ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদায়ী অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৪ জুলাই ২০১৮

বিদায়ী অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বেড়েই চলেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহ। সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীরা এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এদিকে প্রবাসী আয় বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বেড়েছে। সোমবার দিন শেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩১৭ কোটি ডলার। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদায়ী অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ১৩৮ কোটি ২০ লাখ ডলার এসেছে, যা গত বছরের জুন মাসের চেয়ে প্রায় ১৪ শতাংশ বেশি। এর আগে মে মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৪৮ কোটি ২৮ লাখ ডলারেরও বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। এপ্রিল মাসে প্রবাসীরা ১৩২ কোটি ৭১ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখছে প্রবাসীদের পাঠানো এই বৈদেশিক মুদ্রা। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আগের বছরের (২০১৫-১৬) চেয়ে ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম রেমিটেন্স আসে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা মাত্র ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠান। রেমিটেন্স প্রবাহের মাস হিসেবে গত ছয় বছরের মধ্যে এটিই ছিল সর্বনিম্ন। শুধু সেপ্টেম্বরই নয়, বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি এই রেমিটেন্স কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে রেমিটেন্স বাড়াতে নানা উদ্যোগও নেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী উদ্যোগের কারণে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাস থেকে রেমিটেন্স প্রবাহ ইতিবাচক ধারায় ফেরে। রেমিটেন্স বাড়ার পেছনে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধির ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন বেসরকারী গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ডলারের দাম বাড়ার কারণে একদিকে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন, অন্যদিকে পণ্য আমদানি বাড়ায় ডলারের সঙ্কট কাটাতে ব্যাংকগুলো নিজেদের প্রয়োজনে রেমিটেন্স আনতে বেশি উৎসাহী হচ্ছে। দেশের রেমিটেন্সের অর্ধেকের বেশি আসে মধ্যপ্রাচ্যের ছয় দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত ও বাহরাইন থেকে। রেমিটেন্স বাড়ার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীরা এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার সমপরিমাণ মূল্যের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন। যা এর আগের ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল এক হাজার ৪৯২ কোটি ৬২ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরে রেমিটেন্স কমেছে ২১৬ কোটি ১৭ কোটি ডলার বা ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসীরা ১ ডলার পাঠালে বাংলাদেশে থাকা তাঁদের আত্মীয়রা এখন ব্যাংক থেকে পাচ্ছেন প্রায় ৮৪ টাকা, আগে যা ছিল ৮০ টাকার নিচে। এ কারণেই প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে আয় পাঠাচ্ছেন। এছাড়া দেশে ডলার-সঙ্কটের কারণে এক্সচেঞ্জ হাউসের কর্মকর্তারাও এখন আগের চেয়ে বেশি ডলার সংগ্রহ করছেন। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের প্রবাসী আয় বিতরণের অভিযোগে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর বিকাশের ২ হাজার ৮৮৭টি এজেন্টের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ১ হাজার ৮৬৩টি এজেন্ট হিসাব বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। এরপরই প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক প্রবণতা শুরু হয়েছে।
×