ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জাতীয় জাদুঘরে দুদিনব্যাপী নজরুল উৎসবের সূচনা

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৭ জুলাই ২০১৮

 জাতীয় জাদুঘরে দুদিনব্যাপী নজরুল উৎসবের সূচনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সৃষ্টির ঐশ্বর্যে সমৃদ্ধ সমাজের রূপায়নে নজরুল চিরকালের, চিরদিনের। চারদিকে যখন অশুভ শক্তির আস্ফালন তখন যেন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন কবি। মানুষে মানুষে বিভাজনের প্রেক্ষাপটে প্রেরণা উৎসে পরিণত হয়ে বিদ্রোহী কবির সাম্যের বাণী। অস্থির সময়ে সম্প্রীতিময় চেতনার আলোকরেখায় আবির্ভূত হন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। সুন্দর সমাজের সেই আকাক্সক্ষায় কবির ১১৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুরু হলো নজরুল উৎসব। শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী এ উৎসবের সূচনা হয়। নজরুলের গান-কবিতার সঙ্গে নৃত্যের নান্দনিকতায় সজ্জিত উৎসবটির বাংলাদেশ নজরুলসঙ্গীত সংস্থা। উৎসবের প্রথম দিনে নজরুলসঙ্গীতের চর্চা, প্রচার ও গবেষণায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মাননা প্রদান করা হয় পশ্চিমবঙ্গের আগরতলার নজরুলসঙ্গীত শিল্পী মায়া রায়কে। সম্মাননা প্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করে শিল্পী বলেন, যে কোন স্বীকৃতিই আনন্দের। এর মাধ্যমে কাজের প্রতি দায়বোধটা আরও বেড়ে যায়। আমার এই সম্মাননাটি উৎসর্গ করলাম ত্রিপুরাবাসীকে। একইসঙ্গে এই অর্জনকে সঁপে দিলাম আমার জন্মভূমি বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীকে। নজরুল চর্চায় শুদ্ধতার আহ্বান জানিয়ে শিল্পী বলেন, অনেকেই এখন বিকৃতভাবে নজরুলসঙ্গীত পরিবেশন করছে। এটা পরিহার করে আদি সুর ও বাণী অনুসরণ করেই নজরুলের ঐশ্বর্যময় সৃষ্টিসম্ভারকে ব্যবহার করতে হবে। তাহলেই কবির যথার্থ সম্মান জানানো হবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল। শুভেচ্ছা কথনে অংশ নেন সংগঠনের সহ-সভাপতি কবির নাতনি খিলখিল কাজী। সংক্ষিপ্ত কথন শেষে কবির সৃষ্টির আলোয় নৃত্য-গীত ও কবিতাপাঠে এগিয়ে যায় পরিবেশনা পর্ব। পরিবেশনা পর্বের সূচনায় অনেকগুলো কণ্ঠ মিলে যায় এক সুরে। সম্মেলক কণ্ঠে গীত হয় ‘দোলে ঝুলন দোলায়’। সুর ও বাণীর আবেশে সিক্ত শ্রোতার করতালিতে মুখরিত হয় মিলনায়তন। এরপর মঞ্চে আসেন প্রমিতা দে। গেয়ে শোনান ‘আমি গগনে গহনে সন্ধ্যাতারা’। সঞ্জয় কবিরাজের গাওয়া গানের শিরোনাম ছিল ‘পেয়ে কেন নাহি পাই’। ‘এলো কৃষ্ণ কানাইয়া’ শীর্ষক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শ্রাবন্তী ধর। এরপর নজরুলের গানের সুরে নাচ করে শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার দল। একক নৃত্য পরিবেশন করেন আগরতলার শিল্পী অনুপমা দাশ। নাচ শেষে সুরের আশ্রয়ে মঞ্চে আসেন নাহিয়ান দূরদানা শুচি। গেয়ে শোনান ‘এ নহে বিলাস বন্ধু’। সঞ্জয় হালদারের কণ্ঠে গীত হয় ‘এ আঁখিজল মোছ প্রিয়া’। মোখলেসুর রহমান পরিবেশন করেন ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন’। মইদুল ইসলাম, বণা রাণী হালদার ও রেজাউল করিম শুনিয়েছেন ‘সুদূর মক্কা মদীনার পথে’ ও ফাগুন ফুরাবে যবে’ ও তরুণ অশান্তকে রিরহী’ শিরোনামের গান। এছাড়া একক কণ্ঠে গান শুনিয়েছেন ঐশ্বর্য সমদ্দার, সুমন মজুমদার, খায়রুল আনাম শাকিল, জোসেফ কমল রড্রিক্স, করিব হাসান খান, নাসিমা শাহীন ফ্যান্সী, সুমন চৌধুরী, ডালিয়া নওশীন, সেলিনা হোসেন, গৌরী নন্দী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ফেরদৌস আরা ও শারমিন সাথী ইসলাম। ছিল শিশু শিল্পীদের সম্মেলক কণ্ঠের গান। কচিকণ্ঠের পরিবেশিত দু’টি গানের শিরোনাম ছিল ‘খেলিছ এ বিশ্বলয়ে’ ও ‘বরষা ঋতু এলো’। নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করেন সুমনা বিশ্বাস। আজ শনিবার উৎসবের সমাপনী দিন। সন্ধ্যায় শুরু হওয়া এ দিনের আয়োজনে গান শোনাবেন ইয়াকুব আলী খান, ইয়াসমীন মুশতারী, খিলখিল কাজী, কল্পনা আনাম, শামীমা পারভীন শিশু, রেজাউল করিম, বিজন মিস্ত্রী, মাহমুদুল হাসান, মোহিত খানসহ প্রখ্যাত ও উদীয়মান নজরুলসঙ্গীত শিল্পীরা। বাচিকশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবৃত্তির সঙ্গে পরিবেশিত হবে সামিনা হোসেন প্রেমার নৃত্য। লোক নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনন্দ আয়োজন ॥ নতুনের আবাহনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ১৯৮১ সালের ৬ জুলাই গড়ে ওঠে লোক নাট্যদল। দর্শকনন্দিত অজস্র নাটক মঞ্চে আনা শুক্রবার পদার্পণ করল প্রতিষ্ঠার সাঁইত্রিশ বছরে। আর এই সাফল্যের উদ্যাপনে ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার আনন্দ আয়োজন করে নাট্যদলটির উভয় অংশ সিদ্ধেশ^রী ও বনানী। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ছিল লোক নাট্যদল সিদ্ধেশ^রীর আয়োজন। বেইলি রোডেমির মহিলা সমিতি মিলনায়তনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান করে লোক নাট্যদল বনানী। বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় আলোচনা এবং নাট্য প্রদর্শনীর আয়োজন করে লোক নাট্যদল সিদ্ধেশ্বরী। দলের প্রতিষ্ঠাতা ও অধিকর্তা লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান ও নাট্যকার অধ্যাপক আবদুস সেলিম। আলোচনা শেষে মঞ্চস্থ হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত এবং লিয়াকত আলী লাকী নির্দেশিত নাটক ‘রথযাত্রা’। একই সময় বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনে প্রীতি সম্মিলনী ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন করে লোক নাট্যদল সিদ্ধেশ্বরী। এই অংশের দুই দিনের আয়োজনে আজ শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে দলের নিয়মিত প্রযোজনা ‘বৈকুণ্ঠের খাতা’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন কামরুন নূর চৌধুরী। আলিয়ঁস ফ্রঁসেসে ‘রূপসী বাংলা’ ॥ গোলাম মোহাম্মদ জোয়ারদারের ছবি আঁকার মূল বিষয় হচ্ছে প্রকৃতি, মানুষ এবং তার চারপাশ। রাজধানীর আলিয়ঁস ফ্রঁসেস দো ঢাকার লা গ্যালারিতে এখন শোভা পাচ্ছে সেসব ছবি। শুক্রবার এখানে থেকে শুরু হলো ‘রূপসী বাংলা’। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সম্মানিত অতিথি ছিলেন শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ সোলাইমান হক জোয়ার্দার। জল রং, চারকোল, মিক্সড মিডিয়া, প্রিন্ট ও এ্যাক্রেলিক মাধ্যমের ৪৩টি চিত্রকর্ম ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনীটি চলবে ১৭ জুলাই পর্যন্ত। সোম থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি খোলা থাকবে। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ।
×