ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে সিলেটে বিএনপির মেয়র প্রার্থীকে জামায়াতের সমর্থন

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৫ জুলাই ২০১৮

 অবশেষে সিলেটে বিএনপির মেয়র প্রার্থীকে জামায়াতের সমর্থন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে সমর্থন জানিয়েছে ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াত। সেই সঙ্গে তারা নিজ দলের মেয়রপ্রার্থী প্রত্যাহার করে নেবে। তবে আসন্ন ৩ সিটি কর্পোরেশনেই জামায়াতের ক’জন কাউন্সিলর প্রার্থীকে বিএনপির ছাড় দিতে হবে। ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে এ ছাড়াও ৩ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জামায়াত ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে। তিনি বলেন, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২০ দলীয় জোট একক প্রার্থী দেবে এবং জোটগতভাবে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে। আমাদের একক প্রার্থীর জন্য কাজ করার বিষয়টি জামায়াত অনুমোদন করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিবেরর সঙ্গে বিএনপির কোন বৈঠক হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব কনসার্ন আছেন। এটা তারা নিজেরাই জানিয়েছেন। এখনও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৫ মাস বাকি আছে। ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সিলেটের মেয়র প্রার্থী নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে কোন রাজনৈতিক টানাপোড়েন হবে না। জামায়াত ৩ সিটিতে ২০ দলের একক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার বিষয়ে বৈঠকে সম্মত হয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে বৈঠকের বরাত দিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির দৃঢ় অবস্থানের সঙ্গে একমত হয়েছে ২০ দল। খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তাঁর সুচিকিৎসার দাবি জানানো হয়েছে বৈঠক থেকে। এ ছাড়াও তার জামিন নিয়ে সরকার যে ছলচাতুরি করছে তার প্রতিবাদ জানিয়েছে ২০ দলীয় জোট। গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি দাবি করে নজরুল ইসলাম বলেন, ২০ দলীয় জোট গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচন প্রত্যাখান করেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সরকারের তামাশা ও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, গ্রেফতার ও গুমের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত জোট নেতারা। আন্দোলন চলাকালে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি ও তাদের ন্যায্য দাবি মেনে নেয়ারও আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। একই সঙ্গে আমরা জোটের পক্ষ থেকে প্রেসক্লাবে এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের দাবির প্রতি সমর্থন জানাই। উল্লেখ্য, সিলেট সিটি নির্বাচনে বিএনপি আরিফুল হককে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়। জামায়াত ছাড়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সকল শরিক দল এ প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন জানালেও এতদিন জামায়াত সমর্থন জানায়নি। জামায়াত সিলেট মহানগরী সভাপতি এহসানুল মাহবুব জোবায়েরকে মেয়র প্রার্থী করে। তবে রাজশাহী ও বরিশালে জামায়াত মেয়র পদে কোন প্রার্থী দেয়নি। সিলেটে বিএনপির প্রার্থীকে সমর্থন জানাতে এর আগে ২০ দলীয় জোটের ২টি বৈঠক করেও জামায়াতকে বাগে আনা যায়নি। অবশেষে বহু দেনদরবারের পর বুধবার ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে জামায়াতের একজন প্রতিনিধিকে হাজির করে বিষয়টি সুরাহা করা হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, জামায়াতের নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল হালিম, জাতীয় পার্টি (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাগপা সভাপতি অধ্যাপক রেহানা প্রধান, বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, এনডিপি চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, খেলাফত মজলিশ মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের, ডিএল সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ সভাপতি এএইচএম কামরুজ্জামান খান, পিপলস লীগ মহাসচিব সৈয়দ মাহবুব হোসেন প্রমুখ। ২০ দলীয় জোট জাতীয় ঐক্যের চেষ্টা করছে-নোমান ॥ ২০ দলীয় জোট জাতীয় ঐক্যের চেষ্টা করছে আর এ ঐক্য হলে সরকারের পতন ত্বরান্বিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান। বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ‘কমল একাডেমি’ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। নোমান বলেন, সরকার গণতান্ত্রিক ও জনবান্ধব হলে কখনই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা হতো না। দেশে যদি গণতন্ত্র থাকত, কথা বলার অধিকার থাকত তাহলে সাধারণ ছাত্রদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশ এভাবে নির্যাতন চালাতে পারত না। খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে সরকার গণতন্ত্রের পথ প্রশস্ত ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে বলে মন্তব্য করে নোমান বলেন, গণতন্ত্রের আবরণে এখন দেশে এক দলীয় বাকশালের শাসন চলছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের সকল ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। এ থেকে জাতি মুক্তি চায়। তিনি বলেন, যদি জনগণ দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চায় তাহলে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান মঈনুল আহসান মুন্নার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, ব্যারিস্টার সরোয়ার হোসেন, সাংবাদিক এমএ আজিজ, কল্যাণ পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুর রহমান প্রমুখ।
×