ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মিলু শামস

শ্রদ্ধাঞ্জলি ॥ নিয়ামত ভাইকে নিয়ে দু’ছত্র

প্রকাশিত: ০৭:৫০, ৬ জুলাই ২০১৮

শ্রদ্ধাঞ্জলি ॥ নিয়ামত ভাইকে নিয়ে দু’ছত্র

নিজস্ব রাজ্যপাট বুকের বাঁ দিকে ছিলেন লেনিন ডানে রবীন্দ্র-নজরুল; মস্কোভা নাকি রাঢ় বাংলা আধিপত্য কার ছিল বেশি বলা কঠিন এই নিয়ে রাজ্যপাট সাজিয়েছিলেন ‘অপর’রাজ্যে উঁকি দেননি কোন দিন। ** শূন্য চেয়ার বাংলামোটর থেকে হেঁটে এসে নিউ ইস্কাটন পকেট থেকে বের করে মোবাইল, মানিব্যাগ; ব্যাংকের চেক বই সামলাতে সামলাতে রহস্য করতেন- বুঝলেন, শহর ছেয়ে গেছে বহুরূপী গোয়েন্দায় নিরাপদ নয় কেউ, অক্ষিগোলক গ্রাস করেছে এক অক্ষির বলয়; এই যে চেয়ার দেখছেন এখানেও আছে গোয়েন্দা নজরদারি। ইশারায় দেখিয়ে নিজের চেয়ার হাসতেন মিটি মিটি। চেয়ারটি হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে সকালের রোদে নির্বিরোধী মানুষটি শুধু নেই মানুষবিহীন চেয়ার কী অর্থহীন! ** নিঃসঙ্গ ট্রেনের যাত্রী শেষ রাতে ছোপ ছোপ অন্ধকার পেরিয়ে লোকালয়ের দিকে যাত্রা করেছিল যারা তারা সবাই একে একে মিশে গেছে উৎসুক জন¯্রােতে। হৈ হট্টগোল ভরা বটতলা মোড়ের কাঁটাঝোপ পেরোতে পেরোতে কেউ কেউ সিদ্ধান্ত বদলে নেমে পড়েছিল কাছের জংশনে। ইলেক্ট্রিক তারে নেগেটিভ পজেটিভে জড়িয়ে ঝুলে থাকা মৃত শালিকের শরীর, দিগন্তে আঁচল এলানো ধানক্ষেতে ইরিগেশনের পাওয়ার পাম্পের জল¯্রােত, অরণ্যের শিখর ছুঁয়ে অস্পষ্ট বেরিয়ে থাকা বিষণœ মঠের চূড়া- এইসব পেরিয়ে সন্ধ্যার আগেই ট্রেন থেমেছিল স্টেশনে। একে একে নেমে যায় সব যাত্রী ফাঁকা হতে হতে নিঃসঙ্গ হয় ওয়েটিং রুম মাস্টারও দিনের সব কাজ গুটিয়ে পা রাখেন বাড়ির পথে। শুধু একজন থেকে যায় শেষ ট্রেনের লাল রঙা বগিটিতে সবার অলক্ষ্যে, ডোরাকাটা স্বপ্ন নিয়ে বুকে। ** স্বাপ্নিক চাষী রাঢ় বাংলার উষড় ভূমিতে স্বপ্নের আবাদ করেছিল যে চাষী তার পকেটে ‘ওয়ার্কার্স অব অল ল্যান্ডস ’-এর মানচিত্রখানা জীর্ণ হতে হতে হয়ে গিয়েছিল অতিশয় প্রাচীন তবে বাতিল নয় কোনোমতেই; নিত্য বীজ বুনতো ওই মানচিত্র দেখে সে জমির আনাচে কানাচে নবীন চাষীর মগ্নতা নিয়ে স্বপ্ন দেখতো সোনালি ফসলের। কাল বোশেখি ঝড় তছনছ করেছে ফসলের ক্ষেত বহুবার; ইঁদুরের উৎপাত. ছিঁচকে চোর, লাঠিয়াল লেগেই ছিল পিছু- কিছুই টলাতে পারেনি তাকে স্বপ্নের চাষাবাদ থেকে রোদ ঝড় বৃষ্টিতে একঠায় আগলে রেখেছে স্বপ্নের ক্ষেত। শেষবার যখন ডাকাত পড়ল ক্ষেতে ক্রেন তুলে দিয়ে উপড়ে দিল সব ল- ভ- ফসলের মাঠ; তখনো দমেনি চাষী স্মিত মুখে ছিল তার দৃপ্ত উচ্চারণ- ‘ও কিছু নয়, আবার ফলবে ফসল নিশ্চয় অন্য দিন অন্য কারো হাতে।’ ** গরম চায়ে টোস্ট মোড়ের চাওয়ালার দোকানে ধোঁয়া ওঠা এককাপ চা, দুটো টোস্টের ঘ্রাণে শৈশব এসে দাঁড়ায় ল্যাম্পপোস্টে হেলান দিয়ে ঠিক তার সামনে। পেছনে প্রাসাদোপম নর্দমায় ভনভন করে এঁটো মাছি পচাপাতা, নোংরা আবর্জনা- ফুস ফুসের রিফ্রেশ বাটন ক্লিক করে চায়ের কাপে ভেজান টোস্ট যেন মায়ের হাতে গরম ভাঁপাপিঠা বিশুদ্ধ খেজুড় গুড়ে; শৈশব এসে যথারীতি দাঁড়ায় ল্যাম্পপোস্টে হেলান দিয়ে। হায় র‌্যাডক্লিফ লাইন! সিরিল উকিল, তুমি কি জানো কতটা দহন থাকে শিকড় উন্মুল মানুষের বুকে? কত শত কোটি ঝর্ণার জল রক্তের ধারা হয় অবিরাম চুইয়ে পড়ে হৃদয়ের চৌকাঠ ছুঁয়ে? কোনদিন জানবে না চিনবে না ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ের উষ্ণ মমতা ল্যাম্পপোস্টে লেপ্টে থাকা বীরভূমের সোনালি শৈশব-কথা।
×