ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধ্রুপদী লড়াইয়ে মুখোমুখি ব্রাজিল-বেলজিয়াম

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ৬ জুলাই ২০১৮

ধ্রুপদী লড়াইয়ে মুখোমুখি ব্রাজিল-বেলজিয়াম

জাহিদুল আলম জয় ॥ বিস্ময়করভাবে বড় দলগুলোর পতন আর মাঝারি শক্তির উত্থানে এবারের বিশ্বকাপ ফুটবল অন্যরকম মাত্রা পেয়েছে। গ্রুপ পর্বেই বিদায় নিয়েছে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি। দ্বিতীয় রাউন্ডে বাদ পড়েছে রানার্সআপ আর্জেন্টিনা। শুধু তাই নয়, ফেবারিটের কাতারে থাকা স্পেনেরও তল্পিতল্পা গোছাতে হয়েছে। গ্রুপ পর্ব থেকেই একের পর এক অঘটন দেখেছে ফুটবলবিশ্ব। যে কারণে নকআউট রাউন্ডে এসে প্রত্যাশার বাইরের দলগুলো একে অপরের মুখোমুুখি হচ্ছে। এখন যে অবস্থা তাতে একদিকে বড় দলগুলো মুখোমুখি হচ্ছে, অন্যদিকে মাঝারি শক্তি। এ কারণে ষষ্ঠ শিরোপার সন্ধানে থাকা ব্রাজিলকে সেমিফাইনালের টিকেট পাওয়ার লড়াইয়ে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় কাজানের কাজান অ্যারানায় কোয়ার্টার ফাইনালের আগুন লড়াইয়ে আরেক শক্তিশালী দল বেলজিয়ামের মুখোমুখি হচ্ছেন নেইমার, কুটিনহোরা। শেষ আটের চারটি ম্যাচের মধ্যে এটিকেই সবচেয়ে বিগ ম্যাচ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন সবাই। শুধু তাই নয়, এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচও এটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ম্যাচটি যারা জিতবে তাদের ফাইনালে যাওয়া এমনকি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রাস্তা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত পারফরমেন্সের হিসেবে ব্রাজিল ও বেলজিয়ামই বিশ্বকাপের সেরা দুই দল। অথচ মুখেমুখি হয়ে যাওয়ায় একটিকে সেমির আগেই বিদায় নিতে হবে। এ কারণে অতীত ইতিহাস ও পরিসংখ্যান নিয়ে ভাবছে না কেউ। এরপরও কাগজে কলমে এগিয়ে পেলের দেশ। এ পর্যন্ত দেশ দু’টি মুখোমুখি হয়েছে চারবার। তাতে ব্রাজিলের তিন জয়ের বিপরীতে বেলজিয়ামের জয় একটিতে। বিশ্বকাপে আজকের ম্যাচের আগে একবারের দেখায় জিতেছে সাম্বা ছন্দের প্রতিনিধিরা। ২০০২ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে শেষ ষোলোতে বেলজিয়ামকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল লুই ফিলিপ সোলারির দল। ১৬ বছর আগে ১৭ জুন অনুষ্ঠিত ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলের হয়ে গোল করেছিলেন দুই সুপারস্টার রিভাল্ডো ও রোনাল্ডো। তবে উত্তাপ ছড়ানো ম্যাচটির আগে এসব পরিসংখ্যান নিয়ে ভাবছে না কোন দলই। মাঠের খেলায় সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করার আশা তাদের। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে দল দু’টির অবস্থান পিঠাপিঠি। ব্রাজিলের দুই আর বেলজিয়ামের তিন। চলমান বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গোল করেছে বেলজিয়াম আর কম হজম করেছে ব্রাজিল। এ পর্যন্ত খেলা চার ম্যাচে উরুগুয়ের সঙ্গে যৌথভাবে ব্রাজিলও সবচেয়ে কম অর্থাৎ মাত্র এক গোল হজম করেছে। থিয়াগো সিলভা-মিরান্ডা-লুইসরা গোলে মাত্র পাঁচটি শট নেয়ার সুযোগ দিয়েছেন প্রতিপক্ষকে। যা চলতি টুর্নামেন্টে সবচেয়ে কম। অন্যদিকে বেলজিয়াম সর্বোচ্চ ১২টি গোল করেছে। বেলজিয়ামের ১২ গোলের মধ্যে আটটি অবশ্য এসেছে গ্রুপ পর্বে তিউনিসিয়া ও পানামার বিপক্ষে। গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১-০ গোলের কষ্টের জয় পেয়েছিল দলটি। আর শেষ ষোলোর ম্যাচে দুই গোল হজমের পর জাপানকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়েছে। এ কারণে ধ্রুপদী এই মহারণটিকে অনেকে সেরা ডিফেন্সের সঙ্গে সেরা আক্রমণের লড়াই হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। শুরুতে খুব একটা ছন্দ না থাকলেও ব্রাজিল ধীরে ধীরে স্বরূপে ফিরেছে। নির্ভরযোগ্য দুই তারকা মার্সেলো ও ডগলাস কোস্টা ইনজুরির কারণে খেলতে না পারলেও তাদের অভাব বুঝতে দেননি ফিলিপ লুইস ও ফাগনার। নেইমারও চোট কাটিয়ে পুরোপুরি ফিটনেস ফিরে পেয়েছেন। বিশ্বকাপে লিওনেল মেসি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বিদায় নেয়ার পর সেলেসাও তারকাই আকর্ষণের মাত্রা বজায় রেখেছেন। শেষ ষোলোতে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে নেইমারের পারফর্মেন্সে মুগ্ধ বনে গেছে ফুটবলদুনিয়া। নিজে গোল করা ছাড়াও অপর গোলে সহায়তা করেন। বেলজিয়ামের বিরুদ্ধেও পিএসজি তারকা পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। তবে ম্যাচটির আগে নেইমারের অতিমাত্রায় পড়ে যাওয়া নিয়ে কড়া সমালোচনা হচ্ছে। তবে এটিকে পাত্তা দিচ্ছেন না ব্রাজিলের ২০০২ বিশ্বকাপজয়ী সুপারস্টার রোনাল্ডো। তিনি ভিত্তিহীন কথাবার্তার কড়া সমালোচনা করে নিন্দুকদের রীতিমতো ধুয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি কোনো বাজে কথায় কান না দিয়ে নেইমারকে স্বাভাবিক খেলার পরামর্শ দিয়েছেন দ্য ফেনোমেনন। অন্যদিকে ফেবারিট হলেও শেষ ষোলো থেকেই বিদায়ের ঘণ্টা প্রায় বেজে গিয়েছিল বেলজিয়ামের। জাপান দুই গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরও অনেকটা বেলজিকদের ম্যাচ উপহার দিয়ে দেয়! এগিয়ে যাওয়ার পরও অবিশ্বাস্যভাবে আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে এশিয়ার শক্তিরা। ভুল এই পরিকল্পনার সুযোগ নিয়ে ম্যাচটা বের করে নেন হ্যাজার্ড, লুকাকুরা। তবে ওই ম্যাচের স্মৃতি আর মনে রাখতে চান না বেলজিয়াম কোচ রবার্টো মার্টিনেজ। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে রক্ষণ সামলানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের শক্তির দরকার হবে। রক্ষণও সামলাতে হবে এবং যখন আমাদের পায়ে বল থাকবে তখন তাদেরকে যন্ত্রণা দিতে হবে। বেলজিয়াম কোচ আরও বলেন, এটা আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য একটা স্বপ্নের ম্যাচ। তারা এমন ম্যাচ খেলার জন্যই জন্মেছে। স্বাভাবিকভাবে আমরা জিততে চাই। কিন্তু অন্যরা আমাদের কাছে এটা প্রত্যাশা করে না। আর সেটাই গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য। মার্টিনেজ বলেন, আমরা জানি যে আমরা কি করতে পারি। কিন্তু ব্রাজিল ফেবারিটের তালিকায় আছে। ব্রাজিলের মতো একটা দলের বিপক্ষে, আপনাকে অবশ্যই ১১ জন খেলোয়াড় দিয়েই আক্রমণ ও রক্ষণ সামলাতে হবে। আমরা কোন নির্দিষ্ট কৌশল নিয়ে কথা বলছি না। কিন্তু বল পায়ে থাকলে আমাদের কী করতে হবে বুঝতে পারছি। কাসেমিরোর নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্রাজিল শুরু থেকে তার জায়গায় ফার্নান্ডিনহোকে খেলাতে পারে। কিন্তু পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা রিয়াল মিডফিল্ডার কাসেমিরোর আক্রমণ তৈরি করে দেয়ার দক্ষতার অভাব অনুভব করতে পারে। কেননা ব্রাজিল দলে আক্রমণভাগের প্রাণভোমরা নেইমার। আর পুরো দলের প্রাণভোমরা কাসেমিরো। স্বয়ং ব্রাজিল কোচ টিটে এই সার্টিফিকেট দিয়েছেন। টানা দুই ম্যাচে হলুদ কার্ডের খাড়ায় পড়ে কাসেমিরের খেলতে না পারাটা তাই সেলেসাওদের জন্য বড় ধাক্কা। তবে এর মাঝেও স্বস্তির খবর হচ্ছে, চোট কাটিয়ে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটিতে ফিরতে মার্সেলো ও ডগলাস কোস্টা। রিয়াল মাদ্রিদে বেশিরভাগ আক্রমণের উৎস মার্সেলো। জাতীয় দল ব্রাজিলের হয়েও একই ভূমিকা পালন করেন ঝাকড়া চুলের এই তারকা। শেষ পর্যন্ত মার্সেলো খেলতে পারলে কাসেমিরোর অভাব অনেকটাই দূর হবে সেলেসাওদের। জুভেন্টাস উইঙ্গার কোস্টা অনুশীলনে ফিরেছেন পুরোপুরি। মাত্র একটি ম্যাচ খেলা এই তারকা সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ওই ম্যাচেই চোট পান। ব্রাজিল কোচ টিটে প্রতিপক্ষকে সমীহ করলেও জয় পেতে আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, এখন সব ম্যাচ সমান গুরুত্বপূর্ণ। কে সামনে এলো দেখে লাভ নেই। লক্ষ্য একটাই জিততে হবে।
×