ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভোটারদের ভাবনায় লিটন, ক্ষোভের আগুনে দগ্ধ বুলবুল

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৬ জুলাই ২০১৮

ভোটারদের ভাবনায় লিটন, ক্ষোভের আগুনে দগ্ধ বুলবুল

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে এবার মেয়র পদে ৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও সর্বত্র আলোচনা দুজনকে নিয়ে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এসেছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তাদের নিয়েই ভাবছেন নগরবাসী। এ ক্ষেত্রে অতীত উন্নয়নের জন্য লিটনের পক্ষে যতটা বেশি আওয়াজ উঠেছে ঠিক ততটায় বিরুদ্ধাচরণ হচ্ছে বুলবুলের ক্ষেত্রে। যদিও আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গেই নিচ্ছে বড় দুই দল। আওয়ামী লীগ বলছে, এবারের সিটি নির্বাচন আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য ওয়ার্মআপ। আর বিএনপি বলছে, এবার তারা প্রতিবাদের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এবারের নির্বাচন কার্যক্রম শুরুর আগে থেকেই মাঠ সাজিয়ে রাখায় লিটনের পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হলেও বুলবুলের ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে উল্টো চিত্র। একদিকে শরিক জামায়াতের টানাপড়েন অন্যদিকে বিএনপির তৃণমূলে বুলবুলের আচরণে অসন্তোষ। এই পরিস্থিতিতে ভোটের মাঠে নামতেও বেগ পেতে হচ্ছে তাকে। কোন্দল নিরসনেই সময় পার হচ্ছে বুলবুলের। যদিও এরই মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় বুলবুলের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক হিসেবে রাজশাহীতে অবস্থান করছেন। বুধবার রাজশাহীতে এসেই দলের সংকট নিরসনে জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীদের নিয়ে এ অঞ্চলে বিএনপির ‘থিঙ্কট্যাঙ্ক’ হিসেবে পরিচিত প্রবীণ নেতা কবীর হোসেনের সঙ্গে রুদ্ধদার বৈঠক করেছেন। যদিও স্থানীয় নেতারা বলছেন কবীর হোসেন অসুস্থ তাই তাকে দেখতে গেছিলেন গয়েশ^র। তবে একই দলের নেতারা বলছেন, মূলত সিটি নির্বাচন নিয়ে বুলবুলের প্রতি বিএনপির যে সঙ্কট তা নিরসনের চেষ্টা করা হয়েছে ওই বৈঠকে। নির্বাচন পর্যন্ত গয়েশ^র রাজশাহীতেই অবস্থান করবেন বলেও জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনের আগ মুহূর্তেও দলীয় কোন্দলে বিপর্যস্ত এখন রাজশাহী বিএনপি। বিভক্ত বিএনপি নেতাদের কারণে রাজশাহীতে কোনো কর্মসূচী পালন হচ্ছে না। এবার মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে দলীয় মেয়রপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন তারেক রহমান। তারেক রহমান টাকার বিনিময়ে বুলবুলের মতো বিতর্কিত নেতাকে মেয়রপ্রার্থী করায় তৃণমূল কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তৃণমূল বিএনপির একটি অংশ এবার বুলবুলকে ভোট দিবে না বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত জেলাগুলোর মধ্যে রাজশাহী অন্যতম। এখানে বিএনপিতে বর্তমানে আটটি গ্রুপ রয়েছে। দিনে দিনে এই দ্বন্দ্ব প্রকট রূপ ধারণ করেছে। মেয়রপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের খারাপ ব্যবহার আর নেতাকর্মীদের বিপদে পাশে না থাকার ঘটনাগুলোর জন্য তৃণমূল নেতাকর্মীরা তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছেন। সেই ক্ষোভের আগুনেই দগ্ধ এখন বুলবুল। এদিকে বুলবুলকে নিয়ে বিএনপিতে যখন এলোমেলো অবস্থা তখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামার লিটন রয়েছে সাজানো মাঠে। তাকে নিয়ে নিজ দল ছাড়াও ১৪ দলের নেতাকর্মীরা রয়েছেন উজ্জীবিত। তারা চেয়ে আছেন ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু অপেক্ষায়। আগামী ১০ জুলাই থেকে প্রকাশ্যে মাঠে নামবেন তারা। অপরদিকে ভোটারদের ভাবনায় এবার রয়েছেন লিটনের নাম। সাধারণ ভোটাররা বলছেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী হিসেবে খায়রুজ্জামান লিটনকে নগর পিতা নির্বাচিত করতে চান তারা। যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়েই তারা তাদের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে চান। ভোটারদের এমন কথা ঠিক থাকলে এগিয়ে থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনই। কেননা, ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি মেয়র থাকাকালে নগরীতে যে দৃশ্যমান উন্নয়ন করেন, সেটুকুও ধরে রাখতে পারেননি বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। আগামী ৩০ জুলাইয়ের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়ী হতে এবার অনেক আগে থেকেই প্রতিটি ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লা চষে বেরিয়েছেন লিটন। মহানগর বিএনপির সভাপতি বুলবুলও নানা কৌশলে এখন নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলছেন, আবার নির্বাচিত হলে তিনি উন্নয়নের ধারা ফিরিয়ে আনবেন। নগরীর তেরোখাদিয়া মহল্লার বাসিন্দা আলফাজ কবির বলছেন, আগের দুই মেয়াদে দুদলের দুই প্রার্থীই মেয়র ছিলেন। রাজশাহীর জন্য কে কী করেছেন, সেটি বিবেচনা করেই তিনি ভোট দেবেন। এ ক্ষেত্রে দল কিংবা প্রতীক তার কাছে বড় বিষয় নয়। একই কথা বলেছেন কাদিরগঞ্জের বাসিন্দা সুমন শেখ। তার বক্তব্য, যিনি মেয়র হয়ে মশাও মারতে পারবেন না, তাকে ভোট দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সবার আগে বড় কথা নাগরিক সেবা। আর কে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে পারবেন তা তিনি ভাল করেই জানেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থী ছাড়াও এবার রাজশাহী সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন আরও চার প্রার্থী। তারা হলেন- জাতীয় পার্টির ওয়াসিউর রহমান দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির হাবিবুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শফিকুল ইসলাম ও বামপন্থী সংগঠন গণসংহতি আন্দোলন সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ মোর্শেদ। অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের প্রস্তুতি ॥ রাসিক নির্বাচন উপলক্ষে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের নির্বাচনী সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমানের সভাপতিত্বে সমন্বয় সভায় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নানা দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভা শেষে বিভাগীয় কমিশনার নুর-উর-রহমান সাংবাদিকদের জানান, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। কোন কোন কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলোর তালিকা তৈরির জন্য মহানগর পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে সেগুলো প্রকাশ করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও ভোটাররা যাতে নির্বিগ্নে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন এ জন্য ভোটকেন্দ্র ও তার আশপাশের এলাকায় তিন অস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান বিভাগীয় কমিশনার।
×