ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জয়ের নায়ক হবেন কে- এমবাপে নাকি সুয়ারেজ?

প্রকাশিত: ০৭:১০, ৬ জুলাই ২০১৮

জয়ের নায়ক হবেন কে- এমবাপে নাকি সুয়ারেজ?

মোঃ মামুন রশীদ ॥ গত বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল ফ্রান্স, আর উরুগুয়ে বিদায় নিয়েছিল দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে। এডিনসন কাভানি ও লুইস সুয়ারেজে দুর্দান্ত উরুগুয়ের আক্রমণভাগ এবার দেশটিকে গত আসরের সাফল্য পেরিয়ে যেতে হয়েছে সহায়ক। তবে এবার সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে উপযুক্ত সঙ্গী কাভানিকে হয়ত পাচ্ছেনই না সুয়ারেজ। তাই লাতিন এই দেশটির সব নির্ভরতা থাকবে তার ওপরেই। আর ফরাসীরা এবার জ্বলে উঠেছে তরুণদের দুরন্ত গতি ও নিখুঁত কৌশলের সুবাদে। বিশেষ করে আক্রমণভাবে মাত্র ১৯ বছর বয়সী কিলিয়ান এমবাপে ইতোমধ্যেই প্রতিপক্ষের জন্য আতঙ্ক হয়ে গেছেন। দ্বিতীয় রাউন্ডে ফেবারিট আর্জেন্টিনাকে বিদায় করে দেয়ার মূল নায়ক ছিলেন এমবাপে, করেছিলেন জোড়া গোলের রেকর্ড। কিংবদন্তি পেলের পর বিশ্বকাপের নকআউটে ২০ বছরের কম বয়সী কোন খেলোয়াড়ের গোল করার ঘটনা ছিল সেটি। ফ্রান্স তাই এ ম্যাচেও তার লক্ষ্যভেদের প্রত্যাশা করবে কায়মনে। উরুগুয়ের সেরা অস্ত্র সুয়ারেজ ও কাভানি। তবে দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই খেলোয়াড়কে ছাড়াও যে লাতিন দেশটি লড়াই করতে পারে, তার প্রমাণ তারা দিয়েছে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে। ২০১৫ সালে সাবেক নেপোলি তারকা ও সুয়ারেজকে ছাড়া বলিভিয়া ও কলম্বিয়ার বিপক্ষে খেলা দুটো ম্যাচেই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল ‘লা সেলেস্তেরা’। যে কারণে সুয়ারেজ জোর গলায় বলতে পারছেন, ‘উরুগুয়ে একক খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভরশীল দল নয়।’ শেষ ষোলোর ম্যাচে পর্তুগালের বিপক্ষে কাভানি একাই দুটি গোল করেন। কিন্তু ৭৪ মিনিটে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর কাঁধে ভর রেখে মাঠ ছাড়েন কাভানি। তখন মনে হচ্ছিল, হয়তো চোটটা অত গুরুতর নয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, বেশ খারাপ চোটেই পড়েছেন কাভানি। টানা তিনদিন দলের অনুশীলনে অংশ নেননি। ক্রমাগত চিকিৎসা চলছে বাঁ পায়ে। দলের যে খেলোয়াড় কোয়ার্টার ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে তিন দিন অনুশীলন করতে পারেন না, মূল ম্যাচে তাকে খেলানোটা বেশ বড় ঝুঁকিই হয়ে যায়, সে যত বড় তারকাই হোন না কেন। তাই এর মধ্যেই কাভানির বিকল্প হিসেবে কে নামবেন ফ্রান্সের বিপক্ষে, এই নিয়ে গবেষণা শুরু করে দিয়েছেন কোচ অস্কার তাবারেজ। কাভানি না খেললে তাবারেজের পছন্দের ছক ৪-৪-২। সেক্ষেত্রে সুয়ারেজের সঙ্গী হবেন জিরোনার ক্রিশ্চিয়ান স্টুয়ানি। আবার খেলাতে পারেন উইঙ্গার ক্রিশ্চিয়ান রড্রিগুয়েজকেও, সে ক্ষেত্রে ৪-৪-২ ছক থেকে সরে এসে ৪-৩-৩ বা ৪-২-৩-১ ছকে খেলতে পারে উরুগুয়ে, সামনে একক স্ট্রাইকার হিসেবে সুয়ারেজকে রেখে। অর্থাৎ এ ম্যাচে ফরাসী রক্ষণভাগ ভেদ করার জন্য একমাত্র ভরসা সুয়ারেজই। গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচে একটি করে মোট দুটি গোল করেছেন সুয়ারেজ। এ বিশ্বকাপেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শততম ম্যাচ খেলা এ ফরোয়ার্ডের এখন ১০২ ম্যাচে দেশের পক্ষে সর্বাধিক ৫৩ গোল রয়েছে। আরেকটি গোল করতে পারলে তিনি দেশের পক্ষে বিশ্বকাপে সর্বাধিক গোলদাতা অস্কার মিগুয়েজকে (৮) ছুঁয়ে ফেলবেন। তবে এরচেয়েও জরুরী বিষয় দলকে জেতানোর ক্ষেত্রে সুয়ারেজের বিকল্প নেই লা সেলেস্তেদের। তবে কাভানিকে সঙ্গী হিসেবে পেলে নিজের খেলাটা অনেকখানিই খুলে যায়। এ বিষয়ে সুয়ারেজ বলেন,‘৩০ লাখ উরুগুইয়ানের মধ্যে আমিও অপেক্ষায় আছি এদির (কাভানি) জন্য। জানি বিষয়টা জটিল, কারণ চোটটা মোটেও সহজ নয়, তাছাড়া সেরে ওঠার জন্য কয়েকটা দিন পাবে মাত্র। তবে আমি ওর ইচ্ছাশক্তি, আচরণ ও দলের প্রতি দায়িত্ববোধ সম্পর্কে জানি, যদিও সবকিছু ওর ওপর নির্ভর করছে না। যদিও দলে অনেক খেলোয়াড় আছে, যারা একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। পরিস্থিতি শুধু একজন খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভর করছে না, উরুগুয়ে মাঠে দেখিয়েছে আমরা দলীয় পারফর্মেন্সের ওপর নির্ভরশীল।’ তবে প্রতিপক্ষ ফ্রান্সও এবার দলগতভাবে বেশ সংঘবদ্ধ। একক কারও ওপর নির্ভরশীলতা নেই দলটির। তারুণ্যনির্ভর দিদিয়ের দেশমের দলটি এবার ইতোমধ্যেই নজর কেড়েছে দুরন্ত গতি আর শারীরিক সামর্থ্যে বেশ এগিয়ে থাকার জন্য। ১৯ বছর বয়সী এমবাপে তো আছেন আলোচনার শীর্ষে। ১৯৫৮ বিশ্বকাপে পেলে মাত্র ১৭ বছর ২৪৯ দিন বয়সে নকআউট পর্বে সুইডেনের বিপক্ষে জোড়া গোল করেছিলেন। সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে গোলের সেই রেকর্ড না ছুঁলেও পেলের পরেই স্থান হয়েছে এমবাপের। দ্বিতীয় রাউন্ডে এমবাপে ফেবারিট আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জোড়া গোল করেন। গ্রুপ পর্বেও তার একমাত্র গোলে পেরুকে হারিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করে ফ্রান্স। এছাড়া বাকি দুই ম্যাচেও এমবাপের দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখা গেছে। ফরাসীদের আক্রমণভাগ বলতে গেলে পুরোপুরিই তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে গেছে। যদিও লেফট উইং এ্যান্টোনি গ্রিজম্যান এবং রাইট উইংয়ে উসমান ডেম্বেলের মতো দুই তারকা আছেন তাকে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার পেছনে সহায়তা দেয়ার জন্য। যদিও বলা হচ্ছে এবার উরুগুয়ের রক্ষণভাগ বেশ গোছালো এবং অভেদ্য দেয়ালের মতোই। কারণ ৪ ম্যাচে মাত্র ১ গোল হজম করেছে তারা। তাছাড়া ৩২ বছর বয়সী গোলরক্ষক ফার্নান্দো মুসলেরা বেশ অভিজ্ঞ নিজেদের গোলপোস্ট রক্ষায়। কিন্তু ফ্রান্সের মতো এমন গতিময় ও দুর্ধর্ষ আক্রমণভাগ চলতি বিশ্বকাপে একবারও মোকাবেলা করতে হয়নি উরুগুয়েকে। সেন্টার ফরোয়ার্ড এমবাপে যদি ছন্দে থাকেন তাহলে আজই সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে উরুগুয়ের রক্ষণভাগ ও মুসলেরার জন্য। আর এমবাপেকে সফল করতে তার দুই পাশে গ্রিজম্যান-ডেম্বেলে তো আছেনই। সুয়ারেজ কি পারবেন উরুগুয়ের হয়ে লক্ষ্যভেদ করতে? নাকি তাকে পেছনে ফেলে এমবাপে করবেন গোলের উৎসব? দু’দলই তাকিয়ে থাকবে এ দু’জনের দিকে।
×