ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ‘বিশ্ব নেতা’

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ৬ জুলাই ২০১৮

বাংলাদেশ ‘বিশ্ব নেতা’

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে বিরাজমান রোহিঙ্গা সমস্যা ও তার সমাধানে সম্প্রতি ঢাকায় জাতিসংঘের মহাসচিব, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, আন্তর্জাতিক রেডক্রসের প্রধান এবং ইউএনএইচসিআরের প্রধানসহ শীর্ষ পর্যায়ের সফরটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। তারা প্রধানত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ বৃদ্ধিসহ আর্থিক সাহায্য ও অনুদান বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিলেও বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তবে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট যা বলেছেন তা বোধকরি ছাপিয়ে গেছে সবাইকে। তিনি বলেছেন, দারিদ্র্য নিরসন ও সবার জন্য সুযোগ সৃষ্টিতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আবির্ভূত হয়েছে ‘বিশ্ব নেতা’ হিসেবে। এমনকি এও বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নতি অন্যান্য দেশের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে। সত্য বটে, নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ নানা সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি মডেল। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। চলতি বছর অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে এডিপি বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের হার প্রায় ৯৪ শতাংশ। রেকর্ড পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। পোশাক রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ প্রবাসী আয়ও বেড়েছে সন্তোসজনক হারে। ব্যাংক সুদের হার এক ডিজিটে নেমে এলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানও বাড়বে নিঃসন্দেহে। এর মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মিলেছে স্বীকৃতি। নিজস্ব উদ্যোগে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে আশাব্যঞ্জক গতিতে। জ্বালানি ও বিদ্যুত উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথে বাংলাদেশ। এগিয়ে চলেছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রসহ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ। এগুলো বাস্তবায়িত হলে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পরিক্রমণ করছে ভূপৃষ্ঠের কক্ষপথ। দেশের মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকারের সুফল ভোগ করছে অনেকাংশে। শিক্ষার হারসহ মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। তবে এসবের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। ২০২১ সালের মধ্যে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। তবে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে যে কোন মূল্যে গণতন্ত্রকে আরও সংহত ও শক্তিশালী করতে হবে। আশার কথা এই যে, বাংলাদেশে উন্নয়ন ও গণতন্ত্র হাত ধরাধরি করে চলছে। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের ২০১৮ সালের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দাতা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সময়মতো অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, বাংলাদেশ জাতিসংঘ নির্দেশিত মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) সফলভাবে বাস্তবায়ন করে এগিয়ে যাচ্ছে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) বাস্তবায়নের দিকে। সার্বিক আর্থ-সামাজিক বিশেষ করে নারী ও শিশুস্বাস্থ্যসহ অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনে বাংলাদেশের অর্জন জাতিসংঘসহ বহির্বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। এরপরও টেকসই অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এর পাশাপাশি পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবেলায় প্রণোদিত আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থা যাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং উন্নয়নে আরও বেশি অবদান রাখতে পারে, সেদিকে আরও মনোযোগ দিতে হবে জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে।
×