ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হেলাই তাসকুমা/ওয়াশিংটন পোস্ট

ভিডিও গেমের নেশায় আসক্তি

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ৭ জুলাই ২০১৮

ভিডিও গেমের  নেশায় আসক্তি

ভিডিও গেমের প্রতি আসক্তি এক ধরনের রোগ। এ রোগের নাম গেমিং ডিসঅর্ডার বা খেলার বৈকল্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি এই বৈকল্যকে তার রোগব্যাধির আন্তর্জাতিক শ্রেণীবিন্যাসে স্থান দিয়েছে এবং বলেছে যে ভিডিও গেমের প্রতি আসক্তি জন্মানো সম্ভব। এমনিতে প্রচুর ভিডিও গেম খেললেই কেউ যে আসক্তির সমস্যায় পড়ে গেল তা নয়। এই বৈকল্যের বৈশিষ্ট্য হলো ভিডিও গেম খেলার নেশাটা অন্য আর সব আকাক্সক্ষাকে ছাড়িয়ে যায় এবং নেতিবাচক পরিণতি সত্ত্বেও তা চলতে থাকে বা বিস্তার লাভ করে। ‘হু’ জানিয়েছে যে এ রোগ নির্ণয়ের জন্য যা যা লাগবে তার মধ্যে থাকবে ১২ মাসেরও বেশি স্থায়ী এ ধরনের আচরণের প্রমাণ। হু ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞের মতে যারা ভিডিও গেম খেলে তাদের অনধিক ৩ শতাংশ এই বৈকল্যের শিকার হয়। আবার কোন কোন হিসাবে এই সংখ্যা ১ শতাংশ। উল্লেখ করা যেতে পারে যে বিশ্বব্যাপী দু’শ’ কোটিরও বেশি লোক নিয়মিত ভিডিও গেম খেলে থাকে। আন্তর্জাতিক রোগ শ্রেণীবিন্যাসে গেমিং ডিসঅর্ডারকে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্য অংশত এই সমস্যাটির প্রতি অধিকতর দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং অত্যধিক ভিডিও গেম খেলার সমস্যার জন্য সাহায্য সন্ধান করছে তাদের চিকিৎসার দৃশ্যমানতা বাড়িয়ে তোলা। যারা ভিডিও গেমিংসহ বাধ্যতামূলক বা নেশাকর প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য চিকিৎসা চায় তাদের সে ধরনের চিকিৎসার সন্ধান পেতে সমস্যায় পড়তে হয় সেখানে ইনসিউয়েন্সের কভারেজ আছে। তবে ভিডিও পেশের প্রতি অত্যধিক আসক্তিকে বৈকল্য বলে চিহ্নিত করে সেটিকে রোগের শ্রেণীভুক্ত করার ফলে রোগীদের সাহায্য হবে হু’-এর এই বক্তব্যের সঙ্গে সবাই একমত নয়। গত বছর হু’ যখন নিশ্চিত করে যে গেমিং ডিসঅর্ডারকে একটা রোগ হিসেবে গণ্য করা হবে তখন বেশ কিছু একাডেমিশিয়ান সংস্থার এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে বসে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভিডিও গেম শিল্প তার লবিং গ্রুপ এন্টারটেইনমেন্ট সফটওয়্যার এ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে সেই একাডেমিশিয়ানদের সমর্থন যোগায়। এই বিশেষজ্ঞরা জার্নাল অব বিহেভিওরাল এডিকশনস-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলেন যে ‘গেমির ডিসঅর্ডারকে একটা রোগ হিসেবে গণ্য করার জন্য যথেষ্ট গবেষণা চালানো হয়নি এবং গেমিং ডিসঅর্ডারের সংজ্ঞাটিও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। গেমিং ডিসঅর্ডারকে রোগ হিসেবে গণ্য করার বৈধতা নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যেও বিতর্ক রয়েছে। আমেরিকান সায়ক্রিয়াটিক এ্যাসোসিয়েশন ‘ডায়াগনোস্টিক এ্যন্ডা স্ট্যাটিসটিকাল ম্যানুয়াল অব মেন্টাল ডিসঅর্ডারসের ২০১৩ সালের সংস্করণে ইন্টারনেট গেমিং ডিসঅর্ডারকে আরও গবেষণার ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু এমন অনেকে আছে যারা বাধ্যতামূলকভাবে গেম খেলে। কয়েক দশক যাবত এ ধরনের ব্যক্তিদের ভিডিও গেমের প্রতি নেশাসক্ত বলে উল্লেখ করা হয়ে আসছে। অনেক ভিডিও গেম এমনভাবে ডিজাইন করা যাতে মানুষকে দীর্ঘ সময় ধরে খেলায় লিপ্ত রাখা যায়। লোকের কাছে আকর্ষণীয় হবে এমন গেমের ডিজাইন করার কাজে সাহায্যের জন্য কখনও কখনও মনস্তত্ত্ববিদদেরও নিয়োগ করা হয়ে থাকে। ইন্টারনেট ব্যবহার বিশেষ করে ভিডিও গেমের নেশা ছাড়াতে সাহায্য করার জন্য চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় সরকারী কর্মসূচী নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রে কিছু কিছু প্রাইভেট চিকিৎসা কেন্দ্রে ভিডিও গেমের আসক্তির চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। অনুবাদ ॥ এনামুল হক
×