ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অক্সিজেনের অভাবে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি

কিশোর ফুটবলারদের রসদ দিয়ে ফেরার পথে ডুবুরির মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ৭ জুলাই ২০১৮

  কিশোর ফুটবলারদের রসদ দিয়ে ফেরার পথে ডুবুরির মৃত্যু

থাইল্যান্ডের জলমগ্ন গুহায় কোচসহ আটকে পড়া কিশোর ফুটবল দলের ১২ সদস্যের উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয়া এক ডুবুরির মৃত্যু হয়েছে। রসদ সরবরাহ শেষে ফেরার পথে শুক্রবার ভোরের দিকে থাম লুয়াং গুহার ভেতরেই ৩৮ বছর বয়সী সামান গুনান অচেতন হয়ে পড়েন; এরপর আর তার জ্ঞান ফেরানো যায়নি। খবর বিবিসির। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তার (গুনান) কাজ ছিল অক্সিজেন সরবরাহ করা। ফেরার পথে যা তার নিজের কাছেই প্রয়োজনীয় পরিমাণ ছিল না।’ দৌড় ও সাইকেল চালনায় আগ্রহী গুনান আগে থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীতে ছিলেন। সপ্তাহ দুই আগে থাম লুয়াং গুহায় কিশোর ফুটবল দলের ১২ সদস্য ও কোচ আটকা পড়লে তাদের উদ্ধারে স্বেচ্ছায় যোগ দেন তিনি। নৌবাহিনীর ডুবুরি, সামরিক বাহিনীর সদস্য ও বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবীসহ এ বিস্তৃত উদ্ধার অভিযানে প্রায় হাজারখানেক লোক অংশ নিয়েছেন। চিয়াং রাই প্রদেশের ডেপুটি গবর্নর পাসাকর্ন বুনিয়ালাক শুক্রবার গুহার বাইরে উপস্থিত সাংবাদিকদের গুনানের মৃত্যুর খবর জানান। তার এ মৃত্যু গুহাটির ভেতর চলা উদ্ধার অভিযানের বিপদ ও ঝুঁকিগুলোকেই সামনে নিয়ে এসেছে। থাই নেভি সিল কমান্ডার আপাকর্ন ইয়োকংকাইয়ো অবশ্য বলছেন, নিজেদের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে উদ্ধারকারী দল এখনও ‘আস্থাশীল’। অভিজ্ঞ এক ডুবুরিই যদি গুহাটি থেকে নিরাপদে বের হতে না পারেন, তাহলে ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী কিশোর ফুটবল দলের সদস্য ও তাদের ২৫ বছর বয়সী কোচ কী করে পারবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আপাকর্ন বলেন, আটকে পড়াদের উদ্ধারের সময় আরও সতর্ক থাকা হবে। গুহাটির যে প্রকোষ্ঠে ১৩ জন অবস্থান করছেন, সেখানকার অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় কর্মকর্তাদের উদ্বেগ বাড়ছে বলেও জানিয়েছে বিবিসি। উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া কর্মীদের সংখ্যার কারণে গুহার ভেতর অক্সিজেনের মাত্রা নেমে আসছে বলে জানিয়েছেন চিয়াং রাই প্রদেশের গবর্নর নারোংসাক ওসোত্থানাকর্ন। আটকে পড়াদের অক্সিজেন সরবরাহে কর্তৃপক্ষ এখন গুহার ভেতর ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তার টানার চেষ্টা করছে। গত ২৩ জুন ফুটবল প্রশিক্ষণের পর ২৫ বছর বয়সী কোচের সঙ্গে ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী ওই ১২ কিশোর মিয়ানমার সীমান্তের নিকটবর্তী একটি ফরেস্ট পার্কের থাম লুয়াং গুহাটি দেখতে গিয়েছিল। ভেতরে প্রবেশ করার পর প্রবল বৃষ্টিপাতে গুহার কিছু সঙ্কীর্ণ অংশ পানিতে পুরোপুরি ডুবে গেলে তারা আটকা পড়ে। থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ চিয়াই রাইয়ের এ গুহাটিতে তারা যখন প্রবেশ করে তখন এতে পানি ছিল না বলে মনে করা হচ্ছে। তুমুল বর্ষণের পর হুট করে পানি বেড়ে তাদের বেরিয়ে আসার পথ বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টির কারণে বিঘিœত উদ্ধার তৎপরতার দশদিনের মাথায় গত সোমবার গভীর রাতে তাদের খোঁজ পাওয়া যায়। আটকে পড়া ১২ কিশোর ও তাদের কোচকে বাইরে বের করে আনার বিভিন্ন উপায় বিবেচনা করে দেখছেন উদ্ধারকারীরা। সম্ভাব্য উপায়গুলোর মধ্যে আছে ১৩ জনকে ড্রাইভিংয়ের খুঁটিনাটি শেখানো। এজন্য স্কুবা প্রশিক্ষণ দেয়ার চিন্তাও চলছে। যদিও এ পন্থা বিপজ্জনক হওয়ায় একেবারে শেষ উপায় ছাড়া পদ্ধতিটি কাজে লাগানো হবে না বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। গুহাটির পানি নিষ্কাশনেরও চেষ্টা চলছে। এজন্য পাম্প দিয়ে গুহার ভেতরের পানি বের করা হচ্ছে। এভাবে পানি অনেকখানি কমিয়ে আনা গেলে কিশোররা লাইফ জ্যাকেট পরে হেঁটেই বের হয়ে আসতে পারবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
×