ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভাসমান পাথরে শিল্পকর্ম

প্রকাশিত: ০৭:৩৬, ৬ জুলাই ২০১৮

ভাসমান পাথরে শিল্পকর্ম

শিল্পকর্মের মধ্যে প্রকৃতি, ডিজাইন ও প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটনো মোটাই সহজ কাজ নয়। আমস্টারডামের দুই শিল্পী সেই অসাধ্যসাধন করে অভিনব সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে দর্শকদের মুগ্ধ করছেন। ওজনহীন অবস্থায় মুক্তির অনুভূতি, প্রকৃতির অনুকরণ, বোধশক্তি আরও সতেজ করা এমন সব অনুভূতির ভিত্তিতে স্টুডিও ড্রিফট তাদের শিল্পকর্মে প্রকৃতি, ডিজাইন ও প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটায়। আমস্টারডামের দুই শিল্পী এমনকি বিশাল সিমেন্টের ব্লকও শূন্যে ভাসাতে পেরেছেন। লনেকে খরডেইন ও রাল্ফ নাউটা ‘স্টুডিও ড্রিফট’ গড়ে টিম হিসেবে অভিনব সহযোগিতার নজির গড়েছেন। লনেকে বলেন, ‘মস্কো থেকে ফিরে রাল্ফ বিমান থেকেই টেলিফোন করে আমাকে জানালো, যে তার মাথায় এক অভিনব আইডিয়া এসেছে। বলল, আমাদের কংক্রিটের ভাসমান ব্লক তৈরি করতে হবে। ভেবে দেখো, সেটা ভাসছে! কথাটা সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে ধরল। ড্রিফটার্স নামের চলচ্চিত্রে স্কটিশ হাইল্যান্ডের প্রেক্ষাপটে ভাসমান পাথর পরিবেশের সঙ্গে বৈসাদৃশ্য তুলে ধরে। তারা এমন প্রণালী খুঁজছিল, যা তার সঙ্গে খাপ খায়। কারণ প্রাকৃতিক প্রণালির সঙ্গে তার সামঞ্জস্য নেই। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমরা পরিবেশেরই প্রাকৃতিক অংশ। তাই আমাদের জীবন একেবারে বিপরীত।’ এই ভাস্কর্যের নাম ‘ভঙ্গুর ভবিষ্যত’। অসাধারণ আলোকসজ্জার মাধ্যমে ২০০৭ সাল থেকে স্টুডিও ড্রিফট আন্তর্জাতিক স্তরেও নজর কাড়ছে। আসল ফুল দিয়েই এটি তৈরি, ফু দিলে যার পাপডড় উড়ে যায়। এটি প্রকৃতির ভঙ্গুর চরিত্রের প্রতীক। ওয়ার্কশপে ড্যান্ডেলিয়ন ফুল শুকিয়ে প্রত্যেকটি পাপডড় আঠা দিয়ে লাগানো হয়, তারপর এলইডি আলো বসানো হয়। একঝাঁক পাখির ওড়ার পথ কিভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব? ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথমবার তাদের শিল্পকর্ম ‘ফ্র্যানচাইসি ফ্রিডম’ প্রদর্শিত হয়েছিল। মায়ামি সৈকতে ৩০০ ড্রোন আকাশ থেকে সেই সৃষ্টি ফুটিয়ে তুলেছিল। রাল্ফ নাউটা বলেন, ‘একে অপরের অস্তিত্বে প্রতিক্রিয়া দেখায়, এমন ড্রোনের ঝাঁক আনার ক্ষেত্রে আমরাই পথিকৃত হতে চেয়েছিলাম। আসল পাখির ঝাঁকের ওড়ার মধ্যে যে কাব্যময় নক্সা ফুটে ওঠে, তা আনতে চেয়েছিলাম। মুক্তি আসলে কী, সেই প্রশ্ন উঠে আসে। নাকি আমরা মুক্তি সম্পর্কে একটা ভ্রমের মধ্যে রয়েছি! আমরা কি আলাদা অথচ স্বাধীন থাকতে চাই, নাকি এক সামাজিক কাঠামোয় নিজেদের সঁপে দিয়ে তেমন স্বাধীন থাকতে চাই না?’ এই গাছে আলোকসজ্জা দর্শকদের হৃদস্পন্দন ও নাড়াচাড়া অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখায়। মুগ্ধ দর্শকরা নিজেদের উপলব্ধির কথা বলেন। কেউ বলেন, ‘মনে হয় আকাশে ছোট ছোট তারা রয়েছে। এটা আমাকে আনন্দ দেয়। অতি সুন্দর।’ একজন বললেন, ‘খুবই নাড়া দেয়। মনে হয় আমি কোথাও নাচতে যাচ্ছি, কারণ খুবই প্রেরণা যোগায়, বেশ প্রাণবন্ত।’ এই ভাস্কর্যও সেন্সরের মাধ্যমে দর্শকদের নড়াচড়া অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখায়। যেন জীবন্ত এক সত্তা। লনেকে খরডেইন বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আপনি কাজকে জীবন্ত করে তুলছেন। এমন মুভমেন্ট যোগ করছেন, যা তার নিজস্ব গতিবিধির ভিত্তিতে আপনাকে ছুঁতে পারে। ভাবনাচিন্তার প্রয়োজন নেই, আপনি সেটা অনুভব করতে পারবেন। দৃষ্টি, বিস্ময়, অনুভূতি, অভিজ্ঞতা। ভবিষ্যত সম্পর্কে স্বপ্ন ও তা কার্যকর করছে স্টুডিও ড্রিফট। সূত্র : বিবিসি, ডয়েচ ভেলে
×