ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাড্ডায় আওয়ামী লীগ নেতা হত্যায় জড়িত দুজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৬ জুলাই ২০১৮

বাড্ডায় আওয়ামী লীগ নেতা হত্যায় জড়িত দুজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর বাড্ডায় গত ১৫ জুন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ হোসেনকে গুলি করে হত্যায় জড়িত দুই আসামি ডিবি পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে। নিহতরা পেশাদার খুনী ছিল। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় খুন, অপহরণ, ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা আছে। নিহতরা বাড্ডায় বহুল আলোচিত ফোর মার্ডারের সঙ্গেও জড়িত ছিল বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছে ডিবি। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে বাড্ডা থানাধীন সাঁতারকুলের প্রজাপতি গার্ডেন এলাকায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের একটি দল অভিযান চালায়। অভিযানকালে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ডিবি পুলিশের গোলাগুলি হয়। গোলাগুলি চলে প্রায় চারটা পর্যন্ত। একপর্যায়ে গোলাগুলি থেমে যায়। ততক্ষণে সেখানকার বাসিন্দারা ডাকাতদের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে ভেবে লাঠিসোটা নিয়ে সেখানে হাজির হয়। পরে তাদের সঙ্গে নিয়ে ডিবি পুলিশ ও থানা পুলিশ সেখানে যায়। ঘটনাস্থল থেকে দুইজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভর্তি করা হয়। সকাল পাঁচটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে দুইটি বিদেশী পিস্তল ও গুলি উদ্ধার হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, নিহতদের মধ্যে একজনের নাম নুরুল ইসলাম সানি (২৮) ও অপরজনের নাম অমিত (৩৫) বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তারা আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ হত্যা মামলার আসামি ছিল। পুলিশ বলছে, গত ১৫ জুন শুক্রবার পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের আগের দিন ফরহাদ হোসেন উত্তর বাড্ডার আলীর মোড়ের কাছে বায়তুস সালাম জামে মসজিদে পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করেন। মসজিদ থেকে বেরিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেলযোগে এসে সন্ত্রাসীরা ফিল্মি স্টাইলে ফরহাদ হোসেনকে গুলি চালিয়ে হত্যার পর সদর্পে চলে যায়। তার বুকে ও মাথায় গুলি লাগে। ঘটনাস্থলেই ফরহাদ হোসেনের মৃত্যু হয়। ফরহাদ হোসেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নবগঠিত ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে ভোট করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যদিও ওই ভোট হয়নি। তিনি বাড্ডা ইউনিয়ন (বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অধীন) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। হত্যাকা-টি ব্যাপক আলোচিত হয়। মামলাটির তদন্ত করছে ডিবির উত্তর বিভাগ। ডিবির উত্তর বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ফরহাদ হোসেন হত্যার পর পরই ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজে ফরহাদ হত্যার পর লাল গেঞ্জি পরিহিত এক যুবককে অস্ত্র হাতে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ওই যুবক নিহত সানি। সে এক সময় মিরপুর চিড়িয়াখানায় পশুদের খাবার দেয়ার কাজ করত। পরবর্তীতে চাঁদাবাজি, খুন, রাহাজানি, ছিনতাই ও খুনের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। আর নিহত অপরজন অমিত। তার আসল নাম মাহবুবুর রহমান। তাকে অনেকে তারেক রহমান বলেও চেনেন। সে ভারতে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসী আশিক ও আমেরিকায় পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসী মেহেদীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী। দুজনই মিরপুরে বড় হয়েছে। অমিতের এক ভাই সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত থাকার কারণে এবং আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসী হওয়ার সূত্রধরে নিজেদের মধ্যে কোন্দলের জেরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়। নিহতরা ২০১৫ সালের ১৩ আগস্ট রাতে রাজধানীর মধ্যবাড্ডায় স্থানীয় যুবলীগ কর্মী ও উত্তর বাড্ডার এইচএএফ হাসপাতালের ব্যবস্থাপক ফিরোজ আহমেদ মানিক ( ৪৫), ঢাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দিন মোল্ল্যা ওরফে শামছু মোল্ল্যা (৫৩), যুবলীগ নেতা আব্দুস সালাম (৪৩) ও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা উত্তরের সহকারী সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান গামা (৪৫) হত্যায় জড়িত ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
×