ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গাড়িমুক্ত মানিক মিয়া এভিনিউয়ে বিশ্বকাপ ফুটবল উন্মাদনা

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৭ জুলাই ২০১৮

  গাড়িমুক্ত মানিক মিয়া এভিনিউয়ে বিশ্বকাপ ফুটবল উন্মাদনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহযোগিতায় মানিক মিয়া এভিনিউয়ের একটি অংশ (দক্ষিণ প্লাজার সামনে) সকল প্রকার গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখে গাড়িমুক্ত কর্মসূচী পালন করা হয়। কর্মসূচীতে সড়কের একটি অংশে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে নগরবাসীর বিনোদনের জন্য নানা আয়োজন করা হয়। সারাবিশ্বে এখন ফুটবল উন্মাদনা চলছে। এবারের গাড়িমুক্ত মানিক মিয়া এভিনিউ কর্মসূচীতেও আনা হয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবলের ছোঁয়া। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় সরকারী, বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড কার ফ্রি ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০১৮ অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সালের রাশিয়ায় বিশ^কাপে অংশগ্রহকারী ৩২টি দেশের মধ্যে যে আটটি দেশ ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। সেই আটটি দেশের নামে আজ আটটি দল ওয়ার্ল্ড কার ফ্রি ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে। ওয়ার্ল্ড কার ফ্রি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ান হয় জার্মানি (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স) এবং রানার্সআপ হয় জাপান (হামীম সারজা)। ফাইনাল ম্যাচ শেষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বেও পর বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। আয়োজকরা ঢাকাকে পরিবেশবান্ধব নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ব্যক্তিগত গাড়িকে নিয়ন্ত্রণ করে গণপরিবহনের উন্নয়ন, হাঁটার পরিবেশ ভাল করা, সাইকেলের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা, ঢাকা বর্তমান খালগুলো আছে সেগুলো কাজে লাগিয়ে নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি করেন। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিটিসিবির নির্বাহী পরিচালক রাকিবুর রহমান, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী, সাবেক ফুটবলার জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ আব্দুল গাফার, বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ কামরুন নাহার ডানা, রাজউকের পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, বাপার যুগ্ম সম্পাদক শাহাজাহান মৃধা বেনু প্রমুখ। ব্যক্তিগত গাড়ি নিরুৎসাহিত করার জন্য প্রতি বছরের ২২ সেপ্টেম্বর পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব গাড়িমুক্ত দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় গত বছর সরকারীভাবে আমাদের দেশেও দিবসটি উপলক্ষে মানিক মিয়া এভিনিউ-এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দিয়েছিলেন, আমরাও ব্যক্তিগত গাড়ি নিরুৎসাহিত করার পক্ষে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার মালিক মিয়া এভিনিউয়ের রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে। ঘোষণার পর প্রথম শুক্রবারই তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ নিয়ে নানা রকম হইচই হয়। এরপর আবারও দিবসটি পালনে তৎপর হয় পুলিশ। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোন অসুবিধা হয় না। কিন্তু তাৎক্ষণিক কিছু জটিলতা দেখা দেয়। কোন কোন সময় দেখা যায় পরীক্ষা বা ভিভিআইপি প্রটোকলসহ নানা কারণে এই ঘোষণা নিয়মিত বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে খুব বেশি আপত্তি কারও নেই। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতীকী এই কর্মসূচীর মাধ্যমে ঢাকাবাসীকে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা কঠিন বিষয়। প্রাইভেটকার ক্রয়ের ক্ষেত্রে নানা রকম বাধ্যবাধকতা আনা হলেও বিক্রি তো কমেনি। হিসাব করলে দেখা যায় প্রতিদিন রেজিস্ট্রেশন পাওয়া মোট পরিবহনের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা। এ থেকেই বোঝা যায় মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক মুক্তি আসছে। বিপুল পরিমাণ টাকা লাগলেও অনেকেই চেষ্টা করছেন ব্যক্তিগত গাড়ি নামাতে। এছাড়া আরেকটি বড় বাস্তবতা হলো, ঢাকা শহরে দিন দিন গণপরিবহনের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। এককথায় বলতে গণপরিবহনের মান একেবারেই নিম্নমানের। ফলে যার একটু নিরাপদে রাস্তায় চলাচলের চেষ্টা করেন তারা প্রথমেই ব্যক্তিগত গাড়ির ভাবনা ভাবেন। যদি গণপরিবহন সমস্যা সমাধানে সব মহল থেকে পদক্ষেপ নেয়া হতো তাহলে প্রাইভেটকারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কোন কারণ ছিল না।
×