ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চিরকুট লিখে ৫ কোটি টাকার গাড়ি ফেলেই পলায়ন

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৬ জুলাই ২০১৮

চিরকুট লিখে ৫ কোটি টাকার গাড়ি ফেলেই পলায়ন

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গত সাড়ে তিন বছরে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ও চোরাইপথে আনা ৮০টি গাড়ি আটক করা হয়েছে যার মূল্য শতাধিক কোটি টাকা। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে চোরাইপথে বিলাসবহুল গাড়ি এনে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বেড়াচ্ছে মুখোশধারী একশ্রেণীর ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি প্রদানকারী ধনাঢ্য এসব ব্যক্তির আনা নামী-দামী বিলাসবহুল গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। অভিযানের তৎপরতার মুখে বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে চিরকুট লিখে ৫ কোটি টাকা মূল্যের টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার গাড়ি ফেলেই পালিয়ে গেছেন গাড়ির মালিক। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাইপথে আনা কোটি কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামী-দামী গাড়িই এখন গাড়ির মালিকদের জন্য হয়ে উঠেছে গলার কাঁটা। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। রাজধানীর গুলশানে গাড়ির মালিকের চিরকুটে লেখা- আমি স্বেচ্ছায় গাড়িটি রাস্তায় রেখে গেলাম। কিন্তু আমি গাড়িটির আমদানিকারক নই। আমদানিকারককে আইনের আওতায় নেয়ার জন্য শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কাছে বিনীত অনুরোধ রইল। আমি দেশের আইনের প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধাশীল এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানাই এবং এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মোঃ সহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনাকালে ফেলে যাওয়া গাড়িটি হেফাজতে নিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে ৫ কোটি টাকা মূল্যের টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার গাড়িটি ফেলে যাওয়ার আগের দিন অভিযান পরিচালনা করে সাভারের পক্ষাঘাত গ্রস্থদের পুনর্বাসনকেন্দ্র সিআরপি থেকে ডিএফআইডির বিলাসবহুল ১১টি গাড়ি জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর কর্তৃপক্ষ। গত দুই দিনেই প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা মূল্যের এক ডজন নামী-দামী বিভিন্ন ব্র্র্যান্ডের গাড়ি জব্দ করা হয়েছে, যাতে সরকারের কোটি কোটি টাকা মূল্যের রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলশান-১ এর ১১২ নং সড়ক হতে নম্বর-প্লেটবিহীন টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার (ভি৮ সিসি-৪৬০৮, মডেল-২০১৩) ব্র্যান্ডের একটি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। গাড়িটির মালিক অথবা চালক গাড়িটি রেখে পালিয়ে গেছেন। শুল্ক করসহ গাড়িটির আনুমানিক মূল্য ৫ কোটি টাকা বলে জানায় অভিযান পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত শেষে কাস্টমস আইন ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম জানান, আমাদের একটি টিম অভিযান পরিচালনা করার এক পর্যায়ে মালিক বা চালক গাড়িটি রেখে পালিয়ে যায়। ওই গাড়ির ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় চিরকুটটি। এর আগের দিন শুল্ক মুক্ত সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগে সাভারের সিআরপি থেকে ডিএফআইডির বিলাসবহুল ১১টি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। ১১টি গাড়ি জব্দ ॥ শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহারের দায়ে সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসনকেন্দ্র সিআরপিতে অভিযান পরিচালনা করে ১১টি গাড়ি জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। বুধবার বিকেলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের একটি দল অভিযান চালিয়ে গাড়িগুলো আটক করে। জব্দকৃত গাড়ির আনুমানিক মূল্য ৩০ কোটি টাকা। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মোঃ সহিদুল ইসলামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী মুহম্মদ জিয়া উদ্দিন। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শুল্ক ফাঁকি দেয়া নামী-দামী ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ি। আমদানিকারকরা অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় গাড়িগুলোর খোঁজে বেগ পেতে হচ্ছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরকে। এছাড়া শুল্ক গোয়েন্দার নজরদারিতে থাকা অনেক গাড়ির নম্বর প্লেটও ইতোমধ্যে পরিবর্তন করা হয়েছে। শুল্ক ফাঁকি দেয়া এসব গাড়ির মূল্য ২ থেকে ১৪ কোটি টাকা পর্যন্ত। তবে গাড়িগুলো উদ্ধারে ইতোমধ্যে শুল্ক গোয়েন্দা একটি টিম গঠন করেছে। যে টিম গাড়িগুলো উদ্ধারে সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিন বছরে ৬৮ গাড়ি আটক ॥ শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছরের ২২ জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল ৬৮টি গাড়ি আটক করা হয়েছে। গাড়িগুলো বিশেষ সুবিধায় আমদানি করার পর নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করা এবং শুল্ক ফাঁকি দেয়ার অপরাধে আটক করা হয়। আটককৃত গাড়ির মধ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থার ৯টি গাড়িও রয়েছে। গাড়িগুলো কার্নেট ডি প্যাসেজ সুবিধার অপব্যবহার, শুল্কমুক্ত সুবিধায় প্রিভিলেজড পার্সন বা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গাড়ি এনে শুল্ক পরিশোধ না করে গাড়ি স্থানান্তর বা বিক্রি,আমদানিকালে মিথ্যা ঘোষণা দেয়া, কূটনৈতিক সুবিধার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে গাড়িগুলো আটক করা হয়।
×