ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তিনদিনের জাতীয় সম্মেলন শুরু

এসডিজি বাস্তবায়নে তাগিদ সমন্বিত সহযোগিতার

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ৫ জুলাই ২০১৮

  এসডিজি বাস্তবায়নে তাগিদ সমন্বিত সহযোগিতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নে যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। তাছাড়া বৃহৎ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বুধবার এসডিজির বাস্তবায়ন পর্যালোচনা বিষয়ক তিন দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনের প্রথম দিন বিভিন্ন সেশনে এ আহ্বান জানান বক্তারা। বলা হয়, কাঠামোগত প্রস্তুতির বাইরেও এসডিজি বাস্তবায়ন মেয়াদে যে কোন চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। যেমন রোহিঙ্গাদের প্রবেশ এদেশের টেকসই উন্নয়নে অন্যতম ঝুঁকি তৈরি করেছে। এজন্য যে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এসডিজি বাস্তবায়নে সরকার, মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, এনজিও, বেসরকারী উদ্যোক্তসহ সকল নাগরিককে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে। অন্যদিকে এসডিজি বাস্তবায়নে অর্থায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চারটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সেগুলোও সস্মেলনে তুলে ধরা হয়। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বুধবার দুপুর থেকে এ জাতীয় সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনের আয়োজন করে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গবর্নেন্স ইনভেশন ইউনিট (জিআইইউ)। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এ এ মান্নান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান। বক্তব্য রাখেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। পরবর্তীতে দিনব্যাপী তিনটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এগুলো হচ্ছে, এসডিজি বাস্তবায়নে অর্থ মন্ত্রণালয় ও এ মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলোর ভূমিকা, পরিসংখ্যান, আইএমইডি এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অবস্থান এবং ভূমিকা সম্পর্কে তুলে ধরা হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম এ মান্নান বলেন, শুধু গতানুগতিক কাজ দিয়ে এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এজন্য কাজের বাইরেও সৃজনশীল কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এমডিজিকে যেমন গুরুত্ব দিয়েছিলেন তার চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন এসডিজিকে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তেহারে যা বলা হয়েছে সেগুলো এসডিজির সঙ্গেই যুক্ত। যেমন দারিদ্র্য নিরসন এবং ক্ষুধা দুর করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য, যা এসডিজিরও প্রথম প্রাধান্য। সরকারের বার্তা একটাই। তা হচ্ছে স্বকীয়তা, স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং স্বাধীনতা। সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। স্বাধীনতার সুফল প্রত্যেকটি মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। এসডিজির প্রস্তুতি শেষ এবং বাস্তবায়নের পালা। এ পর্যায় যে যার স্থান থেকে কাজ করতে হবে। সবার ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে আসছে এটি অন্যতম একটি অর্জন। একটি সেশনে অংশ নিয়ে পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এসডিজির জন্য একটি বড় ইস্যু। জলবায়ু পরিবর্তন টেকসই উন্নয়নে জন্য হুমকি। তাই পানি ব্যবস্থাপনায় বিশেষ নজর দিয়ে সরকার ডেল্টা প্লান তৈরি করেছে। এটি বাস্তবায়নে কাজ করার মধ্যদিয়ে এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। অন্য একটি অধিবেশনের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার পর গত ৪৭ বছরে বাংলাদেশ মাথাপিছু আয় বাড়ানো, শিশু মৃত্যুহার কমানো এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে। তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একটি স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য আমাদের ২০৩৫ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে আমার অনুমান। এই সময়ের মধ্যে আমাদের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত ২৭ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে। জিডিপিতে বিনিয়োগের পরিমাণ হতে হবে ৪০ শতাংশ এবং বৈষম্য পরিমাপের সূচক গিনি সহগ বর্তমানের দশমিক ৪৮ থেকে দশমিক ৩৩ এ কমিয়ে আনতে হবে। এটি অর্জন করতে হলে আমাদের অর্থনীতির বিশেষ করে উৎপাদন এবং রফতানিতে বৈচিত্র্যকরণ করতে হবে। শিল্পায়নকে উচ্চ প্রবৃদ্ধির মূল হাতিয়ার করার পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ। এজন্য ভারী শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সৃষ্টিতে মনোযোগী হতে হবে বলে তিরি মনে করেন। আবুল কালাম আজাদ বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে প্রয়োজন হবে অতিরিক্ত ৯২৮ বিলিয়ন ডলার। এজন্য সরকারী, বেসরকারী, এনজিও, দাতা সংস্থা এমনকি পুরো সমাজকে এক প্লাটফর্মে আনতে হবে। এরকম সম্মেলন সেই সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এসডিজির বাস্তবায়ন শুরু হলেও এখন কাঠামোগতভাবে এসডিজির এ্যাকশন প্লান অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হবে। নজিবুর রহমান ব[েজঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: }থএড়ইধপশ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: }থএড়ইধপশলন, এসডিজি বাস্তবায়নকালীন যে কোন সময় অনাকাক্সিক্ষত চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। যেমন রোহিঙ্গা চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। এটিকে এসডিজির সঙ্গে যুক্ত করে দেখতে হবে। এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর সৃজনশীল চিন্তার ফসল। জাতিসংঘের মহাসচিব ও বিশ^ব্যাংক প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরের সময় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান এবং টেকসই উন্নয়নে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন। তারা আমাদের পাশেই আছেন। অর্থায়নে উন্নয়নসহযোগীদের এগিয়ে আসতে হবে। আইএমএফের প্রতিনিধি রাঙ্গা গুট সেলফ বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে আর্থিক খাতে চারটি ক্ষেত্রে সংস্কারের সুযোগ রয়েছে বলে আইএমএফ মনে করে। এগুলো হলো আর্থিক খাতে সংস্কার, উন্নয়ন ব্যাজেট ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব খাতের সংস্কার এবং বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি। ড. শামসুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ (বুধবার) তার অফিসে এসডিজির ন্যাশনাল এ্যাকশন প্লানের মোড়ক উন্মোচন করেছেন। আমরা মন্ত্রণালয়ভিত্তিক এসডিজি বাস্তবায়নের ম্যাপিং করেছি। আমরা ১০০ বছরের ডেল্টা প্লান করেছি এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে যাওয়ার প্লান তৈরি করছি। সব কিছুই এসডিজিকে ঘিরেই করা হচ্ছে। ভিন্ন ভিন্ন সেশনে অর্থ সচিব মুসলিম চৌধুরী বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আযম, পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম, পিকেএসএর চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ, বাংলাদেশ সেন্টার ফর এ্যাডভান্সড স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান প্রমুখ।
×