতে হবে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করতে সরকারের উন্নয়ন-সফলতাগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য তৃণমূল নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষকে বারবার না বললে মানুষ তা মনে রাখে না। তাই উন্নয়নের তথ্যগুলো জনগণের কাছে বারবার তুলে ধরতে হবে। বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় রাখতে হলে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, ক্ষমতা হচ্ছে জনগণের সেবা করা। ক্ষমতা হচ্ছে জনগণের সেবা করার জন্য। মানুষের কল্যাণে, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কাজ করার জন্য। আমাদের লক্ষ্য মানুষের কল্যাণ। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ প্রাচীন সংগঠন। জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে আমাদের রাজনীতি করতে হবে। তিনি (বঙ্গবন্ধু) যত আন্দোলন করেছেন, সবসময় তাঁর ভেতরে একটা লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। তাই এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই আওয়ামী লীগের প্রধান উদ্দেশ্য। বর্তমান সরকার সাড়ে ৯ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে সম্মান পাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা কখনই এদেশের উন্নয়ন চায়নি। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাজাতে দেননি দেশে। কিন্তু এই ভাষণ আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বের কোন নেতার ভাষণ এতবার বাজানো হয়নি। এখনও এ ভাষণ আমাদের শিহরিত করে তোলে, অনুপ্রাণিত করে। খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমখানার জন্য টাকা এনে সেই টাকা কীভাবে লুটপাট করা হলো আপনারা তা জানেন। বিএনপির এত জাঁদরেল আইনজীবী তারা কী করল, তারা তো আদালতে প্রমাণ করতে পারল না যে- খালেদা জিয়া দুর্নীতি করেননি। এই মামলা ১০ বছর ধরে চলেছে। এখানে আমার কী করার আছে। মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় খালেদা জিয়ার জেল হয়েছে। এর আগেও তিনি ঠিকমতো কোর্টে হাজিরা দেননি। তার সন্তানও দুর্নীতির মামলায় দ-প্রাপ্ত আসামি। ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা সাড়ে তিন হাজারের মতো মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। গাড়ি পুড়িয়েছে। দুর্নীতি লুটপাট করেছে। অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছে। আবারও কেউ এ ধরনের কর্মকা- করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আওয়ামী লীগ গণমানুষের সংগঠন দাবি করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ গ্রামের মানুষের সংগঠন। গণমানুষের সংগঠন। আমরা প্রত্যেকটা গ্রামকে নগর হিসেবে গড়ে তুলে গ্রামের মানুষগুলো যেন নাগরিক সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করব। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। গ্রামের মানুষ পর্যন্ত এর সুবিধা ভোগ করবে। হাজিরা দিলেই ধরা খাবেন খালেদা জিয়া ॥ প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের এক পর্যায়ে কারাবন্দী বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া অসুস্থতার ভান করছেন বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তাঁর দুর্নীতির আরও কাহিনী আছে। অসুস্থতার ভান করে কোর্টে হাজিরা দেন না। হাজিরা দিলেই ধরা খাবেন। সেজন্য হাজিরা দেন না, এটাই হলো বাস্তবতা। তিনি বলেন, অসুখ তো তাঁর আছেই। হার্টের অপারেশন করে আসছে, অনেক কিছু করে আসছে। ক্ষমতায় থাকতে আমেরিকায় যেয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন, সৌদিতে করিয়েছেন, আমরা তা দেখেছি। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, কিন্তু কোর্টে হাজিরা দিতে পারবেন না, এমন তো অবস্থা না। কিন্তু সেটাই করছেন। কেন করছেন এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আমেরিকার এফবিআইয়ের লোকেরা বসে আছে সাক্ষী দেয়ার জন্য। সে যে দুর্নীতি করেছেন, সে সাক্ষী দেয়ার জন্য বসে আছে। তারিখ পেলেই তারা চলে আসবে। তিনি বলেন, শাস্তি হয়েছে, জেলে গেছে। এখানে তো আমাদের কোন দায় নেই। এভাবে কেউ এতিমের টাকা চুরি করে খেতে পারে? এটা কেউ পারে না। অথচ এতিমখানার জন্য টাকা এনে, সেই টাকা কীভাবে নয়-ছয় করেছে; দেশবাসী তা দেখেছে। একটা এতিমকে একটা টাকা দিতে পারল না। তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বিশ্ব সমর্থন অর্জন করেছি। এই সমর্থন নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট নিয়ে বই ॥ ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থার ৪৭টি রিপোর্টের ফাইল থেকে ১৪ খ-ে বই প্রকাশ করার কাজ চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে করা গোয়েন্দা সংস্থার ৪৭টি ফাইল উদ্ধার করা হয়েছে। এই ফাইলগুলোর তথ্যাবলী বই আকারে প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, মাত্র একজন নেতার বিরুদ্ধে ৪৭টি ফাইল হয়েছে। পৃথিবীর কোন দেশের এজন নেতারকে নিয়ে এতো গোয়েন্দা রিপোর্টের কোন নজির আছে বলে আমার জানা নেই। তিনি বলেন, এই ফাইলগুলো রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এসবি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রায় ৪০ হাজার পাতার এই ফাইলগুলো ১৪টি ভলিউমে প্রকাশ করা হবে। ফাইলগুলোর তথ্য প্রকাশের ব্যাপারে তিনি বলেন, এগুলো রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় অবমুক্ত করার আইন রয়েছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অবমুক্ত করার অনুমতি নেয়া হয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দলের নেতাকর্মীদের বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা পড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন জেলায় নেতাকর্মীদের যেসব চিঠি লিখেছেন সেগুলোও আছে এসব ফাইলে। এগুলো প্রকাশ করা হলে বহু তথ্য জানা যাবে। এগুলো প্রকাশের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস, বাংলাদেশের ইতিহাস ও আওয়ামী লীগের ইতিহাস সব জানা যাবে। এগুলো আওয়ামী লীগের জন্য, দেশের জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস। বই প্রকাশের কাজ এগিয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত যেসব ফাইল রয়েছে, ইতোমধ্যে তা ছাপা হয়ে গেছে। বিএনপি আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ দল ॥ স্বাগত বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দুর্নীতিবাজদের দলে রাখতে রাতের অন্ধকারে বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধনের কথা তুলে ধরে বলেন, বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারায় ছিল কেউ দুর্নীতিবাজ হলে কিংবা আদালতের মাধ্যমে সাজা পেলে, তিনি দলের নেতা হতে পারবেন না। কিন্তু তারা সেটা বাতিল করে একজন দ-প্রাপ্ত দুর্নীতিবাজকে দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান করেছেন। এর অর্থ হলো দুর্নীতিবাজ, চোর, সামাজিকভাবে অপরাধী, দেউলিয়া ও উম্মাদ হলেও বিএনপির নেতা হওয়া যাবে! এতেই স্পষ্ট হয় যে, বিএনপি আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ, দেউলিয়া, অপরাধীদের দল। প্রার্থিতা নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা করলে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দলের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারে না, পারবেও না। খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচনেও বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদের সঙ্গে কোনদিন সংলাপ করা যায়? এ সময় বিশাল প্যান্ডেলে উপস্থিত হাজার হাজার নেতা ‘না, না’ বলে স্লোগান দেন।
×