ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী কর্মচারীদের দক্ষতা

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ৭ জুলাই ২০১৮

সরকারী কর্মচারীদের দক্ষতা

দেশের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বাস্তব পরিস্থিতি উঠে এসেছে। সেইসঙ্গে উদ্দীপনামূলক বার্তা মিলেছে। প্রধানমন্ত্রী সরকারী কর্মচারীদের সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে সরকারের প্রদত্ত বাজেট বাস্তবায়নে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আপনাদের কর্মোদ্দীপনার ওপরই জাতির উন্নয়ন নির্ভরশীল। দেশের উন্নয়নের জন্য কাজের গতি ত্বরান্বিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি যথার্থই বলেছেন, আমরা রাজনীতিবিদেরা শুধু উন্নয়নের পথ দেখাতে পারি, কিন্তু এই কাজের বাস্তবায়নের দায়িত্ব আপনাদের ওপরই বর্তায়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রথম বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বা এপিএ প্রবর্তন করা হয়। এবার পঞ্চম বছরের মতো এ চুক্তি স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট অর্থবছর সমাপ্ত হওয়ার পর ওই বছরের চুক্তিতে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রকৃত অর্জন মূল্যায়ন করা হবে। জনকল্যাণমুখী ও উন্নয়নকামী সরকারের আকার কখনোই স্থবির থাকে না, তা দিন দিন বিরাটত্ব লাভ করে। কম্পিউটারায়ন, প্রযুক্তি, অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধি, মোবাইল ফোন ব্যবহার ইত্যাদি ক্ষেত্রে অগ্রযাত্রা সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। নতুন নতুন জেলা, বিভাগ, উপজেলা, থানা হচ্ছে। নতুন নতুন অফিস হচ্ছে। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বাড়ছে। বেসরকারী খাত ও সরকারী খাতের মধ্যে বেতন-ভাতার পার্থক্য বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। বেসরকারী খাতের সুবিধা যেমন গাড়ি-বাড়ির সুযোগ সরকারী খাতে আছে। বোনাসের ব্যবস্থা হয়েছে। এমনকি পহেলা বৈশাখেও এখন উৎসবভাতা পাওয়া যায়। পদোন্নতির সীমাও বেড়েছে। চাকরি চলে যাওয়ার বিশেষ নজির নেই। সরকারী চাকরিতে অবসর আছে। সরকারী কর্মচারীদের দক্ষতার প্রশ্নটি মাঝেমধ্যে উঠলেও বাস্তবতা হচ্ছে তাদের দক্ষতার অভাব নেই। তবে শ্রুতিকটু হলেও এমনটাও কিছু ক্ষেত্রে বিরাজ করছে যে, অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে কছুটা গা-ছাড়া ভাব রয়েছে। বলা ভালো রয়েছে কাক্সিক্ষত গতির অভাব। অথচ গতি না বাড়ালে প্রত্যাশিত সাফল্য আসবে কিভাবে? প্রসঙ্গত আমাদের প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, আন্তরিকতার ওপরই উন্নয়ন নির্ভর করে। কাজেকর্মে আন্তরিকতার অভাব থাকলে মানুষ দায়িত্ব পালন করে যন্ত্রবৎ। সেখানে প্রাণের ঘাটতি থাকে। ফলে কর্মসম্পাদন রুটিন অনুযায়ী হলেও তাতে আসে না বাড়তি উন্নতি। প্রত্যাশিত অগ্রযাত্রা। নিজের অবস্থান বারবার পরিষ্কার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ থেকে একজন রাষ্ট্রনেতার পরিকল্পনার দৃঢ়তা, নিজের প্রতি আস্থা এবং সামগ্রিক বিচারে দেশবাসীর জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ বিষয়ে তাঁর মনোভাবের পরিচয় মেলে। সরকারপ্রধান তখনই সম্পূর্ণরূপে সফলতা পান যখন তার সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ নিজের সবটুকু শ্রম দিয়ে দেশের সেবা করেন। সরকারী কর্মচারীদের শুধু দক্ষতা বাড়ালেই চলে না, তাদের দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি করাও একান্তভাবে প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী সেই তাগিদও দিয়েছেন। কারণ সরকার যদি লক্ষ্য অর্জন, সমস্ত কাজ বা সরকারী কর্মকাণ্ডগুলো ভালভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে, তার সুফল স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদীভাবে এদেশের মানুষ পাবে। ২০৪১ সালের কর্মপরিকল্পনায় মাঠপর্যায়ে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা ও চিন্তাভাবনা সন্নিবেশনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক আহ্বান সরকারী কর্মচারীরা গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করবেন, এটাই প্রত্যাশা। জনগণের করের টাকায় তাদের বেতন-ভাতা হয়ে থাকেÑ এই সত্য ধারণ করে আগামীতে যথোপযুক্ত দক্ষতা, আন্তরিকতার সঙ্গে কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে তারা দেশকে আরও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবেনÑ এটাই মানুষের চাওয়া।
×