ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ১০ কোটি ডলার অনুদান দিচ্ছে এডিবি

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৭ জুলাই ২০১৮

  রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ১০ কোটি ডলার অনুদান দিচ্ছে এডিবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তা হিসেবে প্রথম ধাপে ১০ কোটি ডলার অনুদান দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। শুক্রবার ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ অনুদান অনুমোদন পায়। সহায়তা প্রকল্পের প্রথম অংশ দিয়ে শরণার্থীদের জন্য মৌলিক অবকাঠামো নির্মাণ ও বিভিন্ন সেবার উন্নয়ন করা হবে। অনুদান সহায়তার ঘোষণা দিলেও এডিবির আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির কোথাও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটির উল্লেখ নেই। এমনকি তারা যে মিয়ানমারের নাগরিক সেটিও কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। যদিও জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা শুরু থেকেই ‘রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক’ এবং তাদের চালানো নিপীড়নকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে আসছে। রোহিঙ্গাদের পরিচয় দিতে গিয়ে এডিবি বলেছে, ‘বাস্তুচ্যুত মানুষ’ (ডিসপ্লেসড পিপল), যারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের কক্সবাজারে প্রবেশ করেছে। এডিবি বলছে, বাস্তুচ্যুত সাত লাখ মানুষ বর্তমানে কক্সবাজার জেলাজুড়ে স্থাপিত ৩২টি ক্যাম্পে বসবাস করছে; যেখানে প্রতিদিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি মোকাবেলা করে খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, পানি, স্যানিটেশনসহ অন্যান্য দরকারি সেবা সরবরাহ করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিপুল মানুষের ব্যবস্থাপনা করতে গিয়ে স্থানীয় অবকাঠামো ও অর্থনীতিকে ব্যাপক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সৃষ্টি হয়েছে মানবিক সঙ্কট। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে, পরিস্থিতির নাটকীয় অবনতির আশঙ্কা আছে। বিজ্ঞপ্তিতে এডিবির প্রধান তাকিহিকো নাকাও বলেন, এডিবির নীতি হচ্ছে সবার আগে মানুষ। তাই উদ্ভূত মানবিক সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা দিতে আমরা বিশ্বব্যাংকসহ অন্য সহযোগীদের সঙ্গে দ্রুত ও নিবিড়ভাবে কাজ করছি। প্রকল্পের প্রথম ধাপে খাদ্যাভাব ও অন্যান্য ঝুঁকি কমাতে অবকাঠামোসহ বিভিন্ন সেবার উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে। এডিবি জানিয়েছে, গত মে মাসে ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলায় এডিবির বার্ষিক বৈঠকে ব্যাংকটির প্রধান তাকিহিকো নাকাওয়ের কাছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অনুদান সহায়তার অনুরোধ জানান। অর্থমন্ত্রীর সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে এডিবি তাদের ‘ইমার্জেন্সি প্রসিডিউরের’ আওতায় অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে এ সংক্রান্ত প্রকল্প তৈরির কাজ শেষ করে। জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ১২ কোটি ডলার ব্যয় হবে। এর দুই কোটি ডলার দেবে বাংলাদেশ সরকার, যা এডিবির তরফে অনুদান সম্পূরক হিসেবে ধরা হয়েছে। আড়াই বছরের মধ্যে এই অর্থ যথাযথভাবে খরচ করতে পারলে আরও ১০ কোটি ডলার অনুদান পাওয়া যাবে। এডিবি জানিয়েছে, অনুদানের প্রথম ধাপের ১০ কোটি ডলার উখিয়া এবং টেকনাফে আশ্রয় নেয়া বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন, দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুত এবং রাস্তা নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত হবে। মৌলিক খাদ্য মজুদ, বণ্টন কেন্দ্র, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জরুরী প্রবেশ সুবিধার উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সড়ক সংস্কার করা হবে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় ও মৌসুমি ঝড়প্রবণ অঞ্চলে দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বাড়াতেও এ প্রকল্প কাজ করবে। এ জন্য আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, ভূমিধস ঠেকাতে সুরক্ষা ব্যারিয়ার ও পয়োনিষ্কাশন নেটওয়ার্ক তৈরি করা হবে। এর আগে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি, পয়োনিষ্কাশন ও সামাজিক সুরক্ষায় বাংলাদেশকে ৪৮ কোটি ডলার সহায়ত দেয়ার কথা জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত মাসে প্রথম কিস্তিতে স্বাস্থ্য খাতের চলমান একটি সহায়ক প্রকল্পের জন্য পাঁচ কোটি ডলার মঞ্জুর করেছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। কক্সবাজারে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা রোহিঙ্গা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, কিশোর বয়সীদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা, জন্মনিয়ন্ত্রণ ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবায় এ অর্থ ব্যয় করা হবে।
×