ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিলেটে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৫ জুলাই ২০১৮

  সিলেটে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

স্টাফ রিপোর্টার সিলেট অফিস ॥ অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সিলেটে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সব নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার সড়ক যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গত ৩ দিনের টানা বৃষ্টি ও সারী এবং পিয়ান নদী দিয়ে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে উপজেলার হাওর এলাকা তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের আসামপাড়া হাওর, সাঙ্কিভাঙ্গা হাওর, বাউরভাগ হাওর, জাফলং চা-বাগান, আলীরগাঁও ইউনিয়নের নাইন্দা হাওর, তীতকুলি হাওর, বুধিগাঁও, কাকুনাখাই হাওর, কাকুনাখাই, খলা, সতিপুর হুদপুর, উজুহাত, পাঁচসেউতি, খলাগ্রাম, নয়াখেল, খাস মৌজা, ফুলেরগ্রাম, লাফনাউট, খমপুর, আলীরগ্রামসহ অধিকাংশ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। এছাড়া ডৌবাড়ী, পশ্চিম জাফলং, লেঙ্গুড়া, তোয়াকুল, রস্তমপুর, নন্দিরগাঁও এবং ফতেপুর ইউনিয়নের একাংশসহ বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বিছনাকান্দি ও জাফলং পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছে। তাছাড়া রোপা আউশ ও বোনা আমন ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ফসল হানির আশঙ্কা রয়েছে। শতাধিক মৎস্য খামার পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার পাল জানান, বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির সার্বক্ষণিক খোঁজ নেয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী হাতে পৌঁছেছে। প্রতি ইউনিয়নে এক টন করে চাল দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও চাল দেয়া হবে। গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী উপজেলার চলিতাবাড়ী ও শিয়ালাহাওরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে জি.আর চাল বিতরণ করেন। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৭০ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষসহ সুরমা পাড়ের লোকজন পানি বন্দী রয়েছেন। উপজেলার দিঘীরপাড় ইউপির দর্পনগর, সাতবাঁকের চপিড়া, লক্ষ্মীপ্রসাদের গৌরিপুর, সদর ইউপির উমাগর, পৌরসভার ডালাইচর ও রাজাগঞ্জ ইউপিসহ বিভিন্ন স্থানের লোকজন গত বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়া সুরমা ডাইক দিয়ে পানি প্রবেশের আতঙ্কে রয়েছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ইরি ধানের চারা তলিয়ে গেছে। সুনামগঞ্জে বন্যার আশঙ্কা ॥ আমাদের সংবাদদাতা জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জে পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টিতে সুরমা নদীর পানি (সুরমা নদীর ষোলঘর পয়েন্টে ডেঞ্জার লেভেল স্কেলে) দুপুর ১২টায় বিপদসীমার ৫৫ সে.মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৫ মিমি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বুধবার সকালে পাহাড়ী ঢলের পানি নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাটে দেখা গেলেও স্থানীয়রা বলছেন বৃষ্টি থামলে এই পানি কমে যাবে। এটাকে বন্যা পরিস্থিতি না বললেও বন্যার আশঙ্কা করছেন তারা। হাওড়ের পানি ডেঞ্জার লেভেলের নিচে থাকায় বন্যা পরিস্থিতি আশঙ্কা করছেন না। তবে এভাবে মুষল ধারে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। এদিকে দোয়ারাবাজার উপজেলার শরিফপুর, টেবলাই, বৈটাখাই, নুরপুর, আলীপুর, বুঝনা, রংপুর, তেগাংঘা, মাইজলা গ্রামগুলো পাহাড়ী ঢলে রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে রয়েছে। ফলে এসব এলাকার লোকজন গত দু’দিন ধরে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এছারা বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম পাহাড়ী ঢলে রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। পৌর শহরের ষোলঘর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আবদুল জলিল বলেন, গত তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ সাবিরুল ইসলাম জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খুশি মোহন সরকার বলেন, সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা নেই। ডেঞ্জার লেভেল থেকে হাওড়গুলোর পানি নিচে রয়েছে। রাঙ্গামাটির সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে ॥ রাঙ্গামাটি থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানিয়েছে, টানা তিনদিনের ভারি বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ী ঢলে চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটি সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় দিনের মতো রাঙ্গামাটির সঙ্গে চট্টগ্রামের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। অবিরাম ভারি বর্ষণের কারণে রাঙ্গামাটি শহরে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শহরের বেশকিছু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নতুন করে পাহাড় ধস দেখা দেয়ায় রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ রাঙ্গামাটি শহরসহ সারা জেলায় বার বার মাইকিং করে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন এলাকা মনিটরিং করার জন্য জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্ব প্রদান করেছেন। প্রশাসন জেলায় ২১টি আশ্রয় কেন্দ্রে দুর্গত মানুষকে আশ্রয় দেয়ার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন। ভারি বর্ষণের ফলে মঙ্গলবার সকাল থেকে রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়কের রাউজান এলাকা পাহাড়ী ঢলে সড়কটি ডুবে যাওয়ায় বুধবারও রাঙ্গামাটির সঙ্গে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ভারি বর্ষণের ফলে জেলার কাপ্তাই লেক বেষ্টিত ৮টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেক স্থানে লেকের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘর বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। সড়ক বন্ধ থাকায় ব্যাপকভাবে মৌসুমী ফল আম, কাঁঠাল, কলা ও আনারাস জেলার বাহিরে নিতে না পারায় পচে ক্ষতি হয়েছে। কক্সবাজারে উড়োজাহাজ ওঠানামায় বিঘ্ন ॥ স্টাফ রিপোর্টার কক্সবাজার থেকে জানান, ভারি বৃষ্টিপাত ও বিরূপ আবহাওয়ায় কক্সবাজার বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামায় বিঘ্ন ঘটেছে। ভারি বৃষ্টিপাত ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে দুটি উড়োজাহাজ পর্যটন শহরের বিমানবন্দরে নামতে না পেরে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে জরুরী অবতরণ করেছে। বুধবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ঢাকা থেকে আসা দুটি উড়োজাহাজ অবতরণ না করে ফিরে যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক মোঃ সাইদুজ্জামান। তিনি বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার পর আবহাওয়ার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় উড়োজাহাজ ওঠানামা শুরু হয়েছে। এদিকে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, বুধবার সকাল থেকে মুষলধারে একটানা ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়। মঙ্গলবার দুপুর থেকে কক্সবাজারে ভারি ও মাঝারি আকারের বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
×