ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঘর পেয়ে গৃহহীন পরিবারের মুখে ফুটেছে হাসি

প্রকাশিত: ০২:৫০, ৭ জুলাই ২০১৮

ঘর পেয়ে গৃহহীন পরিবারের  মুখে ফুটেছে হাসি

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে একটি করে নতুন ঘর পেয়ে অসহায় গৃহহীন পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটেছে। দেশের সব গৃহহীন পরিবারের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় কাপাসিয়া, শ্রীপুর, কালীগঞ্জ উপজেলার কয়েক শ’ গৃহহীন পরিবারকে ইতোমধ্যে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আরও পরিবারকে পুনর্বাসনের কাজ চলছে। সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, কাপাসিয়া উপজেলার ফেটালিয়া গ্রামের বাসিন্দা বিধবা আমেনার স্বামী সামশুদ্দিন প্রায় ৯বছর আগে মারা যান। আমেনা কানে কম শোনেন। পাতার ছাউনি আর বেড়ার তৈরি একমাত্র ছোট্ট একটি ঘরেই চার মেয়েকে নিয়ে ছিল তাদের বসবাস। নিরপত্তাহীনতা আর আতঙ্কে তাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটত। দিনে যেনতেন রাতে কুকুর, বেড়াল, শিয়াল, সাপ ঢুকে পড়ত ওই ঘরে থাকা খাবার খাওয়ার জন্য। তাই খাবার রক্ষায়, জীবন রক্ষায় কেউ ঘুমাতেন, আর কেউবা জেগে থেকে পালা করে ওই ঘর পাহারা দিতেন। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় কয়েক বছরের মধ্যে তার চার মেয়েরই বিয়ে হয়ে যায়, প্রকৃতির নিয়মেই মাকে রেখে তাদের চলে যেতে হয় যার যার স্বামীর সংসারে, শ্বশুরবাড়িতে। সেখান থেকেই যতটুকু সম্ভব মেয়েরা মায়ের খোঁজখবর রাখেন, সহযোগিতা করেন। তার কোন ছেলেসন্তান নেই। স্থানীয় তারাগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ওসমান গনি জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে এ’বাড়ি ও’বাড়ি ঝিয়ের কাজ করে যা পেতেন তা দিয়েই তার প্রতিদিনের খাবারের চাহিদা মিটলেও মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা সম্ভব হতো না তার পক্ষে। আমেনা এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তার বয়স প্রায় ৭৫ হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে কারো ভুলে তার বয়স কম ওঠায় তিনি বয়স্ক ভাতাও পান না। বিধবা ভাতাও পান না বলে জানান আমেনা। মানুষের বাড়ি কাজ করারও তেমন শক্তি তার এখন নেই। এমন সময় স্থানীয় আশরাফুল আলম খোকন (যিনি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে উপ প্রেস সচিব পদে কর্মরত) প্রধানমন্ত্রীর এক প্রকল্পে ঘর পাওয়ার জন্য যার জমি আছে, ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় আমেনার নামটি তালিকাভুক্ত করেন। এর কিছুদিন পরই সরকারী লোকজন কাঠ, ইট, টিন, সিমেন্টসহ নানা গৃহনির্মাণের সামগ্রী ও মিস্ত্রি তার বাড়িতে পৌঁছে যায়। দ্রুত তৈরি হয়ে গেল তার এক কামরার পাকা ফ্লোর আর টিনের বেড়া, চৌচালা টিনের ঘর এবং রিং-স্লাব দিয়ে একটি উন্নত টয়লেট। এর জন্য তার একটি টাকাও দিতে হয়নি। শুধু দিতে হয়েছে জমির দলিল আর জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধনের কপি এবং ছবি। তবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি ঘরের সঙ্গে বিশুদ্ধ পানির জন্য একটি টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। আমেনা ঘরের কথা বলতে গিয়ে আবেগ জড়িতকণ্ঠে বলেন, শেখের বেটিরে যেন আল্লাহ আমার চাইতে বেশি সুখ-শান্তি দেন। সারাজীবন যেন সব দুঃখীর পাশে থাইক্যা শান্তিতে দেশ চালাইতে পারেন। দ্বিতীয় প্রকল্পের দ্বিতীয় তালিকায় একই রকম ঘর পেলেন কাপাসিয়া উপজেলার একঢালা গ্রামের ঝালমুড়ি বিক্রেতা আব্দুল আজিজ। তারও বাবা-মা কেউ নেই। নানির দেয়া একখ- জমিতে খুপড়ি ঘর তুলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাস করছেন। তিনি বলেন, আগে জানতাম না শেখ হাসিনা বিনা পয়সায় ঘর তুলে দেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ওসমান গনির সঙ্গে দেখা করি। তিনি পরে আমার নামটি তালিকায় নামটি তুলে দেন। এখন আমি টিনের ঘরে শান্তিতে বাস করছি। একই উপজেলার ঘিঘাট গ্রামের বাসিন্দা বিধবা পারভীন (৩৫) জানান, ১০মাস আগে (গেল কোরবানি ঈদের দিন বিকেলে) স্বামী স্ট্রোক করে মারা যান। তারও একটি ছাপড়া ঘর ছিল। বৃষ্টি হলেই ঘরের মেঝেতে পানি জমত, ব্যাঙ্গ-মাছ ঢুকে পড়ত। মাচা টানিয়ে তাতে সন্তানদের নিয়ে ঘুমাতাম। বড় ছেলে পারভেজ বাসে হেলপারি করে। তার আয়ে চলে পাঁচজনের সংসার। কিন্তু ঘর বানানোর সামর্থ্য ছিল না। পরে কয়েক মাস আগে শেখ হাসিনা আমাকে সেমিপাকা ঘর এবং উন্নত টয়লেট করে দিয়েছেন। এখন পাকা ঘরে সুখেই আছি, ভাল আছি। একই অনুভূতির কথা জানালেন একঢালা গ্রামের বিধবা হালিমা খাতুন (৪০), আব্দুল রশিদ (৫৩) সহ অনেকে। কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাকছুদুল ইসলাম জানান, তার উপজেলায় ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ওই প্রকল্পের পাকা মেঝসহ ২৪টি বারান্দাসহ টিনের ঘর এবং পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে স্যানিটারি টয়লেট নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ উপজেলায় এ প্রকল্পের আওতায় একই ধরনের ৩৭২টি টিনের ঘর ও টয়লেট নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা জানান, তিনি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তার উপজেলায় এ ধরনের দেড় শ’র মতো ঘর-টয়লেট নির্মাণের প্রকল্প পেয়েছেন। তবে বর্তমানে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বেড়ে যাওয়ায় একলাখ টাকায় ঘর-টয়লেট নির্মাণ কাজ কষ্টসাধ্য হচ্ছে।
×