ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ হাসিনার ভাষণ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৫ জুলাই ২০১৮

 ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে  শেখ হাসিনার ভাষণ

এ বছর এপ্রিলের ৩০ তারিখে আমি ও আমার স্ত্রী সিতারা বস্টনস্থ ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের প্রয়াত ছেলে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের এককালীন সহযোগী অধ্যাপক ড. জালাল আলমগীরের স্মরণার্থে আয়োজিত বার্ষিক স্মারক বক্তৃতায় উপস্থিত ছিলাম। স্মারক বক্তৃতায় বক্তা ও আলোচকরা ড. জালাল আলমগীরের কথা ও লেখায় প্রতিফলিত সূত্রাদি অনুসরণ করে সমাজ উন্নয়নের লক্ষ্যে সকলের জীবনে উপরে ওঠার সিঁড়ি সমভাবে খুলে দেয়ার ওপর জোর দেন এবং অসাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনাকে এই যুগের বিশ্বব্যাপী মানবিক উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করেন। এই বক্তৃতা শুনে ও আলোচনায় অংশগ্রহণ করে আমার মনে এসেছিল ১৯৯৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ম্যাসাচুসেটের পার্শ্ববর্তী অঙ্গরাজ্য রোড আইল্যান্ডের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের টমাস জে ওয়াটসন জুনিয়র আন্তর্জাতিক নিরীক্ষণ ইনস্টিউটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদত্ত স্টিফান এ অগডেন জুনিয়ার স্মারক বক্তৃতার কথা। ড. জালাল আলমগীর তখন ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ ইনস্টিটিউটে গবেষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং প্রধানত তারই উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উপরোক্ত স্মারক বক্তৃতা দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। অন্যদের মধ্যে তখনকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান ও প্রধানমন্ত্রীর সচিব হিসেবে আমি এই বক্তৃতায় উপস্থিত ছিলাম। ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই স্মারক বক্তৃতা স্টিফান এ অগডেন জুনিয়র (১৯৬০ শ্রেণী) এর নামে প্রতিষ্ঠিত। অগডেন জুনিয়র স্নাতক হওয়ার আগেই মারা যান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার জীবন ও প্রচেষ্টা প্রযুক্ত করবেন বলে সহপাঠী ও শিক্ষকদের বলেছিলেন। এর আগে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ভেলেরি গিস্কার্ড দ্য এস্টেয়াং, জর্দানের বাদশা হোসেন এবং আয়ারল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি মেরী রবিনসন অগডেন স্মারক বক্তৃতা দিয়েছিলেন। টমাস জে ওয়াটসন জুনিয়র আন্তর্জাতিক নিরীক্ষণ ইনস্টিটিউট ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই নিরীক্ষণ কেন্দ্র স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আন্তর্জাতিক সংগঠন ও কূটনীতির ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দেয়ার এবং নিরীক্ষণ করার একটি নামকরা প্রতিষ্ঠান। ১৯৭৫-এর পর বহু বছর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ একনায়কত্ব ভিত্তিক কুশাসনের পর অবাধ ও মুক্ত নির্বাচনের ভিত্তিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠাকরণ এই ইনস্টিটিউটে তৃতীয় বিশ্বে গণতন্ত্রের আত্মপ্রকাশ বিষয়ে গভীর আগ্রহ সৃষ্টি করেছিল। এই প্রেক্ষিতেই ১৯৯৭ সালে এই ইনস্টিটিউটে বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। শেখ হাসিনার বক্তৃতার শিরোনাম ছিল ‘গণতান্ত্রিক সুসংহতি ও উন্নয়ন’। তিনি সহজ ভাষায় ১৯৯৬ সালের বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত অবাধ ও ন্যায়নিষ্ঠ নির্বাচন- যার ভিত্তিতে তার দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন- তার বিবরণ দেন এবং তার দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি কিভাবে তিনি সংস্কার ও সুসংহত করবেন তার রূপরেখা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, প্রথমত, তিনি দেশের সামাজিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য গ্রাম, শহর এবং নগর পর্যায়ে স্থানীয় সরকারের উন্নয়ন সাধন করবেন। তিনি বলেন যে, জবাবদিহিত্ব সংবলিত গণতন্ত্রে তৃণমূল পর্যায়ে গণঅংশায়নমূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়া থাকতে হবে। তার মতে গণঅংশায়ন বিস্তৃত না হলে গণতন্ত্র বিস্তৃত ও শক্তিশালী হয়না। দ্বিতীয়ত, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের রূপরেখা উপস্থাপন করে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ও রাজনৈতিক মতবাদ নির্বিশেষে সকল জনগণকে সেবা করার লক্ষ্যে জনগণের কাছে জবাবদিহিত্বের ভিত্তিতে তার সরকার এগিয়ে যাবে বলে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন। পেছনে ফেলে আসা অগণতান্ত্রিক সরকার বা প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতামূলক কার্যকলাপ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তিরোহিত করার জন্য তার এই আদর্শিক লক্ষ্য স্থিরীকৃত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তৃতীয়ত, তিনি বলেন যে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের প্রশাসনে তিনি আইনের শাসন আদর্শ হিসেবে সংরক্ষণ ও প্রসারণ করার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়ে তার দায়িত্ব পালন করবেন। সরকারী কার্যক্রমের প্রতি দৃষ্টি আর্কষণ করে তিনি সমবেত শ্রোতাদেরকে বলেন যে, সবকিছুর উপরে জনগণের উন্নয়ন ও কল্যাণে নিবেদিত উত্তম সরকার হবে আকৃতিতে ছোট এবং সহজে নির্বাচিত নেতৃত্ব কর্তৃক তত্ত্বাবধায়নযোগ্য। এই ভাবধারাকে বিস্তৃত করতে গিয়ে তিনি সুস্পষ্টভাবে জানান যে, বাংলাদেশে তার সরকার কার্য সম্পাদনে লালফিতার দৌরাত্ম্য কমাবে এবং সরকারী ব্যয়কে আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখবে। তিনি বলেন, ছোট সরকার বড় সরকারের তুলনায় অধিকতর স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতা সম্পন্ন। তিনি এই প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, সম্পদ-নিপুণ-প্রশাসন এভাবেই গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে পারে। প্রায় ৩ শত প্রবীণ শিক্ষক, তরুণ গবেষক ও নতুন সমাজ ব্যবস্থার স্বাপ্নিক ছাত্রছাত্রীরা গভীর মনোযোগ সহকারে নতুন যুগের সারথী হিসেবে তাকে বরণ করে পলকবিহীন সম্মান ও শ্রদ্ধা নিয়ে তার কথাগুলো শুনছিলেন। আর আমরা সমবেত বাংলাদেশীরা আমাদের নেত্রীকে আমাদের হৃদয় উৎসারিত গর্ব নিয়ে অবলোকন করছিলাম। বক্তৃতার শেষাংশে তিনি মুক্ত ও গণতান্ত্রিক পৃথিবীর নেতৃত্বে আসীন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে দুটি গুরুত্বপূর্র্ণ বিষয়ের প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এক. তিনি বলেন যে, শীতল যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রকে বহির্বিশ্বেও গণতন্ত্রকে অবিচল সমর্থন দিয়ে যেতে হবে। তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেন যে, এই সূত্র অনুযায়ী উন্নয়নশীল পৃথিবীতে কোন একনায়কত্বভিত্তিক অগণতান্ত্রিক সরকারকে কোন প্রকার নৈতিক বা বস্তুগত সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে দেয়া সঙ্গত হবে না। এভাবেই গণতন্ত্রের প্রসারণে যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব, যা তার ওপর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে বর্তিয়েছে তা পালন করতে হবে। দুই. তিনি পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশসমূহের অভিজ্ঞতার আলোকে গণতন্ত্রের অনুকূলে এই নৈতিক সমর্থন বৃহত্তর অবয়বে অব্যাহতভাবে দেয়ার প্রক্রিয়ায় সকল গণতন্ত্রকে একই কাঠামোয় রূপান্তরণ বা পর্যবসিতকরণ বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র স্থাপনের অনুকূলে হবে না বলে সংশ্লিষ্ট সকলকে সাবধান করেন। তার মতে, এ ক্ষেত্রে গ্রহণীয় সকল কার্যক্রমে গণতন্ত্রের মৌল সূত্র রক্ষা করে সংশ্লিষ্ট দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে অবজ্ঞা থেকে রক্ষা করা যাবে। তার বক্তৃতার উপসংহারে শেখ হাসিনা ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও ছাত্রদের কাছে বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অধিকতর সচেতন থাকার আহ্বান জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হওয়া ছাত্ররা যেসব সমাজ ও দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতি তার আয়নায় প্রদর্শিত হুবহু প্রতিকৃতির নয়, তাদেরকে ও তারা যদি মৌল গণতান্ত্রিক আদর্শের অবিচল অনুসারী থাকে, সমর্থন দিয়ে যাবেন। বক্তৃতার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দ্বিপ্রহরিক আহারে নিয়ে বসেছিলেন ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ভার্তান গ্রেগরিয়ান। মূল টেবিলে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রেসিডেন্ট গ্রেগরিয়ান, ইন্সটিটিউটের পরিচালক টমাস জে বিয়াসটেকার ও আমাদের ছেলে ড. জালাল। প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে নিজের চেয়ার ছেড়ে জালালকে বসিয়ে দিয়েছিলেন আমাদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল আহসান চৌধুরী। পাশের টেবিলে দু’জন অধ্যাপকের সঙ্গে ছিলাম আমি ও প্রতিমন্ত্রী আহসান। শুনছিলাম প্রেসিডেন্ট গ্রেগরিয়ান ও পরিচালক বিয়াসটেকার ও ড. জালালের সঙ্গে নেত্রীর কথাবর্তা। নেত্রী তাদেরকে বলেছিলেন, পূর্ণাংশে গণতন্ত্র স্থাপন কল্পে দারিদ্র্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার অপ্রতুলতা দূর করা প্রয়োজন। তাকে সমর্থন জানিয়ে সম্পূরকতার মোড়কে সুযোগের সমতা বিধান না করলে সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না বলে তারুণ্যের দৃঢ়তা নিয়ে বলেছিলেন ড. জালাল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, লক্ষ্য করে অকুণ্ঠ চিত্তে জালালের সমভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হিসেবে সমসুযোগ প্রসারণের প্রয়োজন সূত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তেমনি পরিচালক বিয়াসটেকার শেখ হাসিনা ও ড. জালালের মত গ্রহণ ও সমর্থন করে বলেছিলেন প্রায় একই লক্ষ্যে শিক্ষা ও গবেষণা পরিচালনার জন্য তার ইনস্টিটিউট কাজ করে যাবে। পরে তারুণ্যে উদ্বেলিত ড. জালালের সঙ্গে কথা বলে আমি ও সিতারা বাবা-মা হিসেবে নিশ্চিত হয়েছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমতার অনুকূলে দৃঢ় সমর্থন এই দর্শন প্রসারণে যতদিন তিনি বেঁচেছিলেন ততদিন লেখা ও কথায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে অদম্য সন্দীপন দিয়েছে। যদ্দুর জানি, শেখ হাসিনার উপরোক্ত উক্তি অনুযায়ী ওয়াটসন ইনস্টিটিউট কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৯৭ সালে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে এই ইনস্টিটিউট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দু’দল শিক্ষক, প্রাক্তন সরকারী নীতিনির্ধারক ও সামরিক নেতারা ভিয়েতনামের হ্যানয়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং যুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া সুযোগের যথার্থ প্রয়োগ বিষয়ে মতবিনিময় করে সচেতন পৃথিবীবাসী হিসেবে আমাদের সুনাম বিস্তৃত করেছিলেন। এক্ষেত্রে ও লক্ষ্যে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ব্রাউনের ওয়াটসন অধ্যাপক জেমস জি ব্লাইট। এ বছর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে হ্যানয়ে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আয়োজিত মুক্ত পৃথিবীর সাংসদদের এক আলোচনা সভায়- সেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম ভিয়েতনামের প্রতিনিধিরা ব্রাউন থেকে আসা সেসব প্রতিনিধিদের সংবেদনশীলতা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন। ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কথাগুলো বলেছিলেন তা তিনি প্রতিধ্বনিত করেছিলেন ১৯৯৮ সালের ৪ আগস্ট ঢাকায় অনুষ্ঠিত সুশাসনের ওপর আন্তর্জাতিক সেমিনারে তার প্রদত্ত উদ্বোধনী ভাষণে। অন্য কথায়, গণতন্ত্র ও সুশাসন এবং এই দুয়ের এর অবিচ্ছেদ্য উপকরণ দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার মাধ্যমে সমতার প্রসারণ সম্পর্কে তার ভাবাদর্শ পরবর্র্তীকালেও পরিবর্তনীয় হয়নি। ঐ সম্মেলনে গণতন্ত্র ও সুশাসনের ভাবাদর্শ মৌল পর্যায়ে অপরিবর্তিত রেখে তিনি বলেছেন যে, এ অর্জন ও প্রসারণের অব্যাহত প্রচেষ্টা সকল গণতন্ত্রকে প্রযুক্ত করতে হবে। ১৯৯৭ সালে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়াটসন ইনস্টিটিউট যে গণতন্ত্র ও সুশাসনের মৌল দর্শন তিনি তরুণ ছাত্র, চৌকস গবেষক ও প্রবীণ শিক্ষকদের সামনে উপস্থাপিত করেছিলেন তা অপরিবর্তনীয় সংকল্পবোধ নিয়ে তিনি বাস্তবায়িত করে যাবেন বলেই আমরা শ্রোতারা ১৯৯৮ সালে আবারও উপলব্ধি করেছি। সেই এপ্রিলের ৩০ এর সন্ধ্যায় স্মারক বক্তৃতাত্তোর বস্টন উপসাগরের তটে ছবির মাধুরিমা নিয়ে বসানো এক রেস্তরাঁয় রাতের খাবারের টেবিলে বসেছিলাম আমরা ক’জন-ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন আচার্য, অধ্যাপক লেইলা (ফিলিস্তিন থেকে আগত অভিবাসী) ও রজনী (ভারত থেকে আগত অভিবাসী), স্মারক বক্তা শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাদিন নাবের, আমাদের বন্ধু বস্টন প্রবাসী ড লিখন, সিতারা ও আমাদের ছোট ছেলে জয় ও বউমা হিমি। অধ্যাপক নাবের বলছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সমকালে সৃষ্ট শ্বেত শ্বেস্টতা ও ইসলাম ভীতির কথা। আমরা বলছিলাম সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে সৃষ্ট মুসলিম বিদ্বেষ এই দেশের প্রতিষ্ঠাতা পিতাদের দিয়ে যাওয়া আদর্শের অবমাননা। এর বিপরীতে আমরা এও বলেছিলাম সিরিয়া, ইরাক ও আফগানিস্তানে মুসলমানদের মধ্যে অন্তকলহ যা মানবতার বিপর্যয় বয়ে এনেছে। আলোচনায় উঠেছিল ফিলিস্তিনে ইসরাইলের দমন কার্যক্রম- যা কেবল প্যালেস্টানীদের জন্য নয়- পৃথিবীব্যাপী সকল মানবাধিকার সচেতন জনগণের জন্য বিপর্যয়। আর সবশেষে আদর্শ ও অনুপ্রেরণার প্রতীক হিসেবে আলোচনায় এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া ও সমর্থন প্রকাশের প্রাণস্পর্শী উদাহরণ। আমরা সকলে একমত হয়েছি যে, কোন কারণেই জাতিসংঘ কর্তৃক ১৯৬২ সালে গৃহীত আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী কোন মানুষকেই তার পছন্দের রাষ্ট্রে থাকার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। দ্বিধাহীন চিত্তে উপস্থিত আমরা সকলে জোছনার মতো আলোকিত উপসাগর তটে পৃথিবীকে অপরূপ নতুন সমাজের পথে নিয়ে যাওয়ার অদম্য লক্ষ্যে সমর্থন জানিয়েছি এই কনভেনশনের সূত্র অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নাগরিক অধিকার দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শেখ হাসিনার দৃঢ়তম দাবির প্রতি। শোক ও দুঃখে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমরা এসব কথায় খুঁজে পেয়েছি আমাদের প্রয়াত পুত্র ড: জালালের মানবিক সমতার অনুকূলে লেখা ও বলা সকলের ধমনীতে মানুষের ভূমিকায় বেঁচে থাকার সবল ধ্বনি প্রতিধ্বনি। আর পরম কৃতজ্ঞতা ও গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছি ১৯৯৭ সালে ৭ ফেব্রুয়ারি ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণ ড. জালাল আলমগীরের সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠাকল্পে তার অধ্যয়ন ও গবেষণা নির্যাসিত উপলব্ধির অনুকূলে তার দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবিচল ও দৃঢ় সমর্থন। লেখক : সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা
×