ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বৃক্ষপ্রেমিক ওয়াহিদ সরদার

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৭ জুলাই ২০১৮

বৃক্ষপ্রেমিক ওয়াহিদ সরদার

বৃক্ষপ্রেমিক হিসেবে মানুষ তাঁকে চেনে। তিনি বৃক্ষ লাগান। তাদের পরিচর্যা করেন। কোন বৃক্ষের শরীরের পেরেক লাগানো থাকলে তাঁর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। তিনি পেরেক তোলেন বৃক্ষের শরীর থেকে। এতো কিছু করে যশোরে তিনি পরিচিত হয়েছেন বৃক্ষপ্রেমিক হিসেবে। তিনি হলেন যশোর সদর উপজেলার সাড়াপোলের রাজমিস্ত্রি আবদুল ওয়াহিদ সরদার। তিনি নিজ উদ্যোগে সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, রাস্তার পাশে, মসজিদ, মন্দির ও বিভিন্ন পতিত জায়গায় নানা ধরনের ফলজ, বনজ ও ঔষধী বৃক্ষরোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন। তারই অংশ হিসেবে সম্প্রতি শতাধিক গাছ থেকে হাজার হাজার পেরেক সরিয়েছেন পরিবেশ ও মানুষের বন্ধু আব্দুল ওয়াহিদ সরদার। সেই সঙ্গে গাছ রক্ষায় সচেতনতা তৈরি করছেন এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছেন গাছের প্রতি নির্যাতনের। বৃক্ষপ্রেমী আব্দুল ওয়াহিদ সরদার সম্প্রতি গাছ রক্ষার আবেদন করেছেন জেলা প্রশাসকের কাছেও। প্রকৃতি ও পরিবেশের সবচেয়ে বড় বন্ধু গাছ। কিন্তু এই গাছ মানুষের দ্বারা বৈরী আচরণের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পেরেক ঠুকে গাছে ব্যানার, ফেস্টুন বা বিজ্ঞাপন দেয়ায় রোগাক্রান্ত হচ্ছে গাছ, নষ্ট হচ্ছে শহরের সৌন্দর্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেরেক ঠুকলে গাছের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। যশোরে বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে গাছের অস্তিত্ব বিলীন করতে যেন নামা হয়েছে প্রতিযোগিতায়। গাছে গাছে পেরেক ঠুকে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন, ব্যানার ও ফেস্টুন। এতে গাছগুলো রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। প্রশাসনিকভাবে এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ফলে, এ প্রতিযোগিতা দিন দিন বাড়ছে। যশোর শহর এবং আটটি উপজেলায় সড়ক-মহাসড়কের ধারের প্রায় সব গাছে বিজ্ঞাপন ঝুলছে। পেরেক ও তারকাটা দিয়ে লাগানো এসব বিজ্ঞাপনে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার, চিকিৎসক, হারবাল ওষুধ কোম্পানিসহ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ছবি, তাদের ছবিযুক্ত পোস্টার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন, ব্যানার ও ফেস্টুন। পরিবেশ ও মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু গাছ রক্ষায় ইতোমধ্যে আব্দুল ওয়াহিদ সরদার মনিরামপুর উপজেলার রোহিতা ইউনিয়নের পলাশী কলেজ মোড় থেকে রাজগঞ্জ সড়ক ও পুলেরহাট পর্যন্ত এম. মাদ্রাজ হারবালের ৭০টি, চট্টগ্রাম মেডিকেল এ্যান্ড হারবালের ৩০টি, ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিকের ২৭টি, জিডিএল হসপিটালের ২৬টি, ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিকের ১০টি, কিংস মেডিকেল সার্ভিসেসের ২৬টি, জেনেসিস হসপিটালের পাঁচটি, প্রাইম ডায়াগনস্টিকের তিনটি, জনতা হসপিটালের তিনটি, দড়াটানা হসপিটালের নয়টি, ম্যাটসের চারটি, পপুলার ডায়াগনস্টিকের একটি, কলিকাতা হারবালের ১১টি, এমএল মডেল হাইস্কুলের একটি, বিসিএস কনফিডেন্স কোচিং সেন্টারের একটি, আইকন কোচিং সেন্টারের পাঁচটি, প্রাইমেট কোচিং সেন্টারের সাতটি, রেটিনা কোচিং সেন্টারের ১০টি, নিউরন কোচিং সেন্টারের দুটি, ম্যাকস্ কোচিং সেন্টারের দুটিসহ মোট ৪৮টি এবং সাড়াপোল আমজার মোড় থেকে চাঁচড়া বাজার পর্যন্ত আরও ৩২টি গাছ পেরেক মুক্ত করেছেন। বনায়নের মাধ্যমে কৃষিতে স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২১’। কথা হয় এ বৃক্ষপ্রেমীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি ২০০৬ সাল থেকে নিজ উদ্যোগে এবং নিজ খরচে আমার গ্রাম ও বিভিন্ন জায়গায় ফলজ, বনজ ও ঔষধী গাছ লাগাই। সম্প্রতি গাছ রক্ষায় একমাস আগে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপিও দেই। আমি লক্ষ্য করেছি এ বিষয়ে কেউ খেয়াল করে না। ইচ্ছেমতো একের পর এক গাছ নষ্ট করা হচ্ছে। যে গাছ ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকা সম্ভব না। আমরা আমাদের সেই উপকারী জিনিসটির ক্ষতি করে চলেছি। আমাদের পরিবেশ বিপন্ন হতে চলেছে। সবার কাছে আমার আকুল আবেদন গাছ রক্ষা করা হোক। এ বিষয়ে যশোর সরকারী এমএম কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিল্লুল বারী বলেন, গাছের জীবন আছে, কিন্তু প্রতিবাদ করতে পারে না। এই পেরেক মারাত্মকভাবে গাছের ক্ষতি সাধন এবং স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করছে। পেরেক মারায় বাকলটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং গাছের পানি ও খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। পেরেক মারায় সেই পথ দিয়ে জীবাণু প্রবেশ করে গাছকে রোগাক্রান্ত করছে এবং জাইলিম ভেসেল ও ফ্লয়েলের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। ফলে উদ্ভিদের ক্ষতিসাধন হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে গাছ মরেও যাচ্ছে। পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু বলেন, গাছে গাছে বিজ্ঞাপন, ব্যানার, ফেস্টুন ঝুলানোর কাজটা আসলে লুকিয়ে চুরিয়ে করা হয়। আমরা চেষ্টা করছি যাতে এই অপকর্ম বন্ধ হয়। গাছ ও পরিবেশ রক্ষার্থে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। -সাজেদ রহমান, যশোর থেকে
×