ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকিপূর্ণ আত্রাই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ৪ জুলাই ২০১৮

ঝুঁকিপূর্ণ আত্রাই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ মহাদেবপুরে ও মান্দায় আত্রাই নদীর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ দীর্ঘ সময়ে সংস্কার না হওয়ায় চলতি বর্ষা মৌসুমে বন্যা শঙ্কায় রয়েছে ওই দুই উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ। বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ ও ইঁদুরের গর্তে বাঁধটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই উজান থেকে ধেয়ে আসছে পানির তোড়। শান্ত আত্রাই নদী হয়ে উঠছে অশান্ত। ঢেউয়ের পর ঢেউ আঘাত হানছে পাড়ে। ফলে মহাদেবপুর উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের নূরপুর এলাকার আত্রাই নদীর বাঁধসহ কয়েকটি পয়েন্টে মাটি ধসে পড়ছে নদীগর্ভে। বন্যার হাত থেকে সহায় সম্বল রক্ষার বাঁধ এখন যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এতে উপজেলার মানুষ আতঙ্কে দিনাতিপাত করলেও রহস্যজনক কারণে কর্তৃপক্ষ নীরব। অপরদিকে মান্দা উপজেলার বুড়িদহ সুজনসখীর ঘাট গত বন্যার পর বালু দিয়ে সংস্কার করায় সামান্য বৃষ্টিতেই তাতে ধস নেমেছে। এবারের বৃষ্টিতে নদীর পানি বৃদ্ধি শুরু হওয়ায় নদী তীরবর্তী মানুষ বন্যা শঙ্কায় ভুগছে। এদিকে গত বছরের বন্যায় জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হলেও মহাদেবপুরে বন্যার পানি ঢুকতে পারেনি। তবে উপজেলার কলোনি, বুড়া শিবতলা, কাউয়াতলী, পাঁঠাকাটা হাট, শ্রীনগর, বেহুলাতলী ঘাট, লক্ষণপুর, গোপিনাথপুর ও শিবগঞ্জ এলাকায় উজান থেকে নেমে আসা আত্রাই নদীর ঢলের পানিতে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। দিন রাত পরিশ্রম করে বাঁশের খুঁটি ও বালুর বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকিয়েছিল স্থানীয় মানুষ। ওই স্থানগুলো ছিল চরম ঝুঁকিপূর্ণ। সে সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড আশ্বাস দিয়েছিল নদীর পানি কমে গেলে বাঁধটি সংস্কার করা হবে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাঁধ সংস্কারের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। আত্রাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙ্গলে দেশের উত্তর জনপদের খাদ্যভা-ার হিসেবে খ্যাত মান্দা ও মহাদেবপুরের হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যাবে। প্রাণহানি, গবাদিপশু, শস্য ও বাড়িঘর বিলীন হতে পারে। এমনকি প্রধান সড়কও পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। ফলে জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা ও বিভাগীয় শহর রাজশাহীর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়বে। কল-কারখানা, চাল উৎপাদনকারী শত শত চালকল বন্ধ হয়ে যাবে। বেকার হয়ে পড়বে শত শত শ্রমিক। পথে বসবে কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। এলাকায় নেমে আসবে চরম বিপর্যয়। বাঁধ সংলগ্ন নূরপুর এলাকার বাসিন্দা সুজিৎ চন্দ্র সরকার, নিখিল চন্দ্র, রুহুলসহ আরও অনেকেই জানান, নদীর গভীরতা আগের মতো নেই। তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় এটি শুকিয়ে যায়। গভীরতা না থাকায় অতিরিক্ত বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে দুই কূল উপচে নদীর পানি সহজেই বাঁধে এসে আঘাত হানে। নদীর পানি বাড়তে শুরু করলে এলাকার লোকজন রাত জেগে বাঁধ পাহারা দেয়ার কাজ করেন। প্রত্যেক বর্ষা মৌসুমেই তাদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। বাঁধসংলগ্ন শিবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আমিনুর রহমান, ধীরেন, গোবিন্দ ও হিরা জানান, আমরা চরম আতঙ্কে দিন যাপন করছি। গতবার রাত দিন পরিশ্রম করে কোন মতে বন্যা ঠেকানো গেলেও শুধু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এবার বোধহয় আর ঠেকানো যাবেনা। এনায়েতপুর ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী হাসন মিঞা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিকট বার বার আত্রাই নদীর বাঁধ সংস্কারের জন্য যোগাযোগ করলে ওনারা কথাও দিয়েছেন সংস্কারের। কিন্তু বাস্তবে এখন পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী শুধাংশু কুমার সরকার জানান, আত্রাই নদীর বাঁধের প্রায় ৯ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু আমাদের দাফতরিক জটিলতার জন্য এই বর্ষার পূর্বে বাঁধটি সংস্কার করা সম্ভব হবে না। তবে কোন জায়গা যদি ভেঙ্গেই যায়, তা ঠেকানোর জন্য চেষ্টা করা হবে।
×