ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরকারী কর্মচারীদের আন্তরিকতার ওপরই উন্নয়ন নির্ভর করে ॥ শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৫:১১, ৫ জুলাই ২০১৮

  সরকারী কর্মচারীদের আন্তরিকতার  ওপরই উন্নয়ন  নির্ভর করে ॥  শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বুধবার ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সরকারী কর্মচারীদের কাছে মাঠ পর্যায়ে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা এবং চিন্তা-ভাবনা কর্মপরিকল্পনায় সন্নিবেশের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘২০২১ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা কেমন বাংলাদেশ দেখতে চাই তা বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ইতোমধ্যে শুরু করেছি। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত আপনাদের সেখানে কোন পরিকল্পনা ও অভিজ্ঞতা যোগ করার থাকলে আপনারা তা করতে পারেন।’ খবর বাসসর। শেখ হাসিনা বুধবার সকালে তার তেজগাঁও কার্যালয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সরকারী কর্মচারীদের সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে সরকারের প্রদত্ত বাজেট বাস্তবায়নে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনাদের কর্মোদ্দীপনার ওপরই জাতির উন্নয়ন নির্ভরশীল। দেশের উন্নয়নের জন্য কাজের গতি ত্বরান্বিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমরা রাজনীতিবিদেরা শুধু উন্নয়নের পথ দেখাতে পারি কিন্তু এই কাজের বাস্তবায়নের দায়িত্ব আপনাদের ওপরই বর্তায়। প্রধানমন্ত্রীর আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সুষ্ঠুভাবে কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের পাশাপাশি এসডিজি লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা সম্ভব হবে। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সচিববৃন্দ বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন এবং পরে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সচিববৃন্দ এই চুক্তির একটি করে কপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন। বাংলাদেশে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রথম বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বা এপিএ প্রবর্তন করা হয়। এবার পঞ্চম বছরের মতো এ চুক্তি স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট অর্থবছর সমাপ্ত হওয়ার পর ওই বছরের চুক্তিতে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা-সমূহের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রকৃত অর্জন মূল্যায়ন করা হবে। এসময় ২০১৬-১৭ বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ায় বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়কে সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। এবারই প্রথম অনুষ্ঠানে সিনিয়র সচিব ও সচিব পর্যায়ে শুদ্ধাচার পুরস্কার ২০১৭-১৮ প্রদান করা হয়। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব, মোঃ মফিজুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোঃ শফিউল আলম, মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মোঃ আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সংস্কার ও উন্নয়ন) এনএম জিয়াউল আলম, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব মোঃ মফিজুল ইসলাম ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সচিববৃন্দ, বিভিন্ন বিভাগ ও দফতরের প্রধানগণ, উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন দেশের কূটনিতিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, ‘মাঠে কাজ করতে গেলে অনেক নতুন কিছু চোখে পড়ে কাজেই আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে আমাদের পরবর্তী ধাপটা কি হবে-২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হলে আমাদের কোথায় কি করণীয় এ ব্যাপারে যে ধারণাগুলো আপনারা পাবেন, অন্তত সেটুকু আপনারা দিতে পারেন, যাতে করে আমরা আগামী দিনের পরিকল্পনায় সেটা নিয়ে নিতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘যদি একটা সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা আমাদের থাকে, একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আমাদের থাকে তখন যেই ক্ষমতায় থাকুক না কেন সেটার বাস্তবায়ন অবশ্যই করতে পারবে এবং করবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।’ আর সেই লক্ষ্য নিয়েই তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সরকারী কর্মচারীদের কর্মক্ষেত্রে তাদের চিন্তা-ভাবনাগুলো সমন্বয় করে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তাহলে ২০৪১ সালের লক্ষ্য অর্জনেও সেটা অনেক কাজে আসবে বলে আমি মনে করি।’ শেখ হাসিনা বলেন, সরকারী কর্মকা-ে দক্ষতা বৃদ্ধি ও গতিশীলতা আনয়ন, সেবার মানোন্নয়ন এবং প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই তার সরকার ফলাফলভিত্তিক সরকারী কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বা জিপিএমএস চালু করেছে। তিনি বলেন, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) মূলত তার প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা দলিল। একইভাবে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিবগণ সংযুক্ত দফতর বা সংস্থাসমূহের সঙ্গে এবং দফতর বা সংস্থাসমূহের প্রধানগণ মাঠ পর্যায়ের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কৌশলগত উদ্দেশ্যসমূহ, এ সকল লক্ষ্য অর্জনের জন্য গৃহীত কার্যক্রমসমূহ এবং এ কার্যক্রমের ফলাফল পরিমাপের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে এসডিজি’স ইমপ্লিমে-ন্টেশন রিভিউ কনফারেন্স-২০১৮’র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এসডিজি’স ইমপ্লিমেন্টেশন রিভিউ কনফারেন্স-২০১৮ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই কনফারেন্সের সঙ্গে আমাদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা, এর বাইরে আমাদের নিজেদের দেশের জন্য কি করণীয় সেটাও সঙ্গে সঙ্গে আপনারা মূল্যায়ন করবেন। যাতে আগামী দিনের পরিকল্পনায় সেটাকে সম্পৃক্ত করে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন করা যায়। তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেন, আমার পরিষ্কার কথাÑ প্রত্যেকটি গ্রাম হবে এক একটি শহরের মতো, প্রত্যেকটি গ্রামের মানুষ যেন সকল নাগরিক সুবিধা পায়Ñ সেটা আমরা নিশ্চিত করব। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, একটি মানুষও সেখানে অশিক্ষিত থাকবে না, একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না, একটি মানুষও ক্ষুধায় কষ্ট পাবে না বা স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হবে না। প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবন পাবে। সরকার প্রধান, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগকে আরও শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তার সরকার ২০১২ সালে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন করেছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ নীতিমালার আলোকে এবারই প্রথম সিনিয়র সচিব বা সচিব পর্যায়ে শুদ্ধাচার পুরস্কার ২০১৭-১৮ প্রদান করা হচ্ছে। রাষ্ট্রে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় সকল সিনিয়র সচিব ও সচিবগণ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছেন। এ পুরস্কারপ্রাপ্তিতে সচিব, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগকে তিনি অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই দেশ এগিয়ে যাক এবং এমডিজি বাস্তবায়নে যেমন দক্ষতা দেখিয়েছি আশাকরি এসডিজি বাস্তবায়নেও তেমন দক্ষতা দেখাতে পারব। কারণ, আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং প্রেক্ষিত পরিকল্পনাগুলো একে অপরের পরিপূরক। এর বাইরে দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য দেশের মানুষের জন্য যেসব পরিকল্পনা তার সরকার নিয়েছে সেগুলোও বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাহলেই আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জন করতে পারব। লক্ষ্য অর্জনে সফলকাম হওয়ায় জন্য কর্মক্ষেত্রে বিশ্বাস ও আস্থা বজায় রেখে কাজ করাটাও জরুরী বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে সকল বাধা ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরেন। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এই একটা সিদ্ধান্তের পর বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে মন মানসিকতা পাল্টে গেছে।’ দুর্যোগ-দুর্ভিক্ষ আর ভিক্ষুকের দেশ হিসেবে নয়, বাংলাদেশকে বিশ্বে এখন সম্মানের চোখে দেখা হয়, আপনারা নিজেরাও বিদেশে গেলে এই তফাতটা দেখতে পারেন, বলেন তিনি। সরকার প্রধান বলেন, বিশ্বাস, দৃঢ়তা এবং সততা না থাকলে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু হত না। আর সে সিদ্ধান্তের পরই বাংলাদেশের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এক বিদেশী সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন- আমারতো দেশের মাটি আছে, মানুষ আছে-তা নিয়েই আমি শুরু করব এবং সেভাবেই শুরুর পর একটি দেশকে যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গড়ে তোলা যায় তা আজকে আমরা প্রমাণ করেছি। শেখ হাসিনা বাস্তবতা মেনে নিয়েই বলেন, আমি জানি ছোট দেশ, ১৬ কোটি মানুষ। তবে, এই কঠিনকেই জয় করার ক্ষমতা বাংলাদেশের মানুষের আছে। কারণ, জাতির পিতা বলে গেছেন, ‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না।’
×