ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বন্যার পদধ্বনি ॥ তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপরে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৬ জুলাই ২০১৮

বন্যার পদধ্বনি ॥ তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপরে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ গর্জে উঠেছে তিস্তা। বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে তিস্তার পানি। শুরু হয়েছে বন্যার পদধ্বনি। উজানের পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টির পানিতে কয়েকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল, তলিয়ে গেছে জমির ফসল। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাতিল করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সিলেটের সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নীলফামারীতে ৫ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। উজান থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ী ঢলে কুড়িগ্রামের ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, গঙ্গাধরসহ সবকটি নদ-নদীর পানি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় কুড়িগ্রাম সদর, ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারীর ধরলা ও দুধকুমার নদীর অববাহিকার ৩০ গ্রামের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৮ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৪৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুধকুমার নদের পানি হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকলে তা দুকূল ছাপিয়ে নি¤œাঞ্চলে প্রবেশ করছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভুরুঙ্গামারীর শিলকুড়ি ইউনিয়নের চর উত্তর টিলাই, উত্তর টিলাই, উত্তর ধলডাঙ্গা, দক্ষিণ ধলডাঙ্গা, উত্তর সাতগোপাল, বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নের চর বলদিয়া, ভরতের ছড়া, পাইকের ছড়া ইউনিয়নের পাইকের ছড়া, সাট পাইকের ছড়া, হ্যালোডাঙ্গা, তিলাই ইউনিয়নের দক্ষিণ তিলাই, চর ভুরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ইসলামপুর, চর ভুরুঙ্গামারী, আন্ধারীর ঝাড় ইউনিয়নের হ্যালোডাঙ্গা, চর ভাউরাকুটি, চর বারইটারী, বারাইটারী, ভুরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের চর নালেয়াসহ প্রায় ২৫ গ্রামের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার কিছু ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। কাঁচা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙ্গে পড়েছে যাতায়াত ব্যবস্থা। এছাড়াও নাগেশ্বরীর নারায়ণপুর নুনখাওয়ার কয়েকটি গ্রামের নি¤œাঞ্চলেও পানি ঢুকে পড়ছে। এদিকে ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদীর তীরবর্তী এলাকার প্রায় ১৫ গ্রামের নি¤œাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ছে। তলিয়ে গেছে পটোল, ঢেঁড়স, মরিচ, শসাসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত। নি¤œাঞ্চলের কাঁচা সড়কে পানি উঠায় ধরলা নদীর অববাহিকার নি¤œাঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। সদর উপজেলার ধরলা নদীর অববাহিকার মাঝেরচর গ্রামের বাবলু মিয়া জানান, ধরলার পানি যেভাবে বাড়তেছে এভাবে বাড়তে থাকলে শক্রবারের মধ্যে চরাঞ্চলের সকল ঘর-বাড়িতে পানি প্রবেশ করবে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম জানায়, বৃধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৮ ঘণ্টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৪৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ২৯ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রে পানি ৩৩ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রে পানি ৪০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত ॥ ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল দুদিন ধরে অব্যাহত থাকায় লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যার পানিতে পাঁচ উপজেলার নদী তীরবর্তী কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। তিস্তা ও ধরলা নদী সংলগ্ন শত শত একর বিভিন্ন ফসলি ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। ইতোমধ্যে চর এলাকাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটের। এদিকে থেমে থেমে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হাতীবান্ধার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করছে পাউবো কর্তৃপক্ষ। সুনামগঞ্জে বন্যার আশঙ্কা নেইÑ পানি উন্নয়ন বোর্ড ॥ সুনামগঞ্জে পাহাড়ী ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৯০ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। সুরমা নদীর ষোলঘর পয়েন্টে বিপদসীমার ৭১ সেমি এবং পুরাতন সুরমার দিরাই পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৫ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন পানি উন্নয়নর বোর্ড সংশ্লিষ্টরা। তবে বৃষ্টিপাত থেমে গেলে পানি হাওড়ের দিকে নেমে যাবে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী খুশি মোহন সরকার। সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নদী তীরবর্তী অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্দেশনা ॥ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বর্তমানে দেশে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজমান থাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙ্গে জানমাল, ফসল, সেচ খালের ডাইক এবং অন্যান্য অবকাঠামোসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ক্ষতি হতে পারে কিংবা বন্যা পরবর্তী সময়ে জরুরী সার্ভিস পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হতে পারে। ফলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক সদর দফতরসহ মাঠ পর্যায়ের সবস্তরের কর্মকর্তা/কর্মচারীগণকে সার্বক্ষণিক সতর্কতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে এরূপ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট দফতর প্রধানগণকে স্থানীয় জেলা প্রশাসক এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে বন্যা মোকাবেলায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও নির্দেশ প্রদান করেছেন। বন্যাজনিত সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের স্বার্থে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বোর্ডের কর্মকর্তা/কর্মচারীগণের অনুকূলে সকল প্রকার ছুটি (হজব্রত পালনের নিমিত্ত ছুটি ব্যতীত) মঞ্জুর স্থগিত রাখাসহ তাদের সদর দফতর ত্যাগ না করার জন্যও তিনি নির্দেশ প্রদান করেছেন। গোয়াইনঘাটে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি ॥ সিলেটে সুরমা নদী বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অব্যাহত পাহাড়ী ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। প্রায় ৫০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তিস্তা বিপদসীমায়-৫ সহ¯্রাধিক পরিবার বন্যা কবলিত ॥ গর্জে উঠেছে তিস্তা। প্রচ-গতির ¯্রােতধারায় তিস্তা নদী অববাহিকা কাঁপছে। উজানের পাহাড়ী ঢল ও ভারি বর্ষণের তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাপাউবো প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল ॥ বিভিন্ন নদ-নদীর পানির বৃদ্ধি ও বন্যা এবং নদীভাঙন মোকাবেলাকে সামনে রেখে নীলফামারীর ডালিয়ায় অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের প্রকৌশলী, কর্মকর্তা কর্মচারী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী ও সকল কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
×