ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আলোকিত ভুবনের বাসিন্দা

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ৫ জুলাই ২০১৮

আলোকিত ভুবনের বাসিন্দা

মীর বরকতে রহমানকে আবৃত্তি কিংবা নাটকের মানুষ চেনেন মীর বরকত নামে। সর্বজন শ্রদ্ধেয় ওয়াহিদুল হকের দেয়া এ নামেই তাঁর দেশজুড়ে খ্যাতি ও পরিচিতি। এদেশের আবৃত্তি শিল্পী ও মঞ্চ অভিনেতাদের প্রিয় মুখ কণ্ঠশীলনের অধ্যক্ষ মীর বরকত ১৯৫৮ সালের ১ জুলাই ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মীর মসুদার রহমান ও মাতার নাম রশিদা বেগম। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের জনক। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্নাতকোত্তর এবং ডিএআইবিবি শিক্ষার পর নাট্যশিক্ষাঙ্গন থেকে ১৯৮৩ সালে এক বছরের নাট্য বিষয়ক সার্টিফিকেট কোর্স এবং গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৮৪ সালে সংবাদ উপস্থাপনা ও রিপোর্টং কোর্স সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করার পর মীর বরকত যদিও ব্যাংকের চাকরিতে যোগদান করেছিলেন, কিন্তু সেটাই তার প্রধান কর্মের স্থান হলেও প্রধান পরিচয়টা গড়ে ওঠেনি একজন ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে। তিনি দিনে দিনে, কালে কালে হয়ে উঠেছেন একজন ভাষাবিদ, উচ্চারণবিদ, আবৃত্তিশিল্পী, প্রশিক্ষক, শিক্ষক, নাট্যনির্দেশক সর্বোপরি একজন সংস্কৃতিমান ব্যক্তি হিসেবে। প্রায় দুই দশক আগে ‘আবৃত্তিলোক’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে আবৃত্তি নিয়ে লিখে আবৃত্তিভাবনায় একটা মৌলিক পরিবর্তন এনেছিলেন। সেটি যখন ‘আবৃত্তির ক্লাস’ শিরোনামে বই আকারে প্রকাশিত হয়, তখন রীতিমতো তরুণ-প্রবীণ সকল আবৃত্তিশিল্পী-কর্মীদের কাছে অবশ্য পাঠ্যপুস্তক হিসেবে অপরিহার্য হয়ে ওঠে। ইতোমধ্যে বইটির তিনটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। তার একক আবৃত্তি অনুষ্ঠানের নাম ছিল ‘আজ অভিষেক আমার’। এছাড়া তিনি মোট ২৯টি আবৃত্তি প্রযোজনায় তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে তার নিজের গ্রন্থনায় ‘গুটুল মুটুল’, ‘কেবল হাসির দেশে’, ‘ওরা বেজে ওঠে শূন্য প্রহরে’, ‘আবদারের আধঘণ্টা’, ‘রাজপুত্তুর’, ‘রঙ্গ’, ‘আনন্দেতে জাগো’, ‘সবচেয়ে সুন্দর (গল্পকথন)’, ‘আলো মাখো ভালো থাকো’, ‘তোমার আকাশ দাও’, ‘যুদ্ধ শেষের যুদ্ধ’, ‘একাত্তরের ফুল’, ‘বারো গাঁয়ের তেরো ভূত’, ‘জয় বাংলার জয়’, ‘জল হাওয়ার কাব্য’ ও ‘অন্তর্দহন’ ছিল। অন্যান্য আবৃত্তি প্রযোজনাগুলোর মধ্যে বুদ্ধদেব বসুর রচনায় ‘তপস্বী ও তরঙ্গিণী’, সুনীল জানার রচনায় ‘রবি ঠাকুর কবি ঠাকুর’, সেলিনা হোসেনের রচনায় ‘আমিনা মদিনার গল্প’ সহ মুহম্মদ নুরুল হুদার রচনায় ‘রোমিও জুলিয়েটের গল্প’, বুদ্ধদেব বসুর রচনায় ‘অনাম্নী অঙ্গনা’, রফিকুর রশীদের রচনায় ‘ভাষার লড়াই’, রেজিনা বেগমের রচনায় ‘ দেশদ্রোহীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী’, জসীম উদ্দীনের রচনায় ‘নকশীকাঁথার মাঠ’, রাজীবদের রচনায় ‘বর্ষামানব’, লুৎফুর রহমান রিটনের রচনায় ‘ছড়ায় ছবিতে মুক্তিযুদ্ধ’, খালেদ হোসাইনের রচনায় ‘রানী যাবে বাপের বাড়ি’, দেশটিভিতে ছোটদের অনুষ্ঠান ‘কল্পলোকের গল্পকথা’ সহ রবীন্দ্র্র্রনাথ ঠাকুরের রচনায় ‘শান্তিগীত’ অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের রচনায় ‘রাজা-রানী’, মনোজ মিত্রের রচনায় ‘যা নেই ভারতে’ ও নাগিব মাহফুজের রচনা ও রাফিক হারিরির রূপান্তরে ‘যাদুর লাটিম’ মঞ্চনাটকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনটি নাটকই কণ্ঠশীলন প্রযোজনা করেছে। কণ্ঠশীলন বিদ্যায়তনের অধ্যক্ষ, প্রশিক্ষক, আবৃত্তি ও নাট্যনির্দেশক মীর বরকত তার জীবনযাপনের ৬০ বছর পূর্ণ করেছেন । গত ১৭ আষাঢ়, ১ জুলাই ৬১ বছরে পা দিয়েছে এই গুণীজন। গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, পিআইবি, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র, ছায়ানট (ভাষার আলাপ), বাংলাদেশ টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউট, শিল্পকলা একাডেমিসহ প্রায় শতাধিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানে তিনি বাচিক মাধ্যমের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ও করছেন। এছাড়া বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রমিত উচ্চারণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। সে হিসেবে তার গুণমুগ্ধ শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অগণিত। বাংলাদেশের বহু আবৃত্তি সংগঠন ও কতিপয় নাট্য সংগঠনে তিনি প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন। তিনি ইউনিসেফ প্রবর্তিত মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড-২০১১ সহ মোট ১৪টি সম্মাননা পেয়েছেন। পেয়েছেন স্বরকল্পন আবৃত্তি চক্র থেকে শ্রেষ্ঠ নির্দেশক সম্মাননা। আবৃত্তি অঙ্গন থেকে অপু সম্মাননা পদক পেয়েছেন। আনন্দমোহন কলেজ থেকে শ্রেষ্ঠ বক্তা ও অভিনয়ে বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন। শ্রেষ্ঠ নির্দেশক হিসেবে ঢাকা স্বরকল্পন থেকে আবৃত্তি সম্মাননা পদক ২০০৭ পেয়েছেন। চয়ন সাহিত্য ক্লাব থেকে চয়ন সাহিত্য ক্লাব স্বর্ণপদক লাভ করেছেন ২০১০ সালে। এছাড়াও তিনি সোনালী ব্যাংক লিমিটেড অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি থেকে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সম্মাননা পেয়েছেন।
×