ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কটিয়াদী রক্তদান সমিতি

রক্তদানে আনন্দ

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ৭ জুলাই ২০১৮

রক্তদানে আনন্দ

কটিয়াদীতে স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়ে মুমূর্ষু রোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছে কটিয়াদী রক্তদান সমিতির সদস্যরা। গর্ভবতী নারীসহ এলাকার নানা জটিল রোগে আক্রান্ত এবং দুর্ঘটনাকবলিত রোগীর নিরাপদ রক্তের অভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া ছিল একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এমন অসংখ্য নজির রয়েছে। দিন দিন এর সংখ্যাও যখন বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় নিরাপদ রক্তের অভাব মিটাতে উপজেলার জালালপুর ফেকামারা গ্রামের শিক্ষিত তরুণ সংগঠক বদরুল আলম নাঈমের নেতৃত্বে ২০১২ সালে গড়ে উঠেছে কটিয়াদী রক্তদান সমিতি। শুরু করেন একজন সুস্থ ব্যক্তির রক্তদানের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ। এ সময় তিনি মানবতার কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করার বিষয়ে এলাকার যুবক-যুবতীদের উদ্বুদ্ধ করেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে জরুরী প্রয়োজনে রক্তের অভাব মিটাতে স্বেচ্ছায় রক্তদানে আগ্রহী এমন সাত শতাধিক যুবক-যুবতী ইতোমধ্যে সমিতির সদস্য হয়েছেন। তারা প্রায় দিনই কোন না কোন সদস্য মুমূর্ষু রোগীকে স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে ছুটে যাচ্ছেন উপজেলা বা জেলা সদরের যে কোন হাসপাতালে। এ পর্যন্ত সমিতির সদস্যরা এলাকার অসহায় হতদরিদ্র মুমূর্ষু রোগী ছাড়াও পাঁচ শতাধিক রোগীকে স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছে। পাশাপাশি সমিতির সদস্য সংখ্যা আরও বৃদ্ধির জন্য উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতাধিক ব্লাড গ্রুপ ক্যাম্পেইন, বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা, গণসচেতনতা মূলক গ্রুপ মিটিং করে রক্তদানে যুব সমাজকে উদ্বুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখে চলেছে। এ ব্যাপারে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারগণ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে। এ ব্যাপারে সমিতির সমন্বয়ক বদরুল আলম নাঈম জানান, সমিতিতে রক্ত মজুদের কোন ব্লাড ব্যাংক নেই। নেই কোন অফিস বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি। সদস্যদের শিরায় শিরায় প্রবাহমান রক্তই তাদের ব্লাড ব্যাংক। তিনি আরও জানান, মাদক, সন্ত্রাস, মারামারি, হিংসা বিদ্বেষ পরিহার করে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে আগ্রহী এমন সুস্থ এবং সুন্দর মনের যুবক-যুবতীদেরকেই সমিতির সদস্য করা হয়। জরুরী রক্তের প্রয়োজনে ফেসবুক আইডি ‘কটিয়াদী রক্তদান সমিতিতে রক্তের গ্রুপ লিখে বা মোবাইলে যোগাযোগ করলেই রক্ত দিতে সক্ষম এমন সদস্যদের সন্ধান করে ঠিকানা জানিয়ে দিচ্ছেন আর রক্তদাতা সশরীরে গিয়ে হাজির হন রোগীর পাশে। রক্ত দিয়ে চলে আসেন নীরবে নিভৃতে। যার কোন বিনিময় নেই। সমিতির সদস্য চরপুক্ষিয়া গ্রামের এবি সিদ্দিক জানান, রক্তদানে যে কি আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী একজন সুস্থ মানুষ ৩-৪ মাস পরপর রক্ত দিতে পারে। আমি এ পর্যন্ত ৩-৪ বার রক্ত দিয়েছি। স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক উপ-পরিচালক ও সমিতির উপদেষ্টা ডাঃ আব্দুল মুক্তাদির ভূঞা জানান, জরুরী প্রয়োজনে অনেক মুমূর্ষু রোগীকে স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়ে উপকার করে যাচ্ছে। বিশেষ করে অসহায় হতদরিদ্র গর্ভবতী মায়ের সন্তান প্রসবের সময় প্রয়োজনীয় রক্তের অভাব মিটাতে তারা বিশেষ সহযোগিতা করে আসছে। এতে বহু আর্তপীড়িত নতুন জীবন লাভ করছে। উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহাব আইনউদ্দিন জানান, কটিয়াদী রক্তদান সমিতি স্বেচ্ছায় রক্তদান করে আর্তমানবতায় সেবা করে যাচ্ছে। এমন কাজে যুব সমাজের আরও বেশি অংশগ্রহণ দেশ ও জাতির মঙ্গল বয়ে আনবে। -কাজী মাজহারুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে
×