ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডিমলায় ঝড়ে লণ্ডভণ্ড ১৯ পরিবার

প্রকাশিত: ০৭:১২, ৪ জুলাই ২০১৮

ডিমলায় ঝড়ে লণ্ডভণ্ড ১৯ পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীতে ঢল নেমেছে। পানি বৃদ্ধি থাকায় তিস্তাপাড়ের মানুষজন যখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ঠিক সে সময় হঠাৎ হানা দিয়েছে ঘূর্ণিঝড়। মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে ডিমলা উপজেলার তিস্তাপাড়ের পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ফুলছড়িপাড়ায় এক মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ে ওই পাড়ার ১৯ পরিবারের ৩৪ বসতঘর উড়ে গেছে। ল-ভ- করে দিয়েছে ওই পাড়াকে। এ সময় ঘরচাপা পড়ে আহত হয় নারীসহ ২২ জন। ফুলছড়িপাড়ার আজিমুদ্দিন (৪৫) জানান, বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বাড়তে বন্যা দেখা দিয়েছে। আমরা নদীর পানি বাড়তে দেখে দুশ্চিন্তায় আছি। তার ওপর বৃষ্টি হচ্ছিল। এ অবস্থায় মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে হঠাৎ করে নদী হতে সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড়। এক মিনিটের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়টি আমাদের ফুলছড়িপাড়ার হানা দিয়ে ল-ভ- করে বসতঘর। ঘরচাপা পড়ে কমপক্ষে ২২ জন আহত হয়েছে। এ সময় তাদের চিৎকারে পার্শ¦বর্তী এলাকার লোকজন ছুটে এসে ঘরের ভেতর আটকা পড়া লোকজনকে উদ্ধার করে। আহতদের মধ্যে গুরুত্ব ৭ জনকে ইউনিয়ন স্থাস্থ্যকেন্দ্র ও ডিমলা হাসপাতালে নেয়া হয়। আহতরা হলো সরবেশ আলী (৫৫), ছমির উদ্দিন (৩০), মোমেনা বেগম (২৮), হাজেরা বেগম (৭০), জহুরা বেগম (৫৫), রাবেয়া বেগম (৫০), আজফর আলী (৫৫)। পূর্ব ছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, উজানের ঢলে তিস্তা নদীতে বন্যা দেখা দেয়ায় আমরা চর ও নিচু এলাকায় বসবাসকৃত মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করছিলাম। এ সময় হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ে ফুলছড়িপাড়ার ১৯টি পরিবারের ৩৪ ঘর দুমড়েমুচড়ে গেছে। কারও ঘরের টিনের চালা উড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রদান করা হয়। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারীভাবে সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ দিকে উজানের ঢলে তিস্তা নদীতে বন্যা দেখা দিয়েছে। নদীর তীরবর্তী চর ও চর গ্রামগুলোর বসতঘরে নদীর পানি প্রবেশ করেছে। মঙ্গলবার ডালিয়ার অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের বাইশপুকুর পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এই পয়েন্টে বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ মিটার। ফলে নদীর পানি ৫২ দশমিক ৫৬ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তা বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে এবং শোঁ শোঁ শব্দ আর গর্জন তিস্তা নদী অববাহিকা কাঁপিয়ে তুলেছে। উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি হু-হু করে বৃদ্ধির কারণে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম। জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জানায় উজানের ঢলের বন্যায় তিস্তার চরের টেপাখাড়িবাড়ি, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, খগাখড়িবাড়ি, পূর্ব ছাতনাই, নাউতারা, ডাউয়াবাড়ি, গোলমুন্ডা, শৌলমারীসহ আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের বসবাসরত পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। পূর্ব ছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, তার ইউনিয়নের ঝাড়সিংশ্বের এলাকায় বসবাসরত ৫ শতাধিক পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন বলেন চরখড়িবাড়ি এলাকার বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করতে শুরু করছে। সেখানকার সহ¯্রাধিক পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ পূর্বাভাস ও সতর্কীকেন্দ্র তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ডালিয়ার তিস্তা ব্যারেজ বাইশপুকুর পয়েন্টে তিস্তার পানি ৫২ দশমিক ৪০ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিন ঘণ্টা পর সকাল ৯টায় ওই পয়েন্টে তিস্তার পানি আরও ৫ সেন্টিমিটার ও দুপুর ১২টায় আরও ১০ সেন্টিমিটার এবং বেলা তিনটায় আরও ১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার চার সেন্টিমিটার নিচে ৫২ দশমিক ৫৬ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়াও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কুড়িগ্রামে বন্যা আতঙ্ক স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, বন্যা আতঙ্কে দিন পার করছে জেলার ৯ উপজেলার ৪ শতাধিক চর ও দ্বীপ চরের প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে তাদের মনে এ আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। জানা গেছে, জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ফুলকুমার, কালিহাতি, জিঞ্জিরাম, শংকোসসহ ১৬টি নদ-নদী প্রবাহিত। আর এসব নদ-নদীর অববাহিকায় ছোটবড় প্রায় ৪ শতাধিক চর ও দ্বীপচর রয়েছে। এসব চরে বাস করছে ৫ লক্ষাধিক মানুষ। ফলে এ জেলার ওপর দিয়ে বেশি সংখ্যক ছোটবড় নদী প্রবাহিত হওয়ায় প্রতি বছর দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে এই জেলায় বন্যার ভয়াবহতা একটু বেশি হয়। এ অবস্থায় চলতি বর্ষা মৌসুমে নদ-নদীর পানি সামান্য বৃদ্ধি পেতেই চরাঞ্চলের মানুষজন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কেননা বন্যার পানি নদ-নদীর বিপদসীমা অতিক্রম করলেই তা প্রবেশ করবে চরাঞ্চলের ঘরবাড়িতে। কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের খেয়ার আলগার চরের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক, এরশাদুল, তৈয়ব আলী, আইয়ুব আলী, আনছার আলী জানান, প্রতি বছর বন্যার সময়টা আমাদের চরাঞ্চলের মানুষের জন্য কষ্টের সময়। কেননা এ সময়টায় বড় বন্যা হলে আমাদের এ চর সম্পূর্ণরূপে বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকে। ঘরবাড়িতে ছেলেমেয়ে, গবাদি পশু নিয়ে থাকার কোন উপায় থাকে না। ফলে আমাদেরকে বউ-বাচ্চা নিয়ে উঁচু জায়গায় তাঁবুর নিচে আশ্রয় নিতে হয়।
×