ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিলেট সিটি নির্বাচন

নগরবাসীর সেবা করতে চাই- কামরান, পাশে থাকব- আরিফুল

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৬ জুলাই ২০১৮

নগরবাসীর সেবা করতে চাই- কামরান, পাশে থাকব- আরিফুল

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, সিলেট মহানগর সভাপতি, মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেছেন, সততা ও ভালবাসা নিয়ে নগরবাসীর সেবা করতে চাই। বিএনপির দলীয় প্রার্থী সদ্যবিদায়ী মেয়র আরিফুর হক চৌধুরী বলেছেন ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন, আমি যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন সিলেটের মানুষের পাশে থাকব। অলি-গলি পাড়া মহল্লায় মেয়র প্রার্থীরা সন্তর্পণে হানা দিচ্ছেন। নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন ভোটারদের কাছে। পরিচিত দুটি মুখ। দুই মেয়র প্রার্থী এবার দলীয় প্রতীক নিয়ে মাঠে নামার কারণে ভিন্ন ধরনের উত্তাপ ছড়াচ্ছে নির্বাচনী মাঠে। সিলেট সিটি নির্বাচনে আপীল করার পর মনোনয়নপত্র বহাল হয়েছে ১১ প্রার্থীর। ইতোমধ্যে এক মেয়র প্রার্থী, ৫ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৫ সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী। এদিকে আপীল করলেও এক মেয়র প্রার্থী এবং এক সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলই রয়েছে। জানা যায়, সিসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে যেসব প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন, ইতোমধ্যে ৩ মেয়র প্রার্থী, ১০ কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ৭ সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। পরবর্তীতে যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৫ জন আপীল করেছেন। বাকিরা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আপীল করেননি। আপীল করে মেয়র পদে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এহসানুল হক তাহের। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী জসিম উদ্দিন আপীল করেও তার প্রার্থিতা ফিরে পাননি। আপীলে কাউন্সিলর প্রার্থী যাদের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে বিবেচিত হয়েছে, তারা হলেনÑ ৫নং ওয়ার্ডের নিলুফা সুলতানা চৌধুরী লিপি, ৩নং ওয়ার্ডের রাজিব কুমার দে, ১১নং ওয়ার্ডের আব্দুর রকিব বাবলু, ২৫নং ওয়ার্ডের আশিক আহমদ ও ২২নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ দিদার হোসেন। এছাড়া সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩নং ওয়ার্ডের শ্যামলী সরকার, ৭নং ওয়ার্ডের ক্ষমা রানী দে, শিবাণী দেব রায়, ৬নং ওয়ার্ডের রেহানা ইয়াসমিন ও ৯নং ওয়ার্ডের বেগম আলিমুন আপীল করে বৈধতা পেয়েছেন। আপীল করার পর সংরক্ষিত ৮নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী শারমিন আক্তার রুমি প্রার্থিতা ফিরে পাননি। বৃহস্পতিবার আপীল করেছেন ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী কাজী নজমুল আহমদ ও সংরক্ষিত ৯নং ওয়ার্ডের প্রার্থী আসমা বেগম। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, সিলেট মহানগর সভাপতি, মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। তিনি বলেছেন, সততা ও ভালবাসা নিয়ে নগরবাসীর সেবা করতে চাই। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নভাবে আপনাদের পাশে আছি এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আপনাদের পাশে থাকব। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে কাজ করার লক্ষ্যে মেয়র প্রার্থী হয়েছি। আপনাদের সমর্থনে নির্বাচিত হলে সত্যিকার অর্থে একটি মডেল নগরী গড়তে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। বুধবার রাত ১১টায় বিলপার এলাকাবাসী আয়োজিত মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। আম্বরখানা দত্তপাড়া এলাকাবাসীর উদ্যোগে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সমর্থনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এলাকার মুরব্বী আজিজুল হক চৌধুরী মতির সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। সিলেট নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কলবাখানি, গোয়াইপাড়া, চাষনীপীর এলাকার স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। এ সময় তিনি বলেন- সিলেটের উন্নয়নে বর্তমান সরকার আন্তরিক। সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করতে হলে মাস্টারপ্লান করতে হবে। আরিফুল হক চৌধুরী ॥ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সিলেট সিটি নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, ‘আগমী ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে দলের প্রতি সমর্থন রেখে আপনারা আমাকে যেভাবে সহযোগিতা করছেন, তার জন্য আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ব্যক্তি আরিফ হিসেবে আমার দোষত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু দলের প্রার্থী হিসেবে আপনারা সব ভেদাভেদ ভুলে আমার সঙ্গে কাজ করুন। আমার আচার-আচরণে যদি কোন ভুল হয়ে থাকলে আপনারা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন সিলেটের মানুষের পাশে থাকব।’ বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে সিলেট মহানগর বিএনপি আয়োজিত কর্মীসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে খাদিমনগরস্থ একটি কমিউনিটি সেন্টারে এই কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, ‘আমাকে তিন বছর কারাবন্দী করে রাখা হয়েছিল। এর কারণ, আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মেয়র হিসেবে আমি মাত্র দুই বছরে যে উন্নয়ন করেছি, তা দৃশ্যমান।’ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সিটি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম প্রসঙ্গে আরিফ বলেন, ‘বদরুজ্জামান সেলিম সবসময় দলের সুখ-দুঃখে পাশে ছিলেন। তিনি খুবই কর্মঠ নেতা। বর্তমানে তিনি আবেগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। আমি আশা করি, নির্বাচনে তিনি আমার পাশে এসে দাঁড়াবেন।’ পুলিশ নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় গিলে তল্লাশি চালাচ্ছে অভিযোগ করে আরিফ বলেন, ‘আপনারা (পুলিশ) কোন দলের হয়ে কাজ করবেন না। যদি করেন, তবে ভবিষ্যতে আপনাদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’ নগরীর প্রত্যেক পাড়ামহল্লায় ঐক্য গড়ে তুলে ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীককে বিজয়ী করার আহ্বান জানান আরিফ। মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনের সভাপত্বি ও মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত সাদেকের পরিচালনায় কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপার্সের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। দুই প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় ॥ নির্বাচনে অন্যতম বিষয় হচ্ছে নির্বাচনী ব্যয়। প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের কাছে ব্যয়ের যে হিসাব জমা দেন তাতে নির্বাচন পরিচালনা সম্ভব হয় না। তার পরেও আইনের বিধি মেনে নিয়েই এটা করে থাকেন তারা। প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারে নামার অপেক্ষায় মেয়র প্রার্থীরা। মেয়র প্রার্থীরা নির্বাচনে কত টাকা ব্যয় করবেন, তার হিসাব ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছেন। বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ॥ হলফনামার তথ্যানুসারে, আসন্ন সিসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান নিজ আয় থেকে ১০ লাখ টাকা ব্যয় করবেন। এই টাকার উৎস হিসেবে কামরান ‘নিজ সঞ্চিত’ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ‘স্বেচ্ছাপ্রণোদিত দান’ হিসেবে ৪ লাখ টাকা পাবেন কামরান। এই টাকা তার ভায়রা আতিকুর রহমান এবং শ্যালক মাহবুবুল হাসান দেবেন। প্রত্যেকেই ২ লাখ টাকা করে দেবেন। কামরান ৩০ হাজার পোস্টার ছাপাবেন। এতে তার ব্যয় হবে এক লাখ টাকা। তিনি ৬টি নির্বাচনী ক্যাম্প পরিচালনা করবেন। এক্ষেত্রে তার ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। এসব ক্যাম্পে কর্মীদের জন্য খরচ হবে আরও ৯০ হাজার টাকা। কামরানের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী ক্যাম্পের খরচ ১০ হাজার টাকা এবং এ ক্যাম্পের কর্মীদের খরচ ৩৫ হাজার টাকা। আরিফুল হক চৌধুরী ॥ সিটি নির্বাচনে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ‘নিজ আয়’ পাবেন সাড়ে ১৪ লাখ টাকা। এই টাকা তিনি ‘নিজস্ব ব্যবসা, পাওয়া বেতন (মেয়র থাকাকালে) এবং বাস ভাড়া বাবদ আয়’ থেকে পাবেন। আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে তিনি কোন টাকা নিচ্ছেন না। আরিফ ৩০ হাজার পোস্টার ছাপাতে এক লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয় করবেন। তার দুটি নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপনে খরচ হবে ৩০ হাজার টাকা এবং ক্যাম্পে কর্মীদের জন্য ব্যয় হবে ৫০ হাজার টাকা। আরিফের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপনে ৩০ হাজার টাকা এবং এ ক্যাম্পের কর্মীদের জন্য ৫৫ হাজার টাকা ব্যয় হবে। যাতায়াতে আরিফের খরচ হবে ৪০ হাজার টাকা এবং এ ক্ষেত্রে কর্মীদের খরচ হবে ৮০ হাজার টাকা। ঘরোয়া বৈঠক বা সভা আয়োজনে ভেন্যুর ভাড়া বাবদ ৯০ হাজার টাকা, সভা আয়োজনে শ্রমিকের পারিশ্রমিক এক লাখ টাকা এবং সভায় আসবাবপত্রের জন্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয় করবেন আরিফ। আরিফ এক লাখ লিফলেটে এক লাখ টাকা এবং ২৭ হাজার হ্যান্ডবিলে ৫৪ হাজার টাকা খরচ করবেন। ৪৫টি ব্যানারে ৩৬ হাজার টাকা এবং এগুলো টানাতে ৯ হাজার টাকা ব্যয় হবে আরিফে। ১০০টি ডিজিটাল ব্যানার তৈরি ও টানানো বাবদ যথাক্রমে ৪০ হাজার ও ১০ হাজার টাকা খরচ হবে।
×