ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্কুল-কলেজ পর্যায়ের পাঠ্যসূচীতে নাটককে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ॥ মাহবুব আলম

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৭ জুলাই ২০১৮

 স্কুল-কলেজ পর্যায়ের পাঠ্যসূচীতে নাটককে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ॥ মাহবুব আলম

মাহবুব আলম। তরুণ নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা। বগুড়ার সন্তান মাহবুব আলম ছোটবেলা থেকেই মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত। ইংরেজী সাহিত্যে মাস্টার্স করা মাহবুব আলম স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন থিয়েটারে কাজ করেছেন। তার রচিত একাধিক নাটক দেশে বিদেশে মঞ্চস্থ হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পথচলার ও বিভিন্ন দিক নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। আপনার রচিত দুইটি নাটক দেশের পাশাপাশি ভারতেও মঞ্চস্থ হলো, অনুভূতি কেমন? মাহবুব আলম : একজন নাট্যকারের নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার অনুভূতিটাই আসলে আলাদা। আমার রচিত বাংলাদেশে থিয়েটারে ‘আমি’ নৈহাটির চতুর্থ সূত্রের নাট্যোৎসবে মঞ্চস্থ হয়েছে। আর এবার প্রাচ্য নিউ আলিপুর ‘পুবের নাট্যগাথা’ শিরোনামে উৎসবে নাট্যলোক সিরাজগঞ্জ প্রযোজিত আমার রচিত ‘রূপ সুন্দরী’ নাটকটি কলকাতার সল্টলেকের ইজেডসিসি পূর্বশ্রী মঞ্চে মঞ্চস্থ হয়। মঞ্চায়নের দিন অনেক রাত পর্যন্ত ঘুম আসেনি। আমি উৎসবে যেতে পারিনি এজন্য আফসোসও ছিল। সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে নাটক রচনার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি প্রাধান্য দেন? মাহবুব আলম : ছোটবেলা থেকেই আমার মানুষের মনস্তাত্বিক বিষয় নিয়ে কাজ করতে ভাল লাগে। সেক্ষেত্রে ইংরেজী সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে আমার লেখা- ‘আমি’, ‘রূপসুন্দরী’ এবং ‘একুশ’ (এখনও মঞ্চস্থ হয়নি) তিনটি নাটকেরই ভাবনার মূল জায়গা হলো মনোগত। মানুষের সাইকোলজির জায়গাটা আলাদা। আমরা সবাই বলি একরকম কিন্তু করি আরেক রকম। মানুষের সেই মনোজাগতিক বিষয়গুলো নিয়ে লিখতে আমার বেশি ভাল লাগে বা প্রাধান্য পায়। এ পর্যন্ত কতগুলো নাটক রচনা করেছেন? কতগুলো নাটকে অভিনয় নির্দেশনা দিয়েছেন? মাহবুব আলম : আর আমি নিজেকে থিয়েটার কর্মীর চেয়ে মঞ্চ বা নাট্যশিল্পী বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমার শুরুটা অভিনয় দিয়েই। পাড়ার নাটকের দল নবযাত্রা শিল্পীগোষ্ঠীতে প্রথম অভিনয় করি ২০০০ সালে। আমাদের পাড়ার বড় ভাই (এইচ আলিম, বর্তমানে সাংবাদিক)-এর সঙ্গে প্রথম শুরু। এরপর ২০০২ সালে ‘প্রাকৃতজন’ এবং সর্বশেষ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির রেপার্টরি থিয়েটারে আওতায় ‘মুক্তি মুক্তি’ নাটকসহ প্রায় ১৫টি নাটকে অভিনয় করেছি। আর আমাদের শিশুদের একটি দল আছে (এখন কার্যক্রম নেই) অ আ ক খ সেই দলে কাগজে কলমে নির্দেশনা দিয়েছি ফরিদুর রেজা সাগরের লেখা শিশুদের ২টি মঞ্চ নাটক আর প্রাকৃতজনের ৩টি পথ নাটক। এছাড়া এ পর্যন্ত মোট ৭টি নাটক লিখেছি। এর মধ্যে মঞ্চ নাটক চারটি এবং পথ নাটক তিনটি। কিছুদিন আগে শিশুদের জন্যও একটি মঞ্চ নাটক লিখেছি। আরও দুটি মঞ্চ নাটক থেমে থেমে লেখা চলছে। শিশুদের জন্য ‘ইচ্ছে খেলা’ নামে একটি নাটক সম্প্রতি শেষ করলাম। ‘ইচ্ছে খেলা’ বরিশাল শব্দাবলী থিয়েটার শীঘ্রই মঞ্চে আনবে। ‘একুশ’ নামে একটি একক অভিনয়ের নাটক লিখেছি। সন্তান জন্ম দেয়ার পর তাকে ডাস্টবিনে ফেলা দেয়া এবং সেই মায়ের যে মানসিক যন্ত্রণা তারই গল্প ‘একুশ’। এটি ঢাকার একটি দলের দল প্রধান পড়েছেন। তবে আমার প্রথম লেখা মঞ্চ নাটকটি হারিয়ে ফেলেছি। বাংলাদেশের মঞ্চ নাটক বা বাংলা নাটক নিয়ে আপনার সাম্প্রতিক ভাবনা কি? মাহবুব আলম : আমি দশ বছর আগে নাটকের যে অবস্থা দেখেছি এখনও তাই দেখছি। কিছু ক্ষেত্রে তো পরিবর্তন আছেই। আগের থেকে আমাদের নির্দেশনায় ভাবনার ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন হয়েছে এবং হচ্ছে। আর পা-ুলিপির বিষয়টা কিছুটা ভিন্ন। অনেকের কাছেই শুনি পান্ডুলিপির সঙ্কট কিন্তু আমার কাছে তা মনে হয় না। অনেকেই লিখছে এবং ভাল লিখছে। গল্প থেকে নাটক হচ্ছে, উপন্যাস থেকে নাটক হচ্ছে আবার অনুবাদ নাটকও হচ্ছে, রূপান্তর নাটকও হচ্ছে। কিন্তু আমার কাছে মনে আমরা নাটকের বিষয় বস্তুর জন্য আবার শেকড়ে ফিরে যাচ্ছি। যে পথটা আসলে সর্বশেষ নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন দেখিয়ে গেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে মঞ্চ নাটকের দর্শক সঙ্কটের কারণ এবং উত্তরণের উপায় কি বলে মনে করেন? মাহবুব আলম : মঞ্চ নাটকে দর্শক সঙ্কট আছে বলে আমার মনে হয় না। কেননা এখনও এমন অনেক নাটক আছে যেগুলোর বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয়ে গেছে তারপরও মিলনায়তন পূর্ণ দর্শক হয়। তবে সব নাটকের দর্শক নেই। সেক্ষেত্রে সঙ্কট আছে বলতেই হয়। আমি বলতে চাই আমরা নাটককে প্রোডাকশন বলি। অর্থাৎ আমরা মঞ্চের জন্য প্রোডাক্ট বা পণ্য তৈরি করছি কিন্তু যে পণ্য তৈরি করছি সেটির কোন মার্কেটিং আমাদের জানা নেই বা করি না। এখন ঢাকা শহরে বিভিন্ন সোসাইটি তৈরি হয়েছে। অনেক শহরে নাটকের দর্শক নেই বললেই চলে। স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ে নাটক হতে হবে এবং পাঠ্য হিসেবে ন্যূনতম ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে নাটককে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবেই এ সঙ্কট উত্তরণ সম্ভব। নিজের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা কী? ভবিষ্যতে নির্দেশনা বা থিয়েটার প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা কতটুকু? মাহবুব আলম : নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে কখনও ভাবিনি। তবে লেখালেখির বিষয়টা সব সময়ই আমার মনে খোঁচা দিতে থাকে। বর্তমানে শিশুদের চ্যানেল দুরন্ত টিভি কাজ করছি। আর নির্দেশনার কাজটি আসলে অনেক কঠিন। নির্দেশককে অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয়। যে দুই একটা কাজ করেছি সেগুলো নিতান্তই দলের প্রয়োজনে। তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রক্তকরবী’ নাটকটি নির্দেশনা দেয়ার খুব ইচ্ছা আছে। আমার ভাল লাগার একটি নাটক। আর থিয়েটার প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা আপাতত নাই তবে ভবিষ্যতের কথা বলতে পারছি না। -সাজু আহমেদ
×