ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাবি শিক্ষকের নীরব প্রতিবাদে বাধা ॥ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ৪ জুলাই ২০১৮

রাবি শিক্ষকের নীরব প্রতিবাদে বাধা ॥ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী/ রাবি সংবাদদাতা ॥ দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাঃ ফরিদ উদ্দিন খানের ‘নগ্নপদে নীরব প্রতিবাদ’ কর্মসূচীতে অংশ নিতে প্রশাসন বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচী ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ ও প্রক্টর আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় ফেসবুকে ‘নগ্নপায়ে প্রতিবাদের’ স্ট্যাটাস দেন অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাঃ ফরিদ উদ্দিন খান। স্ট্যাটাসটিতে তিনি দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং লাঞ্ছনার প্রতিবাদে নগ্নপদে অফিসে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এদিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহীদ ড. জোহা চত্বরে দাঁড়িয়ে নীরব প্রতিবাদেরও ঘোষণা দেন তিনি। পরে নগরীর অক্ট্রয় মোড়ের বাসা থেকে ড. ফরিদ উদ্দিন খালি পায়ে অফিসে এসে জোহা চত্বরে অবস্থান কর্মসূচীতে আসার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি, বিভাগের সভাপতি ও অন্য শিক্ষকরা ওই শিক্ষকের নিজস্ব চেম্বারে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচীতে অংশ নিতে তাকে নিষেধ করেন। এ সময় সংবাদকর্মীরা ড. ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক কেবিএম মাহবুবুর রহমান বলেন, তাকে যেতে দিতে পারছি না। আমাদের অধিকার আছে তাকে বাধা দেয়ার। তার ঝুঁকির কথা বিবেচনা করেই তাকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। এদিকে বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় জোহা চত্বরে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচীতে যোগ দিতে আসেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব, রায়হানা শামস ইসলাম, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ড. আকতার বানু আলপনা, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক বায়তুল মোকাদ্দেছুর রহমান ও আরবী বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ প্রমুখ। এ সময় চারপাশ থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী এসে জড়ো হতে থাকে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রশাসনের বাধায় শিক্ষকরা চলে গেলেও শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচী চালিয়ে যান। অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে ছাত্রদের বাঁচাতে জোহা স্যারের দেয়া বুকের রক্ত লেগে আছে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা আমরা শিক্ষার্থীরা কোনভাবে মেনে নেব না। আমাদের শিক্ষক ফরিদ খান হামলার প্রতিবাদে নগ্নপায়ে জোহা চত্বরে এসে নীরব প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে প্রক্টর ও বিভাগের শিক্ষকরা আটকে রেখেছেন। আমরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ড. ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমি কর্মসূচীতে যাওয়ার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলাম এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম যাওয়ার জন্য। কিন্তু বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক ও প্রশাসনের অনুরোধে যেতে পারিনি বলে লজ্জাবোধ করছি। তবে সবকিছু বিবেচনা করে বুঝেছি আন্দোলনে না যাওয়াই আমার জন্য এবং আমার শিক্ষার্থীদের জন্য ভাল হবে, তাই যেতে পারলাম না। জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, আমি কাউকে বাধা দেইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরিদ কেন, কাউকেই বাধা দেয়ার সুযোগ নেই। আমি শুধু সকালে তার অফিসে এমনিতেই দেখা করতে গিয়েছি। তখন তাকে বলেছি, তোমার খারাপ লেগেছে তাই স্ট্যাটাস দিয়েছ। কিন্তু এ সমস্ত বিষয়ে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদেরও জানানো উচিত। আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রক্টর বা পুলিশ প্রশাসন আমরা কাউকেই সরিয়ে দেইনি। আমি ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। তারা আমাকে ১২টা পর্যন্ত থাকার কথা বলেছে। তারপরও কেউ যদি বলে আমি তাদের সরিয়ে দিয়েছি, তাহলে এটা মিথ্যা ও বানোয়াট।
×