ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

’১৮ সালে এক বিলিয়ন ডলার অর্জনের টার্গেট ইতোমধ্যে পূরণ

তথ্যপ্রযুক্তিই হবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৭ জুলাই ২০১৮

 তথ্যপ্রযুক্তিই হবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস

ফিরোজ মান্না ॥ তথ্যপ্রযুক্তিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৮ সালে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের টার্গেট ইতোমধ্যে পূরণ হয়ে গেছে। এখন ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। একই সময়ে ২০ লাখের বেশি তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী বা মানবসম্পদ তৈরি করা হবে। এই ২০ লাখ পেশাজীবী জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। এ জন্য সারাদেশে কানেক্টিভিটি তৈরি করা হয়েছে। দেশের গ্রামাঞ্চল থেকেও যেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা কাজ করতে পারেন এমন অবকাঠামো গড়ে তোলার কাজ চলছে। টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছেন। টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশের এমন কোন ইউনিয়ন থাকবে না যেখানে কানেক্টিভিটি যাবে না। এ বছরের মধ্যে সারাদেশ কানেক্টিভিটির আওতায় চলে আসবে। যোগাযোগের মাধ্যম ছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল উন্নয়ন করা সম্ভব হবে না। আমরা ইতোমধ্যে দেশের অনেক অঞ্চলে কানেক্টিভিটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। দেশের সকল ইউনিয়ন কানেক্টিভিটির আওতায় চলে আসবে। এর বাইরে বেসরকারী উদ্যোগেও আইসিটি উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। দেশের সব স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হবে। এই প্রকল্পটি চলমান রয়েছে। এ বছরের মধ্যে প্রকল্পটির অর্ধেক কাজ বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা, আইসিটি বিভাগ মনে করে ভবিষ্যতে তথ্যপ্রযুক্তিই হবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান হাতিয়ার। কারণ ধীরে ধীরে দেশের গার্মেন্টস শিল্প ও বিদেশে কর্মী নিয়োগের বিষয়টি ঝুঁকি পূর্ণ হয়ে উঠছে। কর্মী নিয়োগ তো এখন সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গার্মেন্টস শিল্পের পরিস্থিতিও একই দিকে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তিই হবে একমাত্র ভরসা। ভরসার এই জায়গাটিকে ভালভাবেই এগিয়ে নেয়ার কাজ করা হচ্ছে। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে সরকারের ওই উদ্যোগ চাপা দিয়ে দেয়। তাই আমি মনেকরি সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতি ধরে রাখা যাবে না। মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে আইসিটি বিষয়ও বাধ্যতামূলক করেছি। এর ফলে একজন শিক্ষার্থী গ্রাজুয়েশন শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ হিসেবে বের হবেন। ইনফো-৩ প্রকল্পের আওতায় দুই লাখ প্রান্তিক পর্যায়ের দফতর প্রতিষ্ঠানে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ প্রদান, ১৫ হাজার প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, ডিসি ও ইউএনও অফিসে কম্পিউটার ল্যাব, ইমার্জেন্সি সার্ভিস সেন্টার, ১০ হাজার গ্রোথ সেন্টারে পয়েন্ট অব প্রেজেন্স ও রেগুলেটরি ল্যাব, সাইবার সিকিউরিটি ল্যাব ও ভিএলএস ল্যাব স্থাপনসহ গ্রাম পর্যায়ে ই-কমার্স চালু করা হবে। প্রতিটি ডিজিটাল সেন্টারে একটি করে পয়েন্ট অব প্রেজেন্স প্রতিষ্ঠা করা হলে গ্রামের মানুষ নিজ বাড়িতে বসেই ব্যবসা-বাণিজ্য, নাগরিক সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এতে গ্রামীণ জনপদের মানুষের দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও ডিজিটাল বৈষম্য রোধ সম্ভব হবে। ১ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের মধ্যে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিতীয় মেয়াদে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তথ্য ও সেবা প্রদানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। সরকারী কার্যক্রম ও সেবা প্রদান পদ্ধতি ডিজিটাইজড করা হয়েছে। মানুষ এখন সহজেই সেবা পাচ্ছে। গত আট বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ অভিযাত্রায় তথ্য প্রযুক্তির অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ ঘটেছে। এখন তৃণমূল পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির সেবা পৌঁছে গেছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে শহরের সঙ্গে গ্রামের মানুষের পার্থক্য কমিয়ে আনা। দেশের সরকারী ১৮ হাজার ৫ শ’ অফিসে কানেক্টিভিটি তৈরি করা হয়েছে। যে কেউ যে কোন সময় এসব অফিসের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারবে। শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমরা ৫ হাজার ২৭৫ ডিজিটাল ইউনিয়ন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রতি মাসে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে সেবা পাচ্ছেন। আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা নতুন একটি খাত খুঁজে পেয়েছি। সেটি হলো এ্যাকাউন্টিং বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও)। এটাকেই এখন থেকে ফোকাস করা হবে। এটা যত বেশি প্রচার পাবে তরুণরা তত উৎসাহিত হবে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, ফ্রিল্যান্সিং তথ্যপ্রযুক্তির খাতে আয়ের অন্যতম উৎস। ঘরে বসেই এই খাত থেকে বড় অঙ্কের টাকা আয় করা সম্ভব। সরকার এ জন্য দেশে ৫৫ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। দক্ষ ফ্রিল্যান্সার গড়ে উঠলে ভিশন ২০২১ সালের মধ্যে দেশ কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছবে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নকে এগিয়ে নিতে আইসিটি অবকাঠামো উন্নয়নসহ ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে সরকার। যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণ কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। কালিয়াকৈরে ৩৩২ একর জমির ওপর বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এ দুটি পার্কসহ দেশে ১২টি আইটি পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। শুধু কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক নির্মাণের কাজ শেষ হলে এখানে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি পার্ক স্থাপনের কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে এসব পার্কের নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
×