ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২-১ গোলের শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে সেমিতে বেলজিয়াম

ব্রাজিলেরও স্বপ্নভঙ্গ

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ৭ জুলাই ২০১৮

ব্রাজিলেরও স্বপ্নভঙ্গ

রুমেল খান ॥ বিশ্বকাপ ফুটবলে আগের ২০ আসরে শিরোপা জিতেছে আটটি দেশ। রাশিয়ায় চলমান বিশ্বকাপের একবিংশ আসরে এই আট দেশের সাতটিই অংশ নিয়েছে। কিন্তু টিকে আছে মাত্র দুটি। এর আগে একে একে যথাক্রমে বিদায় নিয়েছিল জার্মানি, আর্জেন্টিনা, স্পেন এবং উরুগুয়ে। শুক্রবার রাতে এই তালিকায় যোগ হলো আরেকটি নাম ... হট ফেভারিট ব্রাজিল। কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় এই ‘হাইভোল্টেজ’ ম্যাচে ব্রাজিলকে ২-১ গোলে হারিয়ে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর দ্বিতীয়বারের মতো সেমিফাইনালে নাম লেখাল বেলজিয়াম (খেলার প্রথমার্ধে বিজয়ী দল এগিয়ে ছিল ২-০ গোলে)। আগামী ১০ জুলাই সেইন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত প্রথম সেমিফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে তারা। খেলার ৮ মিনিট কর্নার পায় ব্রাজিল। বেলজিয়ামের বক্সের ভেতর আসা উড়ন্ত বলে ঠিকমতো হাঁটু ছোঁয়াতে পারেননি ব্রাজিল অধিনায়ক থিয়াগো সিলভা। তারপরও বলটি সাইডপোস্টে লাগে। ফেরত আসা সেই বল গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়ে কোনমতে রক্ষা করেন। ১৩ মিনিটে কর্নার পায় বেলজিয়াম। ব্রাজিলের বক্সের ভেতর কর্নারের উড়ন্ত বলে হেড নিতে লাফিয়ে ওঠেন ভিনসেন্ট কম্পানি। কিন্তু বলের নাগাল পাননি ম্যানচেস্টার সিটির এই বেলজিয়ান ডিফেন্ডার। সেই বল গিয়ে পড়ে লাফিয়ে ওঠা ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ৩৩ বছর বয়সী ফার্নান্দো লুইজ রোজার কনুইয়ের উপরিভাগে। সেই বল কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঢুকে যায় জালে। আত্মঘাতী গোল (চলতি বিশ^কাপের একাদশতম)! এগিয়ে যায় ১৯৮৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্ট বেলজিয়াম (১-০)। মজার ব্যাপার- কম্পানির সঙ্গে তিনিও খেলে থাকেন ইংলিশ ক্লাব ম্যানসিটিতে! ৩১ মিনিটে পাল্টা আক্রমণ থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করে ব্রাজিল শিবিরকে হতভম্ব করে দেয় ‘দ্য রেড ডেভিলস্’ খ্যাত এবং ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের তৃতীয় স্থানে থাকা বেলজিয়াম। মিডফিল্ডার মারৌয়ানি ফেলানি হেড করে বলদেন সতীর্থ তারকা ফরোয়ার্ড রোমেলু লুকাকুকে। চমৎকার ড্রিবলিং করে একাধিক ব্রাজিলিয়ান মার্কারকে ছিটকে ফেলে মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে থ্রু পাস বাড়ান আরেক সতীর্থ কেভিন ডি ব্রুইনের উদ্দেশ্য। ডি-বক্সের ঠিক বাইরে থেকে চলন্ত বলে ডান পায়ের অসাধারণ বুলেট গতির শট নেন ২৭ বছর বয়সী ডি ব্রুইন। প্রাণপণে ঝাঁপিয়ে পড়েও সেই বল আটকাতে পারেননি ব্রাজিল গোলরক্ষক এ্যালিসন বেকার (২-০)। আবারও উল্লাসের উপলক্ষ খুঁজে পায় বেলজিয়াম। আরও মজার ব্যাপার গোলদাতা ব্রুইনও খেলে থাকেন ম্যানসিটির হয়ে! এটি ছিল তার এবারের বিশ^কাপে ব্যক্তিগত প্রথম এবং জাতীয় দলের জার্সিতে পঞ্চদশ গোল (৬৬তম ম্যাচে)। একসময় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় বেলিজিয়ান দল। তবে ৭৬ মিনিটে ব্যবধান কমিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলে ব্রাজিল। কুটিনহো ক্রস ফেলেন বেলজিয়ামের বক্সের ভেতর। সেই বলে মাথা ছুঁইয়ে বল জালে পাঠান ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার রেনাটো অগাস্টো (১-২)। আরেকটি গোলের আশায় মরিয়া ব্রাজিল ম্যাচের শেষ দিকে বিপজ্জনকভাবে বেশ কটি আক্রমণ শাণায়। কিছু পেনাল্টির আবেদনও করে। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি কোনবারই। রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজালে দীর্ঘ ৩২ বছর পর আবারও সেমিফাইনাল খেলার আনন্দে মেতে ওঠে বেলজিয়াম দল। পুরো ম্যাচে বেলজিয়ামের ২৬ বছর গোলরক্ষক থিয়াবাউট কারটৌয়িসের নৈপুণ্য ছিল অসাধারণ। কেননা তিনি কমপক্ষে পাঁচটি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন। গোল পরিশোধে বেলজিয়ামের গোলমুখে বৃষ্টির মতো বার বার হানা দিয়েছে ব্রাজিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সফল হতে পারেনি। কোয়ার্টার ফাইনালের এই ম্যাচটিকে অনেকে ফাইনালের আগে ‘ফাইনাল’ হিসেবে আখ্যায়িত করছিলেন। কাজানের কাজান অ্যারানায় ম্যাচটি জিততে মুখিয়ে ছিল দু’দলই। কাজান এ্যারানা পরাশক্তিদের জন্য এবার মরণফাঁদ। এই মাঠেই গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে হেরে বিদায় নেয় গত আসরের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। এই মাঠেই শেষ ষোলোতে ফ্রান্সের কাছে হেরে দেশে ফিরতে হয়েছে গত আসরের রানার্সআপ আর্জেন্টিনাকে। আর এবার একই ভেন্যুতে বিদায়ঘণ্টা বেজে গেল পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ‘সেলেসাও’ খ্যাত এবং ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বরে থাকা ব্রাজিলের। এ নিয়ে টানা সাতটি বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেললো ব্রাজিল। এ নিয়ে তিন বার বিদায় নিল। আগের দু’বার নিয়েছিল ২০০৬ সালে ফ্রান্স ও ২০১০ সালে হল্যান্ডের কাছে হেরে। এ নিয়ে সবশেষ চারটি বিশ্বকাপেই ইউরোপিয়ান দলের কাছে হেরে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করলো পেলের দেশ (২০১৪ আসরে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে)। এ পর্যন্ত ব্রাজিল-বেলজিয়াম মুখোমুখি হয়েছে পাঁচবার। তাতে ব্রাজিলের তিন জয়ের বিপরীতে বেলজিয়ামের জয় দুটিতে। বিশ্বকাপে এর আগে একবারের দেখায় জিতেছিল সাম্বা ছন্দের দেশ। ২০০২ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে শেষ ষোলোতে বেলজিয়ামকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল লুই ফিলিপ সোলারির দল। দুই হলুদ কার্ডের কারণে কোয়ার্টারের ম্যাচে খেলতে পারেননি ব্রাজিলের প্রাণভোমরা কাসেমিরো। থাইয়ের ইনজুরি কাটিয়ে ডগলাস কোস্টা এবং পিঠের চোট কাটিয়ে দলে ফেরেন মার্সেলো। তারকা ফরোয়ার্ড নেইমার দু-একটি সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি। মূলত তিনি ছিলেন বোতলবন্দী। এই ম্যাচে তার ‘ডাইভিং প্রচেষ্টা’ খুব একটা কাজে দেয়নি। কেননা সার্বিয়ার রেফারি মিলোদাদ মাজিচ ছিলেন কড়া ও সতর্ক। নেইমারের ‘অভিনয়’-এ বিভ্রান্ত হননি তিনি! ম্যাচে হেরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ব্রাজিল এবং জিতে অনাবিল চিত্তসুখে মাঠ প্রদক্ষিণ করে বেলজিয়াম দল।
×