ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২০২০-’২১ সাল হবে ‘মুজিব বর্ষ’

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৭ জুলাই ২০১৮

২০২০-’২১ সাল হবে ‘মুজিব বর্ষ’

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী ২০২০-২১ সালকে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে পালন করার ঘোষণা দিয়েছেন। বছরব্যাপী এই কর্মসূচী পালনে জাতীয় অধ্যাপক ও নজরুল গবেষক রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে একটি উচ্চ পর্যায়ের নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সদস্য সচিব হিসেবে থাকবেন সাবেক মুখ্যসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। আর আওয়ামী লীগের বছরব্যাপী কর্মসূচী পালনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন থেকে এ বছর শুরু হয়ে শেষ হবে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে। শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের নবনির্মিত অত্যাধুনিক ১০তলা নিজস্ব কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কমিটির যৌথসভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। এই যে স্বীকৃতি আমরা পেয়েছি এটা অনেকের পছন্দ নয় তা আমি জানি। পছন্দ না হওয়ার কারণ হলো ঋণ আনতে নাকি সমস্যা হবে! দেশ দরিদ্র থাকলে, দরিদ্র কঙ্কালসার মানুষকে দেখিয়ে যারা বিদেশ থেকে টাকা এনে উচ্চহারে দরিদ্রদের ঋণ দিয়ে নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন করে, তাদের সর্বনাশ হয়েছে। সর্বনাশ জনগণের হয়নি। যারা মানুষের রক্ত চুষে খায় তাদের সর্বনাশ হয়েছে। উদ্বোধনী বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তাঁর দীর্ঘ সংগ্রামের ফলেই অর্জিত হয়েছে এই মহান স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, জীবন দিয়ে হলেও আপনাদের ঋণ আমি শোধ করে যাব। সপরিবারে জীবন দিয়ে তিনি আমাদের ঋণী করে গেছেন। সেই ঋণ কিছুটা হলেও শোধ করতে হবে। তিনি বলেন, ২০২০ সালে পূর্ণ হবে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের শত বছর এবং ২০২১ সাল হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বছর। তাই ২০২০-২১ সালকে আমরা মুজিব বর্ষ হিসেবে পালন করব। বছরব্যাপী নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে জাঁকজমকভাবে বঙ্গবন্ধু জন্ম শতবার্ষিকী পালন করা হবে। বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। বিভাগ, জেলা ও ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলেই দেশের উন্নয়ন হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকায় দেশ আজ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে পেরেছে। আমরা সব সময় চেয়েছি নিজেদের সম্পদ দিয়ে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াব, নিজেরা স্বাবলম্বী হব। কারোর কাছে হাত পেতে ভিক্ষা নিয়ে নয়। শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করছে মানুষ। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা চাই এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন, এর সঙ্গে দেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধশালী। সরকার শোষিতের পক্ষে এখন কাজ করছে। দেশের একটা মানুষ ঘরহারা নেই। বছরব্যাপী কর্মসূচী নিয়ে গত ২৩ জুন দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের নতুন ভবন উদ্বোধন করা হয়। এরপর শুক্রবার প্রথমবারের মতো উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কমিটির এ সভা অনুষ্ঠিত হলো। বিকেল পাঁচটায় প্রধানমন্ত্রী দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এলে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাঁকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। যৌথসভার শুরুতেই শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন দলটির কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। ওবায়দুল কাদেরের সঞ্চালনায় যৌথসভায় বক্তব্য রাখেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুকুল বোস, রাশিদুল আলম, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রহমান, আখতারুজ্জামান, হারুন অর রশিদ প্রমুখ। নবনির্মিত দলের নিজস্ব কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের পুরো এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ রাস্তায় দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী স্লোগান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। বিশেষ করে যুবলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী জাতীয় পতাকা সদৃশ্য লাল-সবুজের টুপি-গেঞ্জি পরে সৃশৃঙ্খলভাবে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে দেখা যায়। বৈঠকে দেশের সর্বশেষ রাজনীতি, আগামী নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দীর্ঘ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সূত্র জানায়, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত বছরব্যাপী কর্মসূচীর মধ্যে বছরব্যাপী এ আয়োজনে বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধান ও রাজনীতিবিদদের আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি বড় ধরনের অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। প্রধানমন্ত্রী এতে সম্মতি জানান। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি ও অস্থায়ী জাদুঘর নির্মাণ করা হবে। সভার উদ্বোধনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা আরও বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট দেশ ও জাতির জন্য দুর্ভাগ্য। এরপর অবৈধ ক্ষমতা দখল। সন্ত্রাস জঙ্গীবাদে দেশের এগিয়ে যাওয়া। উন্নয়ন স্তব্ধ। তবে সবকিছু পেছনে ফেলে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি নিয়ে এখন উন্নতির পথে কাজ চলছে। উন্নয়নের মহাসড়কে চলমান। স্যাটেলাইট মহাকাশে। উন্নতির পথে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন, এর সঙ্গে দেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধশালী। সরকার শোষিতের পক্ষে এখন কাজ করছে। দেশের একটা মানুষ ঘরহারা নেই। ২০২০ সাল জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন করব। তখন দেশ দরিদ্রমুক্ত হবে। দরিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে আমরা জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন করব। এ জন্য বছরব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচী নেয়া হবে। এ কর্মসূচী ঠিক করতেই আমরা এই বৈঠকে বসেছি। তিনি বলেন, সারাদেশে বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত যেন এই কর্মসূচী পালিত হয়। সরকারীভাবেও আমরা কর্মসূচী পালন করব। ইতোমধ্যে আমি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছি। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত এই বছরকে আমরা ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে পালন করব। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। সেই পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর শতবার্ষিকী পালনের কর্মসূচী পালিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই সময়ের মধ্যে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, ঐতিহাসিক ৭ জুন ছয় দফা দিবস, শোকাবহ ১৫ আগস্ট, ৩ নবেম্বর জেলহত্যা দিবসের কর্মসূচীও থাকবে। এসব কর্মসূচীর সঙ্গে সমন্বয় করে জাতির পিতার জন্ম দিবসের কর্মসূচী পালিত হবে। এ জন্ম দিবসের কর্মসূচীতে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, জেলে-কামার-কুমার-তাঁতি, শ্রমিক-চাকরিজীবী-পেশাজীবী-কর্মচারী, শিশু-কিশোরসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করা হবে। ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচীও থাকবে। দলের সকল নেতাকর্মীকে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা পড়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা আমরা প্রকাশ করেছি। এখন বঙ্গবন্ধুর নিয়ে ১৯৪৭ সাল থেকে পাকিস্তানের যে গোয়েন্দা রিপোর্ট দেয়া হয়েছিল তার ৪৭টি ফাইল আমাদের কাছে আছে। হাজার হাজার পাতা সেই ফাইলে। সেটাও একটা ইতিহাস। এই ফাইলগুলোর ৩০ থেকে ৪০ হাজার পাতা হবে। সেখান থেকে বেছে ৯ হাজারে আনা হয়েছে। ১৪টি ভলিউমে এগুলো প্রকাশ করা হবে। প্রথম ভলিউমের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার যে রিপোর্ট সেই রিপোর্ট পড়লেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের কথা জানা যাবে, বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম অবদানের কথাও জানা যাবে। এতবড় গোয়েন্দা রিপোর্ট পৃথিবীর অন্য কোন রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই। তিনি বলেন, এখন আমরা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আগরতলা মামলার নথিও আমাদের কাছে আছে। আরেকটি লেখা আছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকথা। এই লেখাটিও আমরা প্রস্তুত করছি, এটাও প্রকাশ করতে পারব।
×