ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আষাঢ়েও বৃষ্টিহীন বরেন্দ্র এলাকা ॥ বিপাকে চাষী

প্রকাশিত: ০২:৫৪, ৭ জুলাই ২০১৮

 আষাঢ়েও বৃষ্টিহীন বরেন্দ্র  এলাকা ॥ বিপাকে  চাষী

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ পঞ্জিকার পাতায় এখন বর্ষাকাল। আষাঢ়ের শেষ সপ্তাহ দেখতে দেখতে চলে এলেও বর্ষার চিরচেনা রূপের দেখা মিলছে না প্রকৃতিতে। আকাশে মেঘের ঘনঘটা তেমন নেই। বৃষ্টির অভাবে আষাঢ়েও খটখটে মাঠ। অনাবৃষ্টিতে তাই মাথায় হাত পড়েছে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের। আউশ ধানের চারা রোপণের সময় শেষ হয়ে গেলেও বৃষ্টির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে এই অঞ্চলের আউশের আবাদ। বৃষ্টির অভাবে অনেকে সেচ দিয়ে আউশের চারা রোপণ করছেন। এতে একদিকে বাড়ছে ধানের উৎপাদন খরচ অন্যদিকে কৃষিবান্ধব সরকারের পক্ষ থেকে আউশ আবাদ বৃদ্ধির জন্য নানা প্রণোদনা দেয়ার পরেও প্রয়োজনীয় বৃষ্টির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা। আউশ চাষী ও কৃষিবিদরা জানান, বর্ষা মৌসুমে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষিজমি বৃষ্টির জলে টইটম্বুর থাকে। কৃষকরা সাধারণত এই বৃষ্টির জলেই আউশের চারা রোপণ করেন। কিন্তু এ বছর আষাঢ়ের শেষ সপ্তাহেও দেখা মিলছে না কাক্সিক্ষত বৃষ্টির। এই পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়েছেন আউশ চাষীরা। বৃষ্টির অভাবে অনেকে আবার সেচ দিয়ে চারা রোপণ করছেন। এতে বিঘায় বাড়তি খরচ পড়ছে এক থেকে দেড় হাজার টাকা। তাদের আশা এখন না হলেও পরে বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি থেকেই প্রয়োজনীয় পানি পাবে আউশের ক্ষেত। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে জানা গেছে, এ বছর রাজশাহী জেলায় আউশ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার হেক্টর। কৃষি বিভাগের হিসাব মতে আউশের চারা রোপণের সময় শেষ হলেও অনাবৃষ্টির কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি। এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজার ১৬৯ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হয়েছে। গত বছর এই সময়ে আবাদ হয়েছিল ৪৭ হাজার ৯২৯ হেক্টর জমিতে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, এ অঞ্চলে সর্বশেষ ভারি বৃষ্টি হয়েছে গত ১০ জুন। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার। এরপর থেকে এই অঞ্চলে শুরু হয়েছে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ। এ পর্যন্ত আর তেমন বৃষ্টিও হয়নি উল্লেখ করার মতো। গত ১৫ জুন রাজশাহীতে ছিল মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। চলতি মাসে তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি না উঠলেও দেখা নেই বৃষ্টির। পবার কর্ণহার এলাকার চাষী জাইদুর রহমান ও গোদাগাড়ী নবাইবটতলা এলাকার চাষী রবিউল ইসলাম জানান, বিগত বছরগুলোতে এই সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় আউশ চারা রোপণে তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু এবার বৃষ্টির দেখা নেই। এদিকে আউশ চারা রোপণের মৌসুমও শেষের দিকে। অনেকে ধানের দাম ভাল থাকায় বাড়তি খরচ করে সেচ দিয়ে চারা রোপণ করেছে। রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি তথ্য কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ-হেল-কাফি বলেন, এই অঞ্চলে আউশ ধান সাধারণত বৃষ্টিনির্ভর। কিন্তু এবার বর্ষা মৌসুম শুরু হলেও সেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে না। অথচ চারা রোপণের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই তিনি চাষীদের সেচ দিয়ে হলেও তাড়াতাড়ি চারা রোপণের পরামর্শ দিয়েছেন। জানা গেছে, এবার জেলায় উফশী ও নেরিকা আউশ চাষে ১২ হাজার ১৫০ জনকে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। উফশী ও নেরিকা আউশ-এ প্রতি বিঘা জমির জন্য প্রত্যেক চাষীকে ৫ কেজি বীজ, ২০ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি ডিএপি, ১০ কেজি এমওপি এবং সেচ বাবদ ৫শ’ টাকা উপকরণ সহায়তা দেয়া হয়। এছাড়াও নেরিকা ধানের জন্য অতিরিক্ত ৫শ’ টাকা দেয়া হয়।
×