ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মাত্র ৯ বছরে দেশের উন্নয়নে সারাবিশ্ব বিস্মিত ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ৫ জুলাই ২০১৮

মাত্র ৯ বছরে দেশের উন্নয়নে সারাবিশ্ব বিস্মিত ॥ প্রধানমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশী-বিদেশী নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে উন্নয়ন, অগ্রগতি আর সমৃদ্ধির পথে হাঁটছে আমাদের আজকের বাংলাদেশ। ৪২ বছর স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় থাকার পর বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ হতে আজকের এই উত্তরণ, যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেয়ার ইতিহাস। আওয়ামী লীগ সরকারের জনকল্যাণমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়নের কারণে বাংলাদেশের এই উন্নয়ন এবং অদম্য অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে। মাত্র ৯ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে সারাবিশ্ব আজ বিস্মিত। সব হারানোর ব্যাথা-বেদনা ও অশ্রুধারা নিয়ে একটা লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি তা হলো বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দ্রুততম সময়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের রূপরেখা বাস্তবায়নে আমাদের সরকারের ঈর্ষনীয় সক্ষমতা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। এটি শুধু আমাদের দাবি নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত সত্য। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রা এখন বিশ্বের রোল মডেল। আশির দশকের তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ কাটিয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন বিস্ময় হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত উন্মোচন হচ্ছে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার। সংসদ নেতা দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ভিক্ষা অনুদান এ শব্দগুলো আমি বদলে ফেলতে চাই। বাংলাদেশ এখন আর সাহায্য চায় না, বিনিয়োগ চায়। এটি দেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিফলন ও স্বীকৃতি। জাতি হিসেবে আমাদের একটি বড় অর্জন। আশা করছি অচিরেই আমরা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হবো। সমৃদ্ধির আগামীর পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় দীর্ঘমেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ‘রূপকল্প ২০৪১’ প্রণয়নের কাজ আমরা শুরু করেছি। ২০৪১ সালে আমরা হবো সুখী, সমৃদ্ধ একটি উন্নত দেশ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা এমন পর্যায়ে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি যে, পদ্মা সেতুর মত বৃহৎ প্রকল্প নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। পদ্মা সেতুসহ আমরা ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। এছাড়া আমার নিজস্ব চিন্তাপ্রসূত ১০টি বিশেষ উদ্যোগও বাস্তবায়ন করছি, যা ‘শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগ’ নামে পরিচিত। এগুলো হলো- একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, আশ্রয়ণ প্রকল্প, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচী, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুত, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী, বিনিয়োগ বিকাশ ও পরিবেশ সুরক্ষা। তিনি বলেন, একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে এই অগ্রযাত্রা থমকে দাঁড়ায়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। আবার দুর্নীতির চক্রে নিপতিত হয় দেশ। হাওয়া ভবনের নামে তারেক জিয়া চালাতে থাকে লুটপাট। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সূচকের প্রায় সবগুলোতেই বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়তে থাকে। ২০০৮ সালে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। আমরা আবার দেশ ও জনগণের কল্যাণে মনোনিবেশ করি। বিগত ১০ বছর ধরে এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। সহস্র্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে আমাদের ঈর্ষণীয় সাফল্য দক্ষিণ এশিয়াসহ উন্নয়নশীল দেশসমূহের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে সমাদৃত হয়েছে। বিস্ময়কর উন্নয়ন দেখতে বিশ্বের অনেকেই আজ বাংলাদেশে আসছেন ॥ জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, আগে বাংলাদেশ মানেই ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে চলা দেশ হিসেবে বুঝত। আমরা এখন আর ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরি না, ভবিষ্যতেও ঘুরবো না। আজকে আমাদের দেশে অনেকেই আসছে। তিনি বলেন, আমরা দেশকে উন্নত করতে চাই। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা উন্নয়ন করে যাচ্ছি। জাতির পিতা দেশকে স্বাধীন করে গেছেন, আমরা দেশকে দারিদ্রমুক্ত করতে চাই। বাংলাদেশ মাত্র ৯ বছরের মধ্যে যে উন্নয়ন করেছে সেই উন্নয়নে বিশ্ব আজ বিস্মিত। এত দ্রুত গতির উন্নয়ন দেখে অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করে ম্যাজিকটা কী? ম্যাজিক-ট্যাজিক কিছু নয়, দেশকে ভালবাসি, মানুষকে ভালোবাসি, মানুষের কল্যাণে কাজ করি। সেটাই কারণ। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সংসদ নেতা বলেন, পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশও শরণার্থী গ্রহণ করে না। আমরা ১১ লাখ শরণার্থীকে শুধু আশ্রয় নয়, তাদের চিকিৎসা, খাদ্যসহ সব রকম ব্যবস্থা করেছি। এত সুশৃঙ্খলভাবে করছি এটাও বিশ্ব নেতাদের বিস্ময়ের কারণ। আমরা কিন্তু মারামারি-কাটাকাটি করছি না, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে যাতে রোহিঙ্গাদের ফেরত দিতে পারি সেটার চেষ্টা করছি। আর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উপনীত হয়েছি। আমরা সমুদ্র থেকে মহাকাশে গিয়েছি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, দেশে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, মাদক কারা সৃষ্টি করে গেছে? কারা দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করে দেশকে পাঁচটিবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছে? এটা করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। বিএনপির সময়ের বাংলাদেশ যেখানে ছিল, এখন আর সেখানে নেই। বাংলাদেশের মানুষ এখন সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে পারছে। আমরা দেশের হারিয়ে যাওয়া সুনাম আবার ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। অশ্রুধারা সংবরণ করে পিতা-মাতা-ভাই সব হারানোর বেদনাকে বুকে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি একটাই লক্ষ্য নিয়ে- বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে। নীতিমালার ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিভুক্ত ॥ ফখরুল ইমামের মূল প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সারাদেশে ১ হাজার ৬২৪টি বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। ফলে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারীর কর্মসংস্থানসহ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানান, অবশিষ্ট নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা-২০১৮ জারি করা হয়েছে। উল্লেখিত নীতিমালার অনুসরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয়ে দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এ লক্ষে অনলাইন দরখাস্ত গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনা এবং বিধিমতে প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের জন্য পৃথক দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার সর্বমোট ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫৪৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, জাতির পিতা ১৯৭৩ সালে ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছিলেন। এরপর দীর্ঘ ২১ বছর একটি প্রাথমিক বিদ্যলয়কে জাতীয়করণ করা হয়নি। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করার পর জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমি ২৬ হাজার ৩৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছি। এতে ১ লাখ ৪ হাজার শিক্ষকের চাকরি সরকারীকরণ করা হয়েছে। এছাড়া দেশের মোট ১৪২টি বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৪০টি বেসরকারী কলেজ সরকারী করা হয়েছে। আরও ১৭৯টি বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ২৯৮টি কলেজ সরকারীকরণের কার্যক্রম চলছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত ॥ সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নুরজাহান বেগমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবিক কারণে আমরা প্রায ১১ লাখ নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছি। আমাদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও তাদের সকল মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য সর্বপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমরা মনে করি যে, রোহিঙ্গা সমস্যার শুরু মিয়ানমারে এবং সমাধানও মিয়ানমারকেই করতে হবে। তাই রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য আমরা মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছি। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। চুক্তি বাস্তবায়নে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থাকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের বাংলাদেশ সফরের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবিক সহায়তা এবং রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত জঘন্যতম অপরাধের দায় নিরুপণ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা নিজ নিজ অবস্থান থেকে আইনের আওতায় কাজ করছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। সরকার প্রধান এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, এ সকল উদ্যোগের পাশাপাশি আমরা দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বাস্তবায়নে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। এ বছর জুন মাসে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তনে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার এবং ইউএনডিপি একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এ সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়ন হলে রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবর্তন করা সম্ভব হবে। রফতানির ৮২ ভাগ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে ॥ সরকারী দলের আনোয়ারুল আবেদীন খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের মোট রফতানি আয়ের ৮২ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত এটি। তিনি বলেন, আগামী ২০২১ সাল নাগাদ এই খাতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৈরি পোশাক রফতানির ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ২০১৫-১৮ মেয়াদের জন্য গৃহীত রফতানি-আমদানি নীতির ধারাবাহিকতায় ২০১৮-২০২১ মেয়াদের জন্য অনুরূপ নীতি প্রণয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
×