ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আক্রান্ত ৩০% মানুষ

নীরব ঘাতক হাড় ক্ষয় রোগ- পুরো নিরাময় নেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৬ জুলাই ২০১৮

নীরব ঘাতক হাড় ক্ষয় রোগ- পুরো নিরাময় নেই

নিখিল মানখিন ॥ দেশে ত্রিশ শতাংশ মানুষ হাড় ক্ষয়রোগে আক্রান্ত। বিশ্বে প্রতি ৩ সেকেন্ডে একজন এ রোগে নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। এটি একটি নীরব ঘাতক রোগ। একবার এ রোগে আক্রান্ত হলে তা আর পুরোপুরি নিরাময় করা যায় না। পুরুষদের তুলনায় নারীরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন। এ রোগ ব্রেন স্ট্রোক, হৃদরোগ ও ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকেও বেশি কষ্টদায়ক। বাংলাদেশ রিউমাটোলজি সোসাইটির গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, হাড় ক্ষয়রোগ অত্যন্ত সংবেদনশীল প্রক্রিয়া। এটি পরিণত বয়সে সামান্য একটু হাড় ক্ষয় ও একই পরিমাণ হাড় তৈরির সমতার ওপর নির্ভরশীল। যদি ক্ষত, পূর্ণ হাড় তৈরি অপেক্ষা বেশি হতে থাকে তা হাড় ক্ষয়রোগের জন্ম দেয়। ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের অভাবে সাধারণত এ রোগ হয়। ২১ থেকে ৩৯ বছর বয়সের মধ্যেই পূর্ণ হাড় তৈরি হতে হবে। এটি পিক বোন মাস হিসেবে অভিহিত। অর্থাৎ ওই বয়সে যার হাড় যত শক্ত হবে, বয়সকালে তার হাড় ক্ষয়রোগ এবং হাড়ভাঙ্গার ঝুঁকি তত কম হবে। সারা বিশ্বে প্রতি ৩ জন নারীর ১ জন এবং প্রতি ৫ জন পুরুষের ১ জন বর্তমানে হাড় ক্ষয়রোগে ভুগছেন। বিশ্বে আনুমানিক ২০ কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। এ রোগে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা প্রতি ৩ সেকেন্ডে একজন। একবার এ রোগে আক্রান্ত হলে তা আর নিরাময় করা যায় না। পুরুষদের তুলনায় নারীরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন। এ রোগ ব্রেন স্ট্রোক, হৃদরোগ ও ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকেও বেশি কষ্টদায়ক। নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি, গায়ে রোদ লাগানো (সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ১০ মিনিট), ধূমপান ত্যাগ, শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এ রোগে একবার আক্রান্ত হলে তা আর পুরোপুরি নিরাময় করা যায় না। তবে ওষুধ সেবন, ব্যায়াম করা, ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম সেবনের মাধ্যমে হাড়ের ঘনত্ব বাড়ানো যায়। যা রোগের ভয়াবহতা থেকে রোগীকে রক্ষা করে। হাড় ক্ষয়রোগের কারণে অল্প আঘাতে শরীরের হাড় ভেঙ্গে যায়। অনেক সময় কোমড়ের হাড় ভেঙ্গে বা বেঁকে যাওয়ার ফলে শরীরের নিচের অংশ অবশ হয়ে যায়, ফুসফুস সংক্রামণ রোগ বেশি হয়। এ রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেড়ে যায়। বাংলাদেশে ১০০ জনের ওপরে পরিচালনা করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৭ শতাংশ মানুষের ভিটামিন ডি-এর অভাব রয়েছে। মাত্র তিনজনের শরীরে পরিমিত ভিটামিন ডি আছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হাড় থেকে ক্যালসিয়াম ও কোলাজেন টিস্যু কমে গেলে হাড়ের ভলিউম ঠিক থাকলেও শক্তি কমে যায়। ফলে হাড় সহজেই ভেঙ্গে যায়। একে বলে অস্টিওপোরেসিস। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগে আক্রান্তের হার বাড়ে। বৃদ্ধ বয়সে এ রোগটি বেশি হয় বলে দেখাশোনা করার মতো কেউ না থাকায় তাদের সমস্যার অন্ত থাকে না। আমাদের দেশে অনেকেই এ রোগে আক্রান্ত। প্রকৃতির নিয়মে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। এ জন্য ৫০ বা তার বেশি বয়সীরা এ রোগে আক্রান্ত হন। মেয়েদের মাসিক বন্ধ হলে হঠাৎ করে তাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায়। ফলে হাড় থেকে ক্যালসিয়াম বের হয়ে যায়। এ কারণে হাড় হয়ে যায় ভঙ্গুর। অনেক দিন ধরে শয্যাশায়ী হলে হাত-পা নাড়াচড়া হয় না। এটিও অস্টিওপোরেসিসের কারণ। ভিটামিন-ডি ও ক্যালসিয়ামের অভাব হলে এ রোগ দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের হরমোন, যেমন- টেস্টোস্টেরন, গ্রোথ হরমোনের অভাব, ভিটামিনের অভাবে এ রোগ হতে পারে। আবার অল্প বয়সীদের কোন কারণ ছাড়া অস্টিওপোরেসিস হতে পারে। একে বলে ইডিওপ্যাথিক। ধূমপান, মদপান এ রোগের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। বংশগত কারণেও অস্টিওপোরেসিস হতে পারে। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, পনির, কলিজা, গুঁড়ামাছ, শিম, পালংশাকসহ অন্যান্য শাকসবজি খেতে হবে বেশি করে। এ ছাড়াও ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ট্যাবলেটের মাধ্যমে এ চাহিদা পূরণ করা যায়। অন্ত্র থেকে ক্যালসিয়াম পরিশোষণের জন্য ভিটামিন ডি দরকার। এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে পিঠে, কোমরে, ঘাড়ে ও পেশিতে অল্প ব্যথা হয় এবং পরবর্তী সময় হঠাৎ তীক্ষè ব্যথা হয়। এ ধরনের ব্যথা এক সপ্তাহ থেকে তিন মাস পর্যন্ত বিদ্যমান হতে পারে। মেরুদ-ের কশেরুকার উচ্চতা কমে যায়, রোগী সামনে ঝুঁকে থাকে এবং পেছনে কুঁজ হয়। কশেরুকা ভাঙ্গার ব্যথা মেরুদ- থেকে শুরু হয়ে পিঠের দুই পাশে দিয়ে সামনের দিকে আসে এবং বুক ও পেটে অনুভূত হয় এবং পা পর্যন্ত যায়। সাধারণত পড়ে গিয়ে হালকা আঘাতেই ক্ষয়জনিত কারণে কটি ও কব্জির হাড় ভেঙ্গে যায়। বাংলাদেশ রিউমাটোলজি সোসাইটির সহসভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক জানান, জন্ম থেকেই মেয়েরা নেতিবাচক ভারসাম্যে থাকেন। শারীরিক কারণেই নারীরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন। নীরব ঘাতক এ রোগ থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক বলেন, ৫০ বছরের পর হাড় ক্ষয়রোগ সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়। ধূমপানের কারণে হাড় ক্ষয় বেশি হয়। ব্যায়াম, খাদ্যাভাস, শারীরিক পরিশ্রম করা, ধূমপান না করার মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
×