ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১০ বছরের সব তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি

এবার খাদ্য বিভাগে দুদকের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ৭ জুলাই ২০১৮

  এবার খাদ্য বিভাগে দুদকের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু

মশিউর রহমান ॥ খাদ্য অধিদফতরে গত ১০ বছরে হওয়া বিভিন্ন প্রকার দুর্নীতির অনুসন্ধানে বেশ জোরেশোরেই মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একইসঙ্গে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও খাদ্য পরিবহনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। দুদক কর্তৃক অভিযোগ অনুসন্ধানের স্বার্থে খাদ্য অধিদফতরের ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সকল তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি। খাদ্য অধিদফতরের অধীনে দেশের খাদ্যশস্য চলাচল যেমন : গ্রহণ, মজুত, সরবরাহ, ট্রানজিট ও ঘাটতি ইত্যাদি সংযোগে প্রতি বছরকে চারটি স্তরে বিভক্ত করে প্রতি তিন মাসের সকল রেকর্ডপত্র প্রদান করতে চিঠি দিয়েছে দুদক। গত ১০ বছরে খাদ্য চলাচলের বিভিন্ন তথ্য চেয়ে দুদকের উপ-পরিচালক (অনু ও তদন্ত-১) আবু নাসের গত ২০ জুন খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন। দুদক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, দুদকের চিঠিতে ২০০৭ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে সারা দেশে খাদ্য চলাচলে ব্যাপক দুর্নীতি ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও খাদ্য পরিবহনে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে তথ্য সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ জুন খাদ্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক (সংস্থাপন) মামুন আল মোর্শেদ চৌধুরীর সই করা এক চিঠিতে দুদককে সহায়তা করার স্বার্থে রেকর্ডপত্র সরবরাহ করতে বর্তমান পরিচালককে (চসসা) তথ্য সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসব তথ্য সঠিক সময়েই প্রদান করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তথ্য প্রাপ্তির পরই অনুসন্ধানে নামবে দুদক। এদিকে অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যে অধিদফতরের খাদ্য চলাচল, সংরক্ষণ ও সাইলো (চসসা) বিভাগের পরিচালক চিত্ত রঞ্জন বেপারীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে। অপরদিকে ইতোমধ্যেই খাদ্য বিভাগের তালিকাভুক্ত নৌ-পরিবহন ঠিকাদারদের সংগঠন খুলনা মেজর কেরিয়ার সমিতি ও খুলনা আঞ্চলিক নৌ-পরিবহন ঠিকাদার সমিতি (খাদ্য) উক্ত কর্মকর্তাকে অপসারণের জন্য খাদ্য মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে লিখিত দাবি জানিয়ে আল্টিমেটাম দিয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, মাংলা সাইলো থেকে নৌ-পথে বিভিন্ন গন্তব্যে খাদ্যশস্য পরিবহনের অনুকূলে চলাচল সূচী প্রদান করার জন্য ঘুষ নেন পরিচালক চিত্ত রঞ্জন বেপারী। তিনি প্রতি ৬০০ মেট্রিক টনের জন্য ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। একইভাবে খুলনার ঘাটগুলো থেকে ৬০০ মেট্রিক টন পরিবহনে ১৫ হাজার টাকা, বাঘাবাড়ি ও নগরবাড়ি ঘাট থেকে ১২ হাজার টাকা পরিচালকের অফিসে জমা দিতে হয়। পরিবহনের সূচীর মেয়াদ অল্প সময়ের জন্য দেয়া হয় এবং ওই সময়ের মধ্যে পরিবহন করতে না পারলে সময় বাড়ানোর জন্য কোটা প্রতি আরও অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। এ টাকা না দিলে তিনি সাসপেন্ড করার হুমকি দেন। সম্প্রতি মংলা সাইলো থেকে ৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন গম নারায়ণগঞ্জ সাইলোতে পরিবহনে আইন লঙ্ঘন করে এককভাবে কাজ দেয়া হয় ঠিকাদার কাজী সাহিদুর রহমানকে। এজন্য তার কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা ঘুষ নেন চিত্ত রঞ্জন বেপারী। এজন্য অবিলম্বে চিত্ত রঞ্জন বেপারীকে অপসারণের দাবি জানিয়ে আল্টিমেটাম দিয়েছে সংগঠন দুটি। এ দাবিতে গত মাসে তারা এক দফা খাদ্য পরিবহন বন্ধ করে দেয়। সূত্র জানায়, এ অবস্থায় পরবর্তীতে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের অনুরোধে তারা খাদ্যশস্য পরিবহন শুরু করে। তবে চিত্ত রঞ্জন বেপারীকে দ্রুত অপসারণ না করলে পরবর্তীতে আবারও খাদ্য পরিবহন বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে সংগঠন দুটি। এ বিষয়ে খাদ্য অধিদফতরের চলাচল, সংরক্ষণ ও সাইলো বিভাগের পরিচালক চিত্ত রঞ্জন বেপারী সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে এখন আমি কিছু বলব না। তবে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে সত্য-মিথ্যার বিষয়ে অনুসন্ধান করলেই সঠিক কোনটি তা বের হবে। তবে যে কোন অভিযোগের স্বপক্ষে তথ্য প্রমাণও দাখিল করতে হবে। অন্যথায় এটি মিথ্যা বলে প্রমাণিত হবে। তথ্য প্রমাণ থাকলে তা অনুসন্ধানের সময় হাজির করতে হবে।
×