ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সতর্কতা অবলম্বনে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ১৯ দফা নির্দেশনা

থানা চেকপোস্টসহ সব পুলিশ স্থাপনায় জঙ্গী হামলার আশঙ্কা!

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৭ জুলাই ২০১৮

  থানা চেকপোস্টসহ সব পুলিশ স্থাপনায় জঙ্গী হামলার আশঙ্কা!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ থানা, চেকপোস্টসহ পুলিশ স্থাপনায় জঙ্গী হামলার আশঙ্কা রয়েছে। গোয়েন্দাদের সম্প্রতি এমন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সতর্ক করে ১৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। পুলিশ স্থাপনাসমূহে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হেডকোয়ার্টার্সের এ্যাডিশনাল ডিআইজি (ইন্টেলিজেন্স এ্যান্ড স্পেশাল এ্যাফেয়ার্স) মোঃ মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়। সূত্র জানায়, নির্দেশনাটি এ্যাডিশনাল আইজি, র‌্যাব মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, পুলিশ কমিশনারসহ উর্ধতনদের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, পুলিশের স্থাপনার ওপর নাশকতা হামলার আশঙ্কা রয়েছে। সম্ভাব্য নাশকতা রোধকল্পে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সসহ বাংলাদেশ পুলিশের সকল স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য নিম্নোক্ত নির্দেশাবলী প্রতিপালনে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। তবে এ বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে একাধিক কর্মকর্তার বক্তব্য চাওয়া হলে কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। চিঠিতে উল্লেখিত নির্দেশনাসমূহ হচ্ছে ॥ ১। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ডিএমপি, এসবি, সিআইডি, র‌্যাব ফোর্সেস হেডকোয়ার্টার্সসহ সব পুলিশ স্থাপনায় স্ক্যানিং করে গাড়ি প্রবেশে ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রবেশের পূর্বে সেই গাড়ি ও ব্যক্তিগত সামগ্রী তল্লাশি করতে হবে। আগতদের পরিচয় লিপিবদ্ধ করতে হবে। ২। থানাসহ স্থাপনাসমূহে সাহায্যকারী, দর্শনার্থীর নাম-ঠিকানা ও তাদের আগমনের উদ্দেশ্য রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে। ৩। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদর দফতর, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, অস্ত্রাগারে ও পুলিশ লাইন্সের প্রবেশপথে নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র পুলিশ ও তল্লাশির জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হবে। ৪। ক্যাম্প ও ফোর্সের নিরাপত্তা বিবেচনায় নিয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ৫। থানা কিংবা স্থাপনার প্রধান গেট ঝুঁকিপূর্ণ থাকলে সেগুলোকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করে নির্মাণ অথবা মেরামত করতে হবে। ৬। ঝুঁকিপূর্ণ পুলিশ স্থাপনাসমূহের সীমানা প্রাচীর উঁচু করতে হবে অথবা কাঁটাতারের বেড়া দিতে হবে। ৭। রাতে থানা ও পুলিশ ফাঁড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত লাইট লাগাতে হবে। ৮। থানাসহ পুলিশ ইউনিটসমূহে প্রধান গেট বন্ধ রেখে পকেট গেট খোলা রাখতে হবে। কেউ হেঁটে বা গাড়িতে প্রবেশ করতে চাইলে তার নাম-পরিচয় নিয়ে তল্লাশি করে প্রবেশ করাতে হবে। ৯। নম্বরবিহীন গাড়ি ও মোটরসাইকেল পুলিশ স্থাপনাসমূহে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। ১০। বরাদ্দ অনুযায়ী ইউনিট প্রধানদের ভেহিকল সার্চিং মিরর, হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টর, টর্চ, হ্যালোজেন লাইট ও সিকিউরিটি লাইট নিশ্চিত করতে হবে। ১১। সকল ইউনিট প্রধানকে নিরাপত্তার বিষয়ে নিয়মিত ফোর্সেস ব্রিফিং ও দায়িত্ব পালনে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ১২। অফিস প্রধানগণ সময়ে অসময়ে আকস্মিকভাবে তার অধীন ইউনিটসমূহ পরিদর্শন করবেন। কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন। ১৩। ব্যক্তিগত দেহরক্ষী, অধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ পেশাগত জ্ঞান, অস্ত্র চালানোর সক্ষমতা এবং নিরাপত্তা সচেতনতা সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চিত হবেন। ১৪। সকল অফিসার ও ফোর্সকে মাঝে মাঝে অস্ত্র খোলা, জোড়া লাগানো, অস্ত্রের নিরাপত্তা, অস্ত্র চালানোর কৌশল রপ্ত করবেন। ইউনিট প্রধানগণ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন ও উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করবেন। ১৫। বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটে অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইউনিট প্রধানগণ পিআরবিতে বর্ণিত বিধিবিধানের কোন ব্যত্যয় ব্যতীত পরিপূর্ণভাবে পালন করবেন। ১৬। পুলিশ সুপার ও তদূর্ধ কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন পুলিশ ইউনিট নির্ধারিত/ আকস্মিক পরিদর্শনে গেলে পুলিশ ইউনিটসমূহের নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই পরিদর্শন করবেন। পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন। ১৭। এসিআর মূল্যায়নকারী/প্রতি স্বাক্ষরকারী কর্মকর্তারা মূল্যায়নধীন পুলিশ কর্মকর্তার নিরাপত্তা সচেতনতার বিষয়টি বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন। ১৮। পুলিশ ইউনিটসমূহের নির্দেশাবলী প্রতিপালনের ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যগণ পেশাগত কারণে কঠোর ও বিনয়ী হবেন এবং কোনক্রমেই যাতে অহেতুক হয়রানি না হয়, ইউনিট প্রধানগণ সে বিষয়ে নিশ্চিত করবেন। ১৯। এ সংক্রান্তে ‘বাংলাদেশ পুলিশ সদস্য ও স্থাপনা সংক্রান্ত নিরাপত্তা নির্দেশিকা’ অনুসরণ করতে হবে। নিরাপত্তা নির্দেশিকায় সন্ত্রাসী হামলার সময় দ্রুত ‘কুইক রেসপন্স টিম’ পাঠানো, ২৪ ঘণ্টার স্ট্রাইকিং টিম প্রস্তুত রাখা, ব্যাকআপ সাপোর্ট (এপিবিএন, র‌্যাব, বিজিবি) ইত্যাদি প্রস্তুত রাখার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও পুলিশকে উদ্দেশ করে জারি করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বাসা ও মেস ভাড়া দেয়ার আগে আগতদের যথাযথভাবে পরিচয় নিশ্চিত, বাস-রেলস্টেসন, স্থল, বিমান, নৌবন্দরে নিয়ন্ত্রণ ও আকস্মিক তল্লাশির ব্যবস্থা, স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বিকাশের মতো মোবাইল মানি এ্যাকাউন্ট পরিচালনাকারী এজেন্টদের পরিচয় ও কার্যকর যাচাই-বাছাই এবং নজরদারির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
×