ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাখাওয়াত হোসেন

কঠিন প্রত্যয়ে এগিয়ে চলা

প্রকাশিত: ০৭:৩৮, ৬ জুলাই ২০১৮

কঠিন প্রত্যয়ে এগিয়ে চলা

মারজান হক এটিএন বাংলার নিয়মিত প্রচারিত সমাজ সচেতনতামূলক ব্যতিক্রমধর্মী টকশো ‘যে কথা কেউ বলেনি’ উপস্থাপনা করছেন। যেখানে সমাজ সচেতনতামূলক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এবং সমাজে বিদ্যমান অথচ কম আলোচিত কিন্তু অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা হয়। এই ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগে সমাজের মানুষের সচেতনতা বাড়ছে এবং অনুষ্ঠানটি সমাজ গঠনে বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই টকশোতে বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবীসহ রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারক মহলের ব্যক্তিবর্গ আলোচনার জন্য আমন্ত্রিত হন। তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে বিষয়গুলোর বহুমাত্রিকতা, গবেষণাধর্মী বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে আসায় ‘যে কথা কেউ বলেনি’ টকশোটি পেয়েছে এক অনন্য ও বিশেষ মাত্রা-যা সমাজ ভাবনায় ও সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অনুষ্ঠানটির সফলতায় গবেষক ও অন্যান্য সমাজ কর্মীদের টনক নাড়তে সক্ষম হয়েছে। ‘যে কথা কেউ বলেনি’ অনুষ্ঠানের জনপ্রিয় ইপিসোডগুলো হলোÑ ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম ও যুদ্ধ শিশু’, ‘আলোকিত মানুষ ও যুগের ভাবনা’, ‘প্রবাসী শ্রমশিল্প ও ভবিষ্যত বিষয়বস্তু’, ‘পরিবেশবান্ধব পোশাকশিল্প ও ভবিষ্যত ভাবনা’, ‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ও নারী নেতৃত্ব’, ‘নাগরিক জীবন দর্শন ও বাস্তবতা’, ‘নাগরিক জীবনে পেনশন ভাবনা’ ইত্যাদি অন্যতম। প্রকৃতঅর্থে, দর্শক শ্রেণী তথা আপামর জনসাধারণের মধ্যে পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে নতুন করে ভাবনার উদ্রেক ঘটানোই অনুষ্ঠানের অন্যতম সফলতা। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক মারজান হক বাংলাদেশ বেতারের একজন তালিকাভুক্ত শিল্পী। তিনি ২০০৪ সাল হতে বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান সঞ্চালনার কাজ করছেন। বাংলাদেশ বেতারের জনপ্রিয় ‘যুবতরঙ্গ’ এবং ‘মহানগর’ নামক দুটি অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। শুধু টেলিভিশনেই নয় মঞ্চেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা এবং আবৃত্তি অঙ্গনেও রয়েছে তার দৃপ্ত পদচারণা। পাশাপাশি মারজান হক একটি বেসরকারী বিশ^বিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়ন করেছেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় রম্য গল্প ও ফিচার পাতায় কাজ করেছেন। এছাড়াও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রকমের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) তে পিএইচডি করছেন ‘ক্ষুদ্র ঋণ ও নারীর ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক শিরোনামে। ছাত্রজীবন হতেই তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে তিনি তাঁর জীবনের আদর্শ হিসেবে মনে করেন। তিনি মনে করেন যে, বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে নারীকেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। যে জন্য নারীদের শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করা জরুরী। মারজান হক শিক্ষকতার কারণে নতুন প্রজন্মকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তিনি মনে করেন, নতুন প্রজন্ম অনেক বেশি সম্ভাবনাময় কিন্তু এ সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে পরিচর্যার মাধ্যমে সঠিক দিক নির্দেশনায় সঠিক জায়গায় পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব সবার। সেজন্য পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে দেশের নেতৃত্ব সুরক্ষিত ও শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে চিরায়ত বাঙালীর বৈশিষ্ট্য এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে যা নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে। তিনি এমন একটি সমাজব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেন, যেখানে ব্যক্তি হিসেবে নারী স্বাতন্ত্র্যের বিকাশ ঘটবে। নারী মুক্তি, নারীর কল্যাণ এবং নারীর মানবিক বিকাশের জন্য যথোপযুক্ত সুযোগ সুবিধা থাকবে পুরুষের ন্যায়। নারীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় পুরুষেরা সহযোগী হয়ে কাজ করবে। নারীরা যাতে বিশ^দরবারে বাংলাদেশের মান-সম্মান ও মর্যাদাকে আরও সমুন্নত করতে পারে তার ভিত্তিতে নারীদের সুযোগ ও সহায়তা প্রদান করতে হবে। তিনি আধুনিক একটি বিশে^র কথা ভাবেন যেখানে নারীকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করা হবে এবং কাজের স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। মারজান হক আরও মনে করেনÑ পাশাপাশি নারী নেতৃত্বের বিকাশ রুট লেভেল পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে নারীদের যেভাবে অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হচ্ছে গ্রামীণ তথা ইউনিয়ন পর্যায়ে নারী নেতৃত্বের বিকাশ সেভাবে হচ্ছে না। নেতৃত্বে বিকাশের পথে বাধাগুলো চিহ্নিত করে রাষ্ট্রকে নারীদের নেতৃত্ব পর্যায়ে নিয়ে আসার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এ ব্যাপারে পারিবারিক সচেতনতাবোধ ও সামজিক পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। তিনি জোরের সহিত একটি বিষয় উল্লেখ করেনÑ পুরুষকে নারীর প্রতিযোগী না ভেবে পরস্পরের সহযোগী ভেবে কাজ করলে নারীদের সামনের পথ অনেকটাই সহজতর হবে। মারজান হক অবসর সময়ে বই পড়তে ভালবাসেন। তিনি দেশে বিদেশের প্রসিদ্ধ জায়গায় ঘুরতেও পছন্দ করেন। তিনি মনে করেনÑ নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে মুক্ত বুদ্ধির চর্চা ও অসাম্প্রদায়িকতার অনুশীলনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি মডেল দেশ হিসেবে বিশে^র বুকে প্রতিষ্ঠিত করা সক্ষম হবে।
×